পরিবার ও আমি (বিয়ে ,দাম্পত্য,শিশু লালন পালন )

সে যে বসে আছে , একা একা

সে যে বসে আছে , একা একা
lonely তার গুনগুন মনের গান বাতাসে ঘুরে কান পাতো মনে পাবে শুনতে তার রঙের তুলি নাচে মেঘেরা ছোটে চোখ মেলো যদি পারো বুঝতে অর্ণবের গাওয়া এই গানটির কথাগুলো আমার কাছে নিছক গানের কথা মনে হয়না, মনে হয় একটি নারীর পরিপূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক আকাশ। কারোই মনেহয় গুনগুন মনের গান শোনার সময় নেই, চোখ মেলার ও সময় নেই রঙের তুলির ছোঁয়ায় অঙ্কিত শিল্প দেখার ও। সেদিন এক বান্ধুবি বলছিল- তার জীবনসঙ্গীকে সে খুব মিস করে সারাক্ষণ! যদিও সে সারাদিনই ব্যস্ত থাকে। বান্ধুবি ও যে একদম ফ্রি সময় কাটায় তা নয়। কিন্তু , কাজের ফাঁকে ফাঁকেই প্রিয় মানুষটির কথা মনে পড়ে যায়। এক্ষেত্রে দূরত্ব যতোই হোক কাছে থাকার সুত্র মিলেনা একটুও। বরং চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল হয়ে যায়। সেই ছেলেটির বিশাল একটা জগত আছে , সেই জগতের অনেক অলিগলি, অনেক শাখা অনেক বাঁক। সেই বাকে মেয়েটি হয়তো সময় কাটানোর একটা উপকরণ মাত্র, তাও একটা সময়ে, অবশ্যই নিজের প্রয়োজনে। যদিও বাবা আদমের একাকীত্ব দূর করার জন্যই মা হাওয়াকে বানানো হয়েছিলো। এরপর বাবা আদমের একাকীত্ব ঠিকই ঘুচেছে, কিন্তু মা হাওয়া পৃথিবীর সুনসান বালুকায় অনেকদিন একাকীই তো ছিলেন! তারমানে- সৃষ্টির শুরু থেকেই নারী দিয়ে ছেলেদের একাকীত্ব দূর হয়েছে, কিন্তু পুরুষ কখনো নারীর একাকীত্ব নিয়ে ভেবে মরেনি। এটা নিশ্চিত । এই একাকীত্ব থেকে সৃষ্টি হয় বিষণ্ণতা নামক ভয়াবহ ব্যাধির , যে ব্যাধিতে বাংলাদেশের ৫-৭ ভাগ নারীই আক্রান্ত হচ্ছেন কোন না কোন সময়। এই একাকীত্বে ভোগা ৫০ ভাগ নারীই কোন না কোন সময় আত্মহ...র চেষ্টা ও করে থাকেন। এভাবেই ছোট ছোট অবহেলা থেকেই একাকীত্বের শুরু হয়। এক মহিলার স্বামী বাহিরে থাকে, ডাক্তার। তিনি প্রতিদিনই একবার হলেও যোগাযোগ করেন। কিন্ত হটাত ২ দিন বলা নেই কওয়া নেই যোগাযোগ বন্ধ। মহিলা ঠিকই দেশে বাচ্চাদের দেখাশোনা করছেন , আর ওদিকে ফোনে স্বামীকে না পেয়ে অস্থিরতায় ভুগছেন, দুশ্চিন্তায় বারবার গুমরে গুমরে মরছেন- স্বামীর কোন ক্ষতি হল না তো? কিন্তু স্বামী ওদিকে রোগী নিয়ে মহাব্যস্ত। মোবাইল চেক করার সময় নেই। বাসায় যেয়ে ২ ঘণ্টা ঘুমিয়ে আবার দৌড়। কিন্তু ওদিকে যে স্ত্রীকে বিষণ্ণতায় কুঁড়ে খাচ্ছে সেটা জানার সময় ও তার নেই। এই ঘটনা যে শুধু একদিনের তা নয়। পেশাগত জীবনে এটা বারবার হচ্ছেই। অথচ, মাত্র ১ মিনিট ২ টা বাক্য হয়তো এই অবহেলার যন্ত্রণাদায়ক বোধ থেকে বাঁচাতে পারতো! টাচে থাকতে ৩/৪ ঘণ্টা কথা বলতে হয়না। এই একা একা ভাব থেকেই একটা বয়সে নারী মাথা ব্যাথা, শরীর জ্বালাপোড়া, সবকিছুতে ত্যাক্ত বিরক্ত ভাব নিয়ে ভুগে। অদৃশ্য এই রোগ, যার নেই কোন নির্দিষ্ট কারন, শুধু একটাই বিষয়- সেটা হচ্ছে একাকীত্ব থেকে ডাল পালা গজানো বিষণ্ণতা। আসলে, একবার লক্ষ্য করে দেখু...! আপনার জীবন সঙ্গিনীকে সন্তুষ্ট করতে খুব বেশী কিছু দরকার হয়না। একটু যত্নশীলতা, খোঁজ খবর, সমবয়সী নারীরা স্বামীর থেকে যেমন সহমর্মিতা লাভ করছে, যেমন অন্য সহকর্মীদের স্বামীরা খাওয়ার সময় ফোন দিয়ে খোঁজ নিচ্ছে, একটু হলেও সারাদিন টাচে থাকছে এই আচরণগুলো তুলনা করে আপনার থেকেও একটু আশা করলে এটা তার অপরাধ নয়। আর মেয়েদের জন্য একাকীত্ব কাটানোর পরামর্শ এটাই দেওয়া যায় যে, নিজেকে অবহেলিত ভাববেন না। নিজে যদি নিজেকে সম্মান করতে না পারেন নিজের শক্তিগুলো জেনে নিতে না পারেন তাহলে পৃথিবীর অন্য কেউ আপনাকে মূল্যায়ন করবে এই আশাটা অমূলক। আর দায়িত্বশীল হতে হবে নিজের প্রতি, সমাজের প্রতি। নিজেকে খোঁজার জন্য ডুব দিতে হবে বইয়ের পাতায়। নিজের ব্যক্তিত্বকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে যাতে পাশের মানুষটিও সম্মান করতে শিখে এবং অবহেলা করার দুঃসাহস না করে। নিজেকে নিজের জীবনকে উপভোগ করতে হবে নিজের মতো করেই। এটা নারীর গঠনগত এবং হরমোনজনিত ব্যাপার । চাইলেই সে আপনার মতো হাজার ব্যস্ত থেকেও ব্যস্ত ব্যস্ত ভাব করতে পারবেনা। আপনার পাশে সে যে বসে আছে, আপনার প্রিয় মানুষটি, এমনই বিষণ্ণতা একাকীত্ব আর নিজেকে বুঝাতে না পারার অব্যক্ত যন্ত্রণায় ভুগছেনা তো?

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ
আমার ডিভাইস ভাবনা

আমার ডিভাইস ভাবনা

২২ জানুয়ারী ২০২৪

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

২৮ ডিসেম্বার ২০২৩

আমার বাচ্চা খায় না!!????

আমার বাচ্চা খায় না!!????

২৪ ডিসেম্বার ২০২৩

আক্রমনাত্মক দাওয়াহ!!!

আক্রমনাত্মক দাওয়াহ!!!

১৩ ডিসেম্বার ২০২৩