সাহিত্য

ঝড়ের সন্ধ্যা

ঝড়ের সন্ধ্যা
কদিন ধরে খুব ঝামেলা যাচ্ছে রুপার, আসলে ওদের বাসার সবার।নতুন বাড়ী করেছেন রুপার বাবা। মালপত্র টানাটানি আর জিনিষ পত্র একবার বাঁধা আবার খোলা এর ভেতর ৩-৪ দিন উধাও হয়ে গেল। মেজাজ খুব খারাপ আজকে।মাত্র স্কুল শেষ করে কলেজে ভরতি হয়েছে।এখনই যা পড়ার চাপ তাতে দুই বছরে আর দম ফেলতে পারবে না রুপা। এসাইনমেন্ট জমে গেছে,তার ওপর এত কাজ। কোনটা আগে কোনটা পরে এটা ভাবলেই চোখে তারা দেখছে। এর ওপর যোগ হয়েছে গরম। ভ্যাপসা গরমে প্রান আইঠাই করছে আজ ১০-১২ দিন। গরম সবে শুরু, এখনই এই হাল!!"আমি আজকে আর কাজ করবোনা",ঝাড়ু ফেলে গলা তোলে রুপা। বাবা পাশের রুম থেকে হাসতে হাসতে বলেন,"রেখে দে।তুই বরং রেস্ট নিয়ে পড়তে বয়।পড়ার ক্ষতি করা যাবেনা"। "আব্বু কিচ্ছু ভাল্লাগেনা।ধুর এত গরম"।রুপার গলায় ক্ষোভ। গতকাল রাত জেগে অনেক কষ্টে একটা এসাইনমেন্ট শেষ করে আজকে দিল,আরো একটা বাকী। বিছানা সেট করা হয়নি,মেঝেতে ম্যাট্রেস পাতা।কলেজ থেকে এসে ব্যাগ টা রেখে শুয়ে পড়লো ও। ওহ, ক্লান্তিতে চোখ দুইটা লেগে যাচ্ছে। টেনে ধরছে ঘুম। চোখ মেলে প্রথমে বেলা আন্দাজ করার চেষ্টা করে রুপা,"কয়টা বাজে? এত অন্ধকার কেন?"কলেজ ড্রেস দেখে বুঝলো কি হয়েছে। আজকে বাসায় শব্দ কম।কাপড় বদলে হাত-মুখ ধুয়ে বাথরুম থেকে বের হতেই মাটির সোঁদা গন্ধ এসে নাকে লাগলো। "তবে কি..."? তাড়াতাড়ী তোয়ালে ছুড়ে ফেলে মা-বাবার রুমের বারান্দায় এলো। বাবা -বোন-ভাই সবাই আওয়াজ তুলে ডাকছে একজন আরেকজন কে। "কি হয়েছে রে"?বড়ভাইকে জিজ্ঞেস করে রুপা।"আরে আমাদের বাসায় ঊঠার পরে ফারস্ট ঝড় আসতেছে আর আমাদের তো সবই ঠিক আছে কিন্তু ছাদ তো টিনের , তাই পানি আসে নাকি দেখতে হবে"। "হ্যাঁ?পানি আসবে মানে কি? বাসায় পানি আসবে কিভাবে?" বলতে না বলতেই তুমুল ঝড় শুরু আর ভাগ্য ভালো টিনের চাল ভাল আছে পানি আসেনি, কিন্তু বারান্দায় দাঁড়ানো রুপার গায়ে ঝড়ের প্রথম ঝাপটা টাই এমন জোরে লাগলো ! ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে রুপা চিৎকার দিতেই বাসার সবাই একসাথে হেসে উঠলো। মা কোনমতে নিজের ওড়না টা দিয়ে মুখ মুছে বললো,"ঝাল মুড়ী রেডী করেছি,আয়"। টেবিলে বসে রুপার মনে হলো ,"আহ,ঝড়ের সন্ধ্যা গুলো এজন্যেই এত প্রিয়"!

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)