সাহিত্য

নতুন স্বত্বা

নতুন স্বত্বা
কে যেন তারস্বরে চেঁচাচ্ছে,এই আওয়াজেই জেগে উঠলো আসমা।'আমার সোহাগ,আমার বাবু।বাবুকে দাও,ওহ কোলে দাও'। 'আহ,আস্তে'।বিড়বিড় করে আসমা।অভ্যাস বশে পাশ ফিরতে যায়।তীব্র ব্যাথায় শরীর টায় কাঁপুনি শুরু হয়।ঔষুধ ঔষুধ গন্ধে মনে পড়ে এটা হাসপাতাল।আজ তার অপারেশন ছিল।একটা সুন্দর বাবু হয়েছে,ডাক্তার দেখিয়েছিল।বাবুটা কই?পাশের বেডের মহিলা আবার চেচিয়ে ওঠে।আসমার কাঁপুনি বেড়ে যায়।নার্স এসে এটা সেটা নেড়ে চেড়ে দেখেন। 'জ্ঞান ফিরেছে?বাহ।ব্যাথা হচ্ছে খুব?একটু শক্ত থাকুন,পানি খেতে পারবেন না এখন'একনাগাড়ে বলে যায় নার্স। 'আমার পা দুটো কই?নাড়াতে পারছিনা কেন'?আসমার হড়বড়ে কথায় নার্স তাকে চেপে ধরে রাখে।'ঠিক হয়ে যাবে।এনেস্থেসিয়া চলে যাচ্ছে,সেন্স আসছে আস্তে আস্তে,একটু কাঁপুনি হবেই'। আসমা অসহায় চোখে একটা আপন কাউকে খুঁজতে থাকে।ওর অনেক ব্যাথা হচ্ছে।কেউ একজন যদি ওর হাতটা ধরে বসে থাকতো?ওকে এত একা রেখে সবাই কোথায় আছে?এভাবে থেকে আসমার অভ্যেস নেই।গলা শুকিয়ে আসছে।ওর ভেতরটা শুকনো খট খটে হয়ে আছে। পালা করে ডাক্তার আসে,নার্স আসে।আসমা নেতিয়ে পড়ে থাকে বেডে।পোস্ট অপারেটিভ।বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে আসমা পৃথিবী থেকে। অনেক অনেক সময়যায়।কত সময় আসমা জানেনা।খসখস করে পর্দার মৃদু শব্দ হয়।আয়া এসেছে।একটা পুটুলির মত পেঁচিয়ে একটা বাবু নিয়ে এসেছে। 'কি সুন্দর বাবুডা।আমরারে মিষ্টি খাওয়ান লাগবো' আয়ার কথা শুনে আসমা আয়ার হাতের দিকে তাকায়।অনেক কষ্টে হাত বাড়ায়।এই ছোট তুলোর বলটা একটা বাচ্চা?ওর বাচ্চা?কি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে বাবুটা। পাশের বেডের মহিলাও তার বাবুকে পেয়ে আওয়াজ বন্ধ করে শুয়ে আছেন।কি অদ্ভুত,কি অদ্ভুত।কত শান্তি এখন এখানটায়। আসমা বাবুটার চোখ দেখে,নখ দেখে,ঘুম দেখে।আশ্চর্য্য!!কি ছোট্ট একটা মানুষ।ওর নিজের জন্য।কেমন যেন ভরে যাচ্ছে ওর চারপাশের খালি যায়গাটা এক অনিন্দ্য সুন্দর আলোয়। 'আত্মীয় রা দেখা করতে পারবে এখন।কাকে ডাকতে হবে'?নার্স এর উৎসুক জিজ্ঞাসা। 'কাউকে না',স্মিত হেসে আসমা কেবল এটুকুই বলতে পারে।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)