পরিবার ও আমি (বিয়ে ,দাম্পত্য,শিশু লালন পালন )

গিন্নীপনার টুকুটাকি-১

গিন্নীপনার টুকুটাকি-১
8801679118171 রান্নাঘরের যে জায়গাটায় দাঁড়িয়ে কাটাকাটি করি, তার পাশেই ওভেন। ওভেনে একটা জিনিস হতে দিয়ে অনেকক্ষণ ধরেই কাটকাটির কাজ করেছি। ছেলেকে পরিষ্কার করতে বাথরুমে গিয়েছি। ফিরতে হাত ধুতে বেসিনে দাঁড়িয়ে আয়নায় নিজেকে দেখি ভাবছি, এইটা কে? পেছনে তাকিয়ে খুঁজলাম, না কেউ নাই। হায়রে! মাথার ওপরের টিনের চালের গরম আর ওভেনের উত্তাপ, সব মিলে আধকালো এই আমাকে লালচে আফ্রিকান বানিয়ে ছেড়েছে। আয়নার এই বস্তুটা আমিই!   আমার রান্নাঘর, আমার অন্যতম কর্মক্ষেত্র। দিনের প্রায় আটটা ঘন্টা বাইরে কাটিয়ে বাসায় ফিরলে আমার রান্নাঘরটা আমাকে একদম সাথে সাথেই বিছানায় গা এলিয়ে অফুরন্ত বিশ্রামের লোভ ভুলিয়ে দেয়। এই আট ফুট বাই ষোল ফুটের ঘরটা, তার মাথার ওপরের টিনের চালটা আর সামনের আম-লিচু-পেয়ারার গাছগুলোর গোড়ায় এক চিলতে ফাঁকা জায়গা, আমার উদ্ভট-আজব-দরকারী-অদরকারী সব ধরণের পরীক্ষানিরীক্ষার গবেষণাগার!   সাধারণভাবে মধ্যবিত্ত পরিবারে একজন মহিলার ঘরে থাকার সময়টার প্রায় অর্ধেকই ব্যয় হয় এই উত্তপ্ত রসায়ণাগারে। জানেন নিশ্চয়ই রান্নাঘরে যে জৈব রসায়ণের চর্চা চলে? আর এজন্যই এর আরেক নাম, 'রসুই ঘর'?   পরিবারের মানুষগুলো, অথবা পরিবারের বাইরেও যাদের আমি প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি, ভালোবাসার সেই মুখগুলোকে একটু খুশী করতেই রান্নাঘরের এই উত্তাপকে হাসিমুখে মেনে নেয়া যায়। আগে, যখন রান্না করতাম না, তখনকার সময়ের হাত বা মুখের সাথে তুলনা করলে থমকে যেতে হয়। মুখের রঙ বদলে যাওয়া, নখের মাঝ বরাবর ক্ষয়ে যাওয়া এইসব তো নিত্যদিনের ব্যয়। বোনাস হিসেবে জুটে হাতের এখানে ওখানে ছ্যাঁকা (এটা বালিকা বয়সে প্রেমের ফল হিসেবে নয়, অসাবধানতা বা অন্যমনষ্কতার ফল), গভীর-অগভীর ক্ষত, যেগুলো মাঝে মাঝে চিরস্থায়ী দাগও রেখে যায়।   এই ত্যাগ কেন? কার জন্য? বুঝেশুনে করছি কি? আমার রান্নাঘর, এখানে আমি অপচয় করি না। আমার ফ্রিজে কারও হক নষ্ট করে কেনা বাজার নেই। আমার কাপ-প্লেট-তশতরীতে খাবার উপচে পড়ে না, নষ্ট হয় না। ঘরে খাওয়া হবে না বুঝলে সে খাবার আমি তৎক্ষণাত উপযুক্ত হাতে পৌঁছে দিই। এখানে আমি অশেষ সময় ব্যয় করি না,  প্রিয়জনকে খুশী করতে স্রষ্টার কাছে ধর্ণা না দিয়ে ইহকালের উত্তাপ দিয়ে পরকালের উত্তাপ কিনে নিই না, জ্ঞানত। আমার ওপরে আল্লাহর দেয়া আমানত হিসেবেই প্রিয়জনদের দায়িত্ব পালন করি, যার অংশ তাদের পেটে স্বাস্থ্যকর-সাধ্যমত সুস্বাদু খাবার দেয়া।   চোখ বন্ধ করে শেষ যাত্রা শুরুর দিন পর্যন্ত, এই ছোট্ট ঘরটি আমার ডানকাঁধের সম্মানিত লেখককে ব্যতিব্যস্ত রাখুক, এই কামনাই করি।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ
আমার ডিভাইস ভাবনা

আমার ডিভাইস ভাবনা

২২ জানুয়ারী ২০২৪

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

২৮ ডিসেম্বার ২০২৩

আমার বাচ্চা খায় না!!????

আমার বাচ্চা খায় না!!????

২৪ ডিসেম্বার ২০২৩

আক্রমনাত্মক দাওয়াহ!!!

আক্রমনাত্মক দাওয়াহ!!!

১৩ ডিসেম্বার ২০২৩