পরিবার ও আমি (বিয়ে ,দাম্পত্য,শিশু লালন পালন )

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

ফজরের পরের সময়টা একান্তই নিজের আলহামদুলিল্লাহ। যখন আধো আলো আধো অন্ধকারে জায়নামাজের কাজ শেষ করে আস্তে আস্তে রান্না ঘরের দিকে যাই ততক্ষনে বাচ্চারা কোনোমতে কয়েকবার কপাল জায়নামাজে ঠেকিয়ে আবার ঘুমে।আলহামদুলিল্লাহ তাও তো এতটুকু করে।রান্না ঘরে যেয়ে প্রথম কাজ চায়ের হাড়ি টা চুলাতে চাপানো।তারপর রান্নাঘরের দরজা জানালা খুলে দেয়া।চায়ের পাতার গন্ধে তখন আরেকটা নতুন দিনের সুচনা হচ্ছে।রান্নাঘরের লাগোয়া বারান্দায় রান্নার প্রয়োজনীয় জিনিস রাখা।সেখান থেকে ফ্রাইপ্যান, রুটির তাওয়া আনতে যেয়ে একটা স্নিগ্ধ ঠান্ডা উত্তরের বাতাস গায়ে, চোখে মুখে লাগে।আমার সবচেয়ে প্রিয় ঋতু শীত আসছে।যখন এমন প্রশান্তিতে আমার মন ভরে উঠে। মনে মনে ঠিক করে নেই কাজের রুটিন।কি টিফিন দিবো, কি হাল্কা পাতলা নাস্তা তাড়াতাড়ি তিন জনের মুখে পুড়ে দিতে পারবো, মেয়ের কফি তৈরী করে থার্মাল কাপে রাখতে হবে আবার দৌড়ে এসে গীজার টা অন করে দিয়ে যাই। সকাল সকাল একটু ঠান্ডাই থাকে পানি বাচ্চা গুলির কষ্ট হবে।এই তাড়াহুড়োর মাঝেই যখন ঘুমন্ত মানুষ চারটারে দেখি কি পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। মা আছে ঠিক টাইমলি উঠিয়ে দিবে,সব রেডি করে স্কুলে নিয়ে যাবে তখন ঠিক আরেক প্রান্তে আমারই বাচ্চারা খেয়ে না খেয়ে মরে যাচ্ছে তাও আস্তো মরছে না ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে।আমি বাচ্চাদের কাথা ঠিক করে দিচ্ছি,পর্দা টেনে দিচ্ছি আরেকটু ঘুমাক আরামে।আমারই বোন তার বাচ্চা কে বুকের মধ্যে ঢুকিয়েও বাচাতে পারছে না।মায়ের বুক নিরাপদ কিন্তু যদি মা ই না থাকে তবে! বাবা পরম নির্ভরতার জায়গায় কিন্তু বাবার বুকেই যদি শেষ স্থান হয় বাবা সহ তবে!

এতো কিছুর মধ্যে আমার এতো প্রিয় চা ঠান্ডা হয়ে যায়।মন মরে যায়। চা খাওয়াকে বিলাসিতা লাগে।আমার এসব  বিলাসিতা অনেকের কাছেই সুখের অসুখ।বেশী বেশী।কিন্তু আমি জানি অই যে অই জায়গার মানুষ গুলো সেই জায়গাটা কোনোদিনও ছাড়বেনা।মরবে, পঁঁচবে তবুও আকড়ে ধরে থাকবে।আর আমাদের আংগুল তুলে বলবে দেখো এটা কোনো রুপ কথা নয় যে একদিন সব শেষ হবে।মাসীহ আসবে।সে পথ তৈরী হচ্ছে।তিনি আসবেন।আমরা আমাদের জান,মাল বুকের মানিক দিয়ে সে পথ তৈরী করছি আর তোমরা করছ বেঈমানী দিয়ে।একই পৃথিবীর এক প্রান্তে তোমরা খাচ্ছো, ঘুমাচ্ছো,উইকেন্ড প্ল্যান করছো আর আমরা ঝাঝড়া হয়ে যাচ্ছি,ওষুধ খাচ্ছি মেয়েলী ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকতে। নানা রকম রোগ বালাই বাসা বাধছে আমাদের শরীরে।তবুও তোমরা দেখোনা।কিন্তু যখন আকসা আমাদের হবে তখন কিন্তু আমরা তোমাদের জন্য তা তালাবদ্ধ রাখবোনা।তোমরাও আমন্ত্রিত আমাদের সবার প্রথম কিবলায়, হাজারো নাবী রাসুলের পুন্যভূমীতে।

এইসব এলোমেলো সাত পাচ ভাবতে ভাবতে কাজ শেষে স্কুলে যাই বাসায় আসি রান্না করি। কাজ বুঝিয়ে দেই সাহায্যকারীদের।নানান দায়ীত্ব পালন করি।সংসারের,বাচ্চাদের,স্বামীর, আত্মীয়স্বজনের হক আদায় করি।শুধু পারিনা ঈমানী দায়ীত্ব পালন করতে।আচ্ছা এই বোধ কি শুধু আমার মত অক্ষমেরই হয়।যাদের অনেক ক্ষমতা তাদের কি একটুও হয়না!কিভাবে হবে!  এটাই তো পরীক্ষা।দুনিয়ার জীবনের।কে সুযোগ পেয়ে ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে তার মালিক কে তার জীবনের মাকসাদকে ভুলে গেলো আর কে অনন্ত জীবনের আশায় দুনিয়ার জীবনকে,নিজের অংশকে কুরবানী করে দিলো।এটাই তো অদেখার উপরে বিশ্বাস।

