
অনেকদিন আগে ডেইলি স্টারে কনফেশন টাইপ একটা কলামে একটা প্রশ্ন পড়েছিলাম, একজন মনোবিজ্ঞানীর কাছে। প্রশ্নটা ছিল এমন-
আমি একজন পূর্ণ বয়স্ক নারী। একটা ছেলের সাথে দীর্ঘদিন যাবত সম্পর্ক আছে। বর্তমানে লিভ টুগেদার করছি। আমি ওকে নিয়ে খুবই সন্তুস্ত। একদম মনের মতো লাইফ পার্টনার। কিন্তু সমাজে চলাফেরায় আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। মানুষ আমাকে জিজ্ঞেস করে- তোমাদের সম্পর্ক কি! কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারিনা। আবার ওদিকে বিয়েকে আমার কাছে মনে হয় টাকার বিনিময়ে আইনত পতিতাবৃত্তির লাইসেন্স। আমার কি করা উচিৎ?
সেই মনোবিজ্ঞানী যে জবাবটা দিয়েছিলেন, তা আমার বেশ মনে ধরেছিল। তিনি সামাজিক কিছু প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছিলেন, বিয়ের প্রয়োজনীয়তা কেন তা ও সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছিলেন। যদিও ইসলাম শব্দ ছিল না, কিন্তু এগুলো ইসলামেরই ব্যাসিক, যেই ব্যাসিকে মিলে যায় মানব সভ্যতার ব্যাসিক।
একজন মানুষকে যদি সত্যিই জীবন সঙ্গী হিসেবে বেছে নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয়, তাহলে সামাজিক স্বীকৃতি নারীর নানা রকম অনিশ্চয়তা দূর করতে পারে। এই মেয়েটির বয় ফ্রেন্ডকে শয়তান কখনো আক্রমন করবেনা, সে মানুষ থেকে পশু হয়ে যাবে না তারই বা কি নিশ্চয়তা ছিল?
যাই হোক, আমি ঠিক করেছিলাম, বিয়ে টপিকে আর লেখবো না। ছোট মানুষ আমি, এতো পাকনা পাকনা কথা বলা ঠিক না।
কিন্তু টু ডে ব্লগে তসলিমাকে নিয়ে একটা লেখায় রাসুল (সাঃ) সম্পর্কে একটা কটূক্তি পড়ে আবার কলম ধরলাম।
একজন মন্তব্য করেছে- পুঁজিবাদী আগ্রাসন, নারী পণ্য, শাড়ির উপর ব্লাউজ আপনি এসবের বিরোধী। তাহলে আপনি কি চান? নবীর যুগের এক ঘরে ১ ডজন স্ত্রী, যৌনদাসী, গনিমতনারী। এসব আপনি চান?
দেখু..., একদম প্রাকৃতিক দিক দিয়ে দেখলে, মানুষের অবশ্যই কিছু শারীরিক চাহিদা আছে। যেমন আছে পশুদেরও । কিন্তু মানুষের সাথে পশুর পার্থক্য হোল, তার চাহিদা চরিতার্থ করতে পারবে সামাজিক নিয়মের মাধ্যমে, নিয়মের মাধ্যমে, রাস্তাঘাটে নয়, যার সাথে খুশী তার সাথে নয়। আর বিয়ে সেই নিয়মের একটা অন্যতম আনুসঙ্গ। যার মাধ্যমে সমাজ জানবে- এই মেয়েটার জীবন সঙ্গী এই ছেলেটা, সুখে দুঃখে একেই এর পাশে দেখা যাবে।
নবী (সাঃ) এর বিয়ের পেছনে তখনকার এক বিরাট সামাজিক প্রেক্ষাপট আছে। তিনি যখন পঁচিশ বছর বয়সে উপনীত হয়েছেন, তখন খাদীজা (রা.) এর পক্ষ হতে বিয়ের প্রস্তাব পান, যিনি বিধবা ও সন্তান সম্পন্না হওয়ার সাথে সাথে তখন চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হয়ে বার্ধক্য জীবন যাপন করছিলেন। তিনি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্বেও দু‘জন স্বামীর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন এবং দুই পুত্র ও তিন মেয়ের জননী ছিলেন। এতদসত্তেও নবীর দরবারে তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়নি এবং জীবনের বেশীর ভাগ সময় ঐ একটি বিবাহের উপরই অতিবাহিত করেছেন।রাসুল (সা.) এর যত সন্তান জন্মলাভ করেছিল তা সবই হযরত খাদীজার (রা.) গর্ভে হয়েছে।
হযরত খাদীজা (রা.) এর ওফাতের পর নবীজীর বয়স যখন পঞ্চাশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল, ঠিক তখন একের পর এক বাকী বিবাহগুলো সম্পন্ন করেন। বিশেষ বিশেষ শরয়ী প্রয়োজনে একে একে দশটি বিবাহ করেন। আয়েশা (রা.) ব্যতীত যাদের সকলেই ছিলেন বিধবা। কারো কারো সন্তানও ছিল।
সুতরাং, কোন জৈবিক কামনা বাসনার তাড়নায় রাসুল (সা.) বহু বিবাহ করেছেন একথা কোন বিবেকবান মানুষের পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
কোথায় পুঁজিবাদের নারী নিয়ে ব্যবসা আর কোথায় বিয়ের মতো হালাল সম্পর্ক! দুইটার কি কোনভাবেই তুলনা দেওয়া যায়! আর যদি যৌন দাসী বৃত্তি বলেন ব্যাপারটাকে , তাহলে আপনি আমি যেভাবে দুনিয়াতে এসেছি, সেই বিষয়টা ও কিন্তু কলঙ্কিত হওয়ার ঊর্ধ্বে থাকেনা। তাহলে কি বলতে চান আপনার মা ও যৌন দাসী ছিলেন? বিষয়টা নিশ্চয়ই তা নয়।
আর যিনি মহামানব, মানবতার মুক্তির দূত, তার সম্পর্কে ঢালাও মন্তব্য করার আগে অন্তত একবার তার জীবনী পড়ুন। এতোগুলো বিয়ে করেও যিনি একজন আদর্শ পিতা ছিলেন, একজন আদর্শ স্বামী ছিলেন, একজন সফল রাষ্ট্র নায়ক ছিলেন। চাঁদের ও কলঙ্ক আছে, অনেক বড় বড় সাধু সন্ন্যাসীর জীবনেও অনেক অতীত আছে, কেউ ডাকাত ছিল তো কেউ সমাজ সেবক হয়েও ঘরের মানুষকে সম্মান করতো না। কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) এর একটুখানি ব্যর্থতা কি দেখাতে পারবেন একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে?
পারবেন না।
সুতরাং এমন মানুষকে নিয়ে মন্তব্য করার আগে, তার সম্পর্কে জানুন, তার প্রেমে অবশ্যই পরবেন।কেন কোটি কোটি মানুষ তাকে অনুসরণ করছে, তা ও বুঝতে পারবেন। আর পুঁজিবাদের কথা আর কি বলবো!
বিয়ে তো তাও নারীর বিভিন্ন অধিকার প্রতিষ্ঠা করে পুরুষের উপর, চাই তা বহু বিবাহই হোক না কেন! কিন্তু পুঁজিবাদ তো নারীকে বাজারে বিক্রি করে। এই দুটো কি কখনো তুলনাযোগ্য হয় ?
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)