ইন্টারন্যাশনাল উইমেন

সেক্যুলার তুরস্কে নারী ও নারী ভাবনা (পর্ব -৩)

সেক্যুলার তুরস্কে নারী ও নারী ভাবনা  (পর্ব -৩)

 

 

পুরুষের একাধিক বিয়ে নিয়ে টার্কিশ আইন এক রকম কড়াকড়িই বলা যায়। এ ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের আইনজীবী আয়েশা দোয়ান গুজেলের সাথে একদিন ঘণ্টাখানেক আলাপ হয়। টার্কিশ আইনে পুরুষের একাধিক বিয়ে নিষিদ্ধ। আইনটি অটোম্যান এম্পায়ার ভেঙ্গে তুরস্ক প্রজাতন্ত্র হওয়ার সময় থেকে চালু হয়ে এখন পর্যন্ত সদর্পে টিকে আছে। এই আইনের পক্ষে বিপক্ষে যেমন মতামত আছে, এর ভালো মন্দ নিয়েও বিচার এবং বিতর্কের অবকাশ আছে।

তাই বলে কী সমাজে দ্বিতীয় বিয়ে ঘটছে না? এর জবাবে আয়েশা বলেন- একবারেই যে হচ্ছেনা বিষয়টা তা নয়। কেউ কেউ লুকিয়ে আরেকটা বিয়ে করছে, কিন্তু বিষয়টা নিষিদ্ধ হওয়াতে কিছুটা সামাজিক চাপ এবং সরকারের শাস্তির ভয়ে বিষয়টা তুলনামূলক কম। একাধিক স্ত্রী রাখার কালচার থেকে বের হয়ে আসার জন্য বিষয়টা পারিবারিক সামাজিক এমন কী রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে নিরুৎসাহিত করার জন্যই এই ধরণের আইন। তবে আইনটি ইসলামের কিছুটা পরিপন্থী নয় কী? জিজ্ঞেস করার পর উত্তরে তিনি বলেছিলেন- এই আইন ইউরোপের থেকে ধার করে আনা আইন। আমাদের সমাজ এই বিষয়ে মোটামুটি স্থিতিশীল হওয়ায় কোন পক্ষ থেকেই এই আইন তুলে নেওয়ার ব্যাপারে তেমন পাবলিক ডিমান্ড না থাকায় এটা নিয়ে খুব মাথা কেউ ঘামায়না আসলে।

উপোরন্ত এই নারী আইনজীবীকে এই আইনের পক্ষ নিয়ে বলতে শুনলাম যে এই আইনটা বরং ভালোই। আমাদের পুরুষরা চাইলেই স্বেচ্ছাচারী হতে পারছেনা।

এটা সত্য, এই সমাজের পুরুষরা চাইলেই নারীর সাথে যা খুশি করতে পারছেনা। বিয়ের সময় উচ্চ মোহরানা দেওয়া থেকে শুরু করে ডিভোর্সের সময় সম্পদের সমান সমান ভাগের ভয়ে এখন তরুন প্রজন্ম কিছুটা বিবাহবিমুখ হয়ে গেছে। এই ব্যাপারে ২৫ বছর বয়সী আইনের ছাত্রী হালিমা এসরা বলেন- বিয়ে করাটা যতো না কঠিন, ব্যাপারটা কোন কারনে ডিভোর্স নাগাদ গড়ালে তারচেয়েও বেশি কঠিন হয়ে যায়।

ডিভোর্সের সময় সম্পদের ভাগাভাগিতেই শেষ হয়ে যায়না। ডিভোর্স যদি স্বামীর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে বা উভয় পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে হয়ে থাকে তাহলে ডিভোর্সের পর উক্ত ডিভোর্স প্রাপ্তার অনত্র বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত আগের স্বামীকে তার এবং তার সন্তানদের সমস্ত ভরণ পোষণের খরচ চালাতে হয়। এটাকে বলা হয়- নাফাকা।

এরযুরুমের মেয়ে বান্ধবী মেলতেমের বাবা মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয় ৯ বছর হতে চলল। মেলতেম জানালো , তার মা এখনো বিয়ে করেনি। তার বাবা তার মাকে প্রতি মাসে নাফাকা দেয়। তার মা অনেক বেশি ধার্মিক মহিলা, তার বাবা তার মায়ের পর্দা এবং ধার্মিক কাজে বাঁধা সৃষ্টি করায় ১৯ বছরের দাম্পত্য সম্পর্ক বিচ্ছেদে গড়ায়। মেলতেমের মা কোন কাজ করেনা বাহিরে। প্রাক্তন স্বামী প্রদত্ত নাফাকা দিয়েই জীবন ধারণ করেন, ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তুলেছেন। নাফাকার উপর নির্ভর করে জীবন কেমন কাটানো যায় জিজ্ঞেস করলে মেলতেম বলে- টেনেটুনে চলে যায়, তবে সাধ অনেকই বাকি থেকে যায়। সন্তানরা আয় করার উপযুক্ত হওয়া পর্যন্ত একটু ধৈর্য ধরতে হয়।

মধ্য প্রাচ্যের আরব দেশগুলোতে শুনেছি টাকা হলেই পুরুষ একাধিক স্ত্রী গ্রহণের জন্য অস্থির হয়ে যায়। আর মহিলারা পুরুষকে তা থেকে নিবৃত্ত রাখতে নতুন কেনা ফার্নিচার জামা কাপড় বাইরে ফেলে দিয়ে স্বামীর টাকা খরচ করিয়ে নেয়। মিশরীয় রুম মেট বলছিল তার সৌদি আরবের অভিজ্ঞতা, সে জীবনের ৯ বছর পরিবারের সাথে সেখানেই কাটিয়েছে। সে বলল- আরবরা প্রতিদিন স্টারবাকসে যেয়ে কফি খেলে সেটাকে অপচয় মনে করেনা, কিন্তু বাসার চাকরকে একটা ভাঙ্গা চেয়ার সদকা দিতে তারা রাজি নয়।

সমস্ত ঘটনার সারাংশে এতোটুকু আমার মনে হয়েছে, সমগ্র তুরুশক জুড়ে যে দান সদকার একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তার পেছনে পারিবারিক এই ভারসাম্য বিরাট অবদান রেখেছে। সাধারণত পুরুষরা এক বিয়েতেই সন্তুষ্ট আছে, এবং অতিরিক্ত টাকা দান সদকা করতে পারছে,  ভাকফি জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে  সহ নিজেরাও সমাজকল্যাণমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন।

(চলবে)  


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)