সাহিত্য

একজন কুহু

একজন কুহু
কুহু বাজার থেকে ফেরার পথেই টের পায় শরীরে কেমন জানি ব্যাথা হচ্ছে,মাথাটা ভার হয়ে আসছে। চট করে একবার ড্রাইভিং সিটে বসা রুশোর দিকে তাকায় কুহু।বলবে একবার ওকে নিজের যে খারাপ লাগছে? বুঝে পায়না কুহু।" থাক আর কিছুক্ষণ দেখি", একটা শ্বাস ছেড়ে ভাবে কুহু। "হয়ত সারাদিনের কাজের ধকলে হচ্ছে এমন"। বাসায় ফিরে বাজার সামলে বাচ্চার খাবার রেডী করতে করতে খারাপ লাগা বেড়ে গেলো। নাহ, পা দুটো যেন গলে যাচ্ছে, আর দাঁড়ানো যাচ্ছেনা।"ওহ,এত খারাপ লাগছে কেন"? এরপর কখন বিছানায় শুয়ে গেছে নিজেও জানেনা কুহু। সারা শরীরে ব্যাথা,মাথার ভেতর হাজার ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর লাল টকটকে দুটো চোখ যখন মেলে তাকালো,তখন রুশো বিরক্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছে বিছানার পাশে। "এগুলা কি কুহু?বাচ্চা টাকে খাওয়াবে না? কাজের মেয়ে খাওয়াবে?এত ঢং কেন কর?" "আমি...আসলে আমার ...আচ্ছা একটু খাওয়াবে বাচ্চাটাকে? আমার মনে হয় জ্বর আসছে। আবার যদি বাচ্চা টাকে ধরে?" রুশো-"আগে বললে কি হত? আমার কাজ নেই? তুমিও একটু খারাপ লাগলেই এত কাতর হও কেন"? কুহু কিছু বলতে পারেনা।রুশো বাচ্চা টাকে কোন মতে একটু খাইয়ে দিয়েই বলে ,"আমি খেয়ে নিলাম।অফিস আছে সকালে।" কুহু-"রুশো একটু জ্বর টা মেপে দেখবে?আমি একদম শক্তি পাচ্ছি না"। রুশো-"নিজের জ্বর নিজে দেখো, এত আদিখ্যেতা ভাল লাগে না,আমি একটু বাইরে থেকে হেটে আসি।" কুহু আর কথা বাড়ায় না। একদিনের পক্ষে অনেক কিছু চেয়ে ফেলেছে সে। জ্বর বোধ হয় নিজেই চলে যাবে।রুশো যখন বাইরে থেকে এলো তখন কাজের মেয়ে দাড়িয়ে আছে বেডরুমের দরজায়।"কিরে এমনে দাঁড়িয়ে আছিস ক্যান"? "আংকেল, আন্টিরে ডাকতেসি আধা ঘন্টা ধরে ,রাও করেনা।কি করতাম"? রুশো সাথে সাথে কুহুর গায়ে হাত দিয়ে দেখে জ্বর স্স্বাভাবিকের মাত্রা ছাড়িয়েছে। সাড়া দেবার অবস্থায় নেই কুহু। একটা রুমাল ভিজিয়ে কাজের মেয়েটাকে কয়েকবার হাত পা মুছতে দিয়ে রুশো ভাবলো,"আজ পাশের রুমে শুতে হবে বাচ্চাকে নিয়ে"। দুইদিন পর ডাক্তার দেখাতে গেলে ডাক্তার বললেন, আর দুটা দিন পর টেস্ট কর,এছাড়া সমস্যা নেই। টেস্ট এর এক সপ্তাহ পর রিপোর্ট এলো কুহুর ডেঙ্গু হয়েছে,সেকেন্ড স্টেজ। রিপোর্ট এনে ডাক্তার কে দেখাতে গিয়েছিলো রুশো। তার বন্ধু ডাক্তারটি বললো ,"ভাবীর কপাল ভাল, হেমোরেজিক হয়নি"। রুশো বাসায় এসে কুহুকে বললো,"আল্লাহ বাঁচিয়েছে যে জ্বর হেমোরেজিক না। তাহলে আরো কত ধকল যে আমার যেত"। কুহু কিছু বলেনা। ভাবে"ঠিক আরো খারাপ জ্বর হলে আরো কত খারাপ হত।" কুহুরা এমনই। মাঝে মাঝে কুহু ভাবে, সেই যে ছোট বেলায় একবার জ্বর হয়েছিল তার, বাসার সবাই কেমন ব্যাস্ত ছিল তাকে নিয়ে। এত লজ্জা লেগেছিলো সবার উৎকণ্ঠা দেখে। আজও তার লজ্জা করে অসুখ হলে। সবাইকে ঝামেলায় ফেলে কুহু খুবই লজ্জা পায়।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)