গত কয়েকবছর ধরেই আকসার জন্য এক পরম টান অনুভব করতাম।আমার একজন খুব কাছের মানুষের সাথে এ নিয়ে অনেক কথা হতো।বলতাম আমি জানিনা কি করে হবে কিন্তু আমাকে যেতেই হবে অইখানে জীবনে একবার হলেও।গতবছর শত বাধা আর অনিশ্চয়তা স্বত্তেও যখন হুট করে সপরিবারে যেভাবে চেয়েছিলাম ঠিক সেভাবে উমরাহ সফর হলো তখন সেখানে থেকেই তাকে বলেছিলাম এভাবে একদিন আমি সেখানেও যাবো দেখো।কিন্তু মোটামুটি ভিসা পাসপোর্ট একটু টাকা পয়সা ম্যানেজ করতে পারলে এটা সম্ভব হয় কিন্তু জ্ঞান হওয়ার পর থেকে যে জায়গা টা শুধু যুদ্ধবিধ্বস্ত হয়ে আছে দেখছি সেখানে কিভাবে কি তখন আমার সে বন্ধু বলেছিলো তুমি যেমন যাওয়ার দুদিন আগেও জানতে না তুমি যেতে পারছো কিনা!কারন তুমি তো একবারও দু'আ করনি আমাকে আপনার ঘর দেখান তুমি দু'আ করেছিলে আমি আমার পুরো পরিবার, মা,শ্বশুর শ্বাশুড়ি সহ যেতে চাই প্রথম বার। কিন্তু দেখো তোমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি যাওয়ার কোনো প্ল্যানই ছিলো না। তারা না করে দিয়েছিলো বরাবরই কিন্তু কিভাবে কি হয়ে গেলো তেমনই তুমি যখন মন থেকে দু'আ করছ তখন আর তোমাকে সমাধান নিয়ে ভাবতে হবে না।তিনিই ব্যাবস্থা করবেন ইনশাআল্লাহ। দিন দিন যেভাবে অবস্থা খারাপ হচ্ছে তাতে আমার মনে হচ্ছে সেখানে যাওয়ারই পথ তৈরী হচ্ছে আমাদের।হয়তো আমি যেতে পারবোনা কিন্তু আমার অংশ রা হয়তো সেই পুন্যভুমীতে অবলীলায় যাবে, আমাদের হেরীটেজ ঘুরে দেখবে হিস্ট্রি জানবে, বীর সাহসীদের গল্প শুনবে জানবে।সালাহ আল দীন এর রোডে হাটবে আর বলবে এই সেই বীরের নামে রাস্তা যা মা আমাদের গল্পে শোনাতো।ইয়া মালিক, ইয়া রব আপনার দরবারে লাখো কোটি সালাম এই ভাবে দু'আ কবুলের জন্য।

সেদিনের জন্য আজ পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে এক চরম অক্ষম বান্দীর পক্ষ থেকে বুক ভরা দু'আ আর ভালোবাসা।আমরা সোনালী দিনের স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্ন যে স্বপ্ন সে দেশের প্রতিটা বাচ্চা দেখে খোলা চোখে।আর প্রকৃত স্বপ্ন সেটাই যে স্বপ্ন পুরনের অস্থিরতা আমাদের ঘুমাতে দেয় না।এ স্বপ্ন তো পুরনের ওয়াদা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা দিয়েছেন প্রায় ১৫০০ বছর আগে। নিশ্চয়ই আমার রব ওয়াদা ভংগ করেন না।

 

ফারজানা হোসেন রুপা

১২/১১/২৩

রবিবার

ঢাকা


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ
আমার ডিভাইস ভাবনা

আমার ডিভাইস ভাবনা

২২ জানুয়ারী ২০২৪

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

২৮ ডিসেম্বার ২০২৩

আমার বাচ্চা খায় না!!????

আমার বাচ্চা খায় না!!????

২৪ ডিসেম্বার ২০২৩

আক্রমনাত্মক দাওয়াহ!!!

আক্রমনাত্মক দাওয়াহ!!!

১৩ ডিসেম্বার ২০২৩

লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন
আমার ডিভাইস ভাবনা

আমার ডিভাইস ভাবনা

২২ জানুয়ারী ২০২৪

আমার বাচ্চা খায় না!!????

আমার বাচ্চা খায় না!!????

২৪ ডিসেম্বার ২০২৩

আক্রমনাত্মক দাওয়াহ!!!

আক্রমনাত্মক দাওয়াহ!!!

১৩ ডিসেম্বার ২০২৩

সরল স্বীকারোক্তি

সরল স্বীকারোক্তি

৬ ডিসেম্বার ২০২৩