সাহিত্য

রঙে ভরা বৈশাখ আমার আইল রে!

রঙে ভরা বৈশাখ আমার আইল রে!
  রঙে ভরা বৈশাখ আমার আইল রে! এখনো বেতন পাইনি। মোটামুটি এলাকার বিজনেস টাইকুন হিসেবে পরিচিত এমন একজনের মেয়েকে পড়াই। তার ২ টা হোটেল একটা মিষ্টির দোকান আছে। আছে একটা ষ্টীলের শিটের দোকান ও। সবগুলোতেই মহাসমারোহে হাল খাতা উৎসব হবে। যাদের থেকে যা যা টাকা পয়সা তোলা বাকি সব আদায় করা হবে। কিন্তু তার কাছ থেকে যে তার মেয়ের শিক্ষকরা গত মাসের বেতন এখনো পান, তা হয়তো ভুলেই গেছেন। কিংবা মনে রাখার দরকার নেই। তবে, পাওয়ার হিসেব টা কিন্তু পাকাপাকি। যাই হোক, কাল পড়ানো শেষে বের হচ্ছিলাম। তখন আঙ্কেল আর আনটি মিলে ফ্রিজে ইলিশ মাছ রাখছেন। যায়গা হচ্ছেনা। আমাকে দেখে বললেন- ৬ হাজার টাকার মাছ কিনেছি বুঝলে? আমি একটা শুকনা হাসি দিলাম। মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো। এতো টুকু লজ্জা ও এদের নেই? ২। বুয়ার মনে খুব দুঃখ। আরেক যে বাসায় কাজ করে সে বাসায় যেদিন পোলাও কোর্মা রাঁধে সেদিনও পান্তা ভাত, আর পুরান তরকারী দেয়া হয় খেতে, যেদিন নরমাল রান্না হয় সেদিন ও একই অবস্থা। একদিন পান্তা ভাত খেতে খেতে বুয়া তার মালকিনকে বলছিল- পহেলা বৈশাখের দিন তো আপনারা পান্তা খেতে পারেন। বাকি দিন খেলে দোষ কি? প্রতিদিন আমারই পান্তা খাইতে হবে কেন? আমারে কি মাগ্না খাওয়ান? নাকি কাজের বিনিময়ে খাওয়ান? মালিকন হতভম্ভ হয়ে বলেছিল- আমাদের বাসায় ব্রেক ফাস্ট রুটি জেলি ডিম ছাড়া হয়না! পান্তা তো কেউ খেতেই পারে না! তাই তোমাকেই দেই। ঘটনা শুনে বুঝলাম! পান্তা হোল অকেশনাল খাওয়া, যেমন অকেশনাল আমাদের বাঙালি হয়ে উঠা ৩। আরেক বাসায় যেয়ে দেখলাম, ঘরের মালিক পায়ের উপর পা তুলে বসে আছেন, আর না হলেও এক কেজি শুঁটকি আর শুকনো মরিচ তার বুয়া টা বাটছে। একটু পর পর হাতের জ্বলুনিতে পাশের পাত্রে রাখা পানিতে হাত ডুবায়, উহ আহ করে, চোখের পানি ছেড়ে বেচারি ভর্তা বাটছে। ঘরের মালিক সামনে থেকে সরে গেলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম - কি খালা! আপনার তো হাত জ্বলবে! এভাবে কেন ভর্তা বাটছেন? উনার শখ হইছে, উনি বাটুক! দেখুক কেমন মজা! - হেরা খালি খাইতে জানে! খাওয়া বানানোর কষ্ট তো আর জানেনা! আর আমারে ১০০ টাকা দিবো কইছে। তাই আর মানা করিনাই বুঝলাম, বৈশাখ হোল কিছু মানুষের কষ্ট আর কিছু মানুষের বুক ভরা উল্লাস। এভাবেই সব সমাজে গরীবরা শোষিত হয় বড়লোকের কাছে। ৪। - আপু জানো! আজকে ধানমণ্ডির কি অবস্থা! ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্র আমার। বৈশাখ পালন করে এসে তার অভিজ্ঞতা জানাচ্ছে। -কি অবস্থা? - আরে জানো না। পোলাপান রাস্তা ঘাটে গাঞ্জা খাচ্ছে, অপেনলি! কেউ কিছু বলছেনা! আমার বন্ধুরা ও খাইছে। -তুমি খাও নি তো! - আরে না আপু! তবে , ওখানে যে কোন উৎসবেই গাঞ্জা মাস্ট! ১৪ বছরের ছাত্র। কিন্তু, বুঝলাম অনেক বড় হয়ে গেছে। কারন, তাদের ইংলিশ বাংলিশ কালচার তাকে শিখাচ্ছে, এটা গাঞ্জা খাওয়ার মহা উৎসব। ৫। একদিন লোকাল বাসে করে কোথাও যাচ্ছিলাম। পাশের সিটে এক চাচা, আর এক স্মার্ট ছেলে বসেছিল। চাচা ঐ ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো - বাবা আজকে বাংলা মাসের কয় তারিখ, একটু হিসাব করে কও তো! - চাচা আমি তো জানিনা! - আচ্ছা বাংলা কি মাস যেন এটা! - সেটা ও জানিনা - ও আচ্ছা! বুঝলাম! আমরা পহেলা বৈশাখ ফাল্গুন কিছুতেই আনন্দ করতে ছাড়ি না। উৎসবের বেনিফিট কড়ায় গণ্ডায় আদায় করে নেই। কিন্তু বাংলা মাস কেন? যেটা আসলে আমাদের প্রতিদিনের দিনাতিপাতে কোন কাজে আসে না। আমরা বারো মাস নাম জানিনা, দিন ভালো কথা কোন মাস তাও জানিনা! দিন তারিখ যদি নাই বা জানি তাহলে এই বর্ষের দরকারটা কি? বিদায়াত নাজায়েজ এসব পরিভাষায় যদি না ও যাই, তারপরও আমরা বাঙালিরা চরম সুবিধাবাদী। আমরা শুধু মজাটা নিতে জানি, মজা করার শর্ত মানতে আমরা কোন মতেই প্রস্তুত নই। ঐ যে গান আছে না- আইল! আবার রঙ্গে ভরা বৈশাখ আমার আইল রে! বৈশাখের রঙটাই আমরা দেখি! আর এর মাধ্যমে ব্যবসায় লালে লাল হওয়া, আর গরীবকে শোষণ ই আমাদের উদ্দেশ্য। গরীবের ১২ মাস পান্তা খাওয়ার স্বাদ নাহয় নাই জানলাম!

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