ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার হয়ে খুব দ্রুত ডিভোর্স দিয়ে অথবা শারীরিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে মামলা করে সাহসী হয়ে যেতে পারে কয়টা মেয়ে?
কিংবা অনেক আয় করে আত্নবিশ্বাসী হতে পারে কয়টা মেয়ে?
তাহলে যে মেয়েটা পারেনি, সে কী তার এই অসহায় জীবন ডিজার্ভ করে...?
জীবন ধারণের ন্যুনতম সুযোগটা পেতে অথবা হকের প্রয়োজনটা নিতে একজন নারীকে কেন প্রতিবাদী নারী হতে হবে?
বেশিরভাগ মেয়েরাই তো গতানুগতিক ও সাধারণ মানসিকতার পরিবারে জন্ম নেন। বেড়েও ওঠেন খুব সাধারণ চিন্তার মানুষ হিসেবেই। পড়াশোনাও অনেকের কম।
বিয়ের পর থেকেই শুরু হয়ে যায় স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির মানুষের অমানবিক কথা শোনা! খুব কষ্ট পেলেও তার কিছুই করার থাকে না। তাকে সয়ে যেতে হয় অথবা মনে করে নিতে হয় এটাই তার ভাগ্য!
একটা সাবান, একটা শ্যাম্পু কিংবা দুইটা জামার জন্য তাকে চেয়ে থাকতে হয় বাবার বাড়ির দিকে....
অনেক মেয়েই আছে, যারা সারাদিন নিরবিচ্ছিন্ন কাজের পর তাদের অল্প কিছু খাবার জোটে। অথচ আর্থিক দাঁড়িপাল্লায় তার কাজকে মাপা হলে তার মাসে অন্তত ১৫/২০ হাজার টাকা পাওয়া উচিত বা আরো বেশি। অথচ তাকে জরুরি চিকিৎসার খরচ পেতেও হিমশিম খেতে হয়!
একটু ব্যতিক্রম হলেই শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া, না খাইয়ে রাখা, দীর্ঘদিন বাবার বাড়িতে না যেতে দেয়া, মারধর করা... এগুলো অহরহ ঘটছেই!
নির্যাতনের মাত্রা সহ্য করতে না পেরে অনেক নারীই বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার পথ!
এমনভাবে জীবন কাটাতে কাটাতে একদিন মেয়েটা হাসতে ভুলে যায়। দিনের পর দিন অপমান সইতে সইতে সে ভুলে যায় 'হিউম্যান ডিগনিটি কি?'
আবার যে মেয়েটাকে আয় করে নিজের খরচ চালাতে হয়, সে মেয়েটারই বা কী অবস্থা! তার যে কোনো প্রয়োজনে বা আর্থিক নিরাপত্তার দায়িত্বটা কি তার পার্টনারের উপর বর্তায় না? কেন মেয়েটাকে এতোটা চ্যালেঞ্জ নিতে হবে?
সব মেয়েই সাহসী হবে বা প্রতিবাদী হবে এটা তো কখনোই সম্ভব না!
আমাদের চারপাশে বিশাল সংখ্যক নারী ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার।
নারীর প্রতি অবিচার, মারপিট, মানসিক টর্চার, প্রতিটি কাজে দোষ ধরা ইত্যাদিকে পরিবারের সদস্যরা ছোট করেই দেখে কিংবা কেউ কেউ কেউ দেখেই না! আর আমাদের অন্ধ সমাজ তো একে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই ধরে নেয়। অথচ এটি সামাজিক অবক্ষয়ের একটি ভয়ঙ্কর দিক!
সুশিক্ষা ও সচেতনতার ঘাটতি এসব অপরাধকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। সমাজ ও পরিবার নৈতিক অবস্থানে দৃঢ় থাকলে এমন অপরাধ অনেকাংশেই কমে যেতো।
পরিবারের প্রতিটি সদস্যের নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার মনোভাব গড়ে উঠলেই নারী শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকতে পারবে। ভালো থাকতে পারবে পরিবারের প্রতিটি সদস্য।
নারী একজন মমতাময়ী স্ত্রী , একজন স্নেহময়ী মা, একজন সংসারের রক্ষক। নারী ছাড়া সমাজ চলবে না, সংসার চলবে না। তাদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পরিবার ও সমাজের কর্তব্য।
নারী-পুরুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক একটি পরিবারকে মায়ার বন্ধনে বেঁধে রাখতে পারে...
পরিবর্তন শুরু করতে হবে ঘর থেকেই...
নারীর কাজের স্বীকৃতি আজ খুব প্রয়োজন... খুব প্রয়োজন নারীর সুযোগ সুবিধার প্রতি দৃষ্টিদান...
আরো প্রয়োজন নারী পুরুষ উভয়কেই উভয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া....
নারী-পুরুষের পারস্পরিক সহযোগিতায় গড়ে উঠুক একটি মানবিক সুন্দর পৃথিবী!
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)