
মানুষের বিয়ের দিনটাকে আমার কাছে ঈদের দিনের মতো মনে হয়। এটা কেমন? ঈদের আগে মানুষ প্রচুর প্রস্তুতি নেয়, আমরা ও নেই। আহা! সারামাস কি ধুমছে শপিং, এই সেই! আর চাঁদ রাতে তো পরের দিনের রান্নার প্রস্তুতি, আর ঘর গোছানোর কাজেই গত হয়ে যায়। এরপর অবশেষে ঈদের দিন, যেই দিনের জন্য আমাদের এতো প্রস্তুতি! চুলের ফিতা থেকে শুরু করে পায়ের নেইল পেইন্টটা পর্যন্ত মিলিয়ে মিলিয়ে কেনা হয় যেই দিনের জন্য, সেদিন আসলেই কেমন জানি সব অর্থহীন মনে হয়। মনে হয়, আত্মীয় স্বজনের বাসায় যেতে , তাদের সাথে দেখা করতে এতো , কিংবা ঈদের আনন্দের বিরাট মানের কাছে এইসব তুচ্ছ জিনিষ অনেক বেশী তুচ্ছ। এই আনন্দকে ভাগ করে নেওয়ার জন্য এতো বস্তুগত জিনিষের দরকার নেই। আর ঐ প্রস্তুতির বিশাল যজ্ঞের ক্লান্তিতে ঈদের দিনটা কেমন যেন ফিকেই মনে হয়। বিয়েও ঠিক এমনই। ঈদের চেয়েও বিশাল এর প্রস্তুতি। হাজার মানুষকে দাওয়াত দিতে হবে, নতুন সংসার গুছাতে হবে, কেনাকাটা করতে হবে, একটা এক যায়গা থেকে কিনলে আরেকটা আরেক শপিং মল থেকে। মাথার সামান্য ক্লিপ থেকে শুরু করে ছোট বড় হাজার ও জিনিষ! আবার সবার মন রক্ষা করা ও জরুরী! কে আবার বাদ পড়ে দুঃখ পেয়ে বসে। খাওয়া দাওয়ার আয়োজন ও করতে হবে। কার্ড না ছাপালেও হয়না। সব মিলিয়ে একটা বিয়ে মানে একটা বিশাল স্ট্রেস! শুধু পরিবারের উপরই নয়, বর কনের উপর ও । কোন পক্ষের আয়োজনে কোন কমতি থেকে গেলেই হলো! বর কনেকেও সেই ধাক্কা সামলাতে হয়। আর সমাজ রক্ষা, বন্ধু বান্ধবের খোঁজ নেওয়াই তো অবধারিত! আবার নিজস্ব কিছু প্রস্তুতি, মানসিক আশংকা সহ নানা রকম দুশ্চিন্তায় পরিস্থিতি এমনই নাজুক হয়, যে বিয়ের দিনের সেই স্নিগ্ধ কোমল অনুভূতি ধরে রাখা আর সম্ভব হয়না। অনুষ্ঠানের লৌকিকতায় হারিয়ে যায় এসব। ২ জনই থাকে চরম ক্লান্ত, আর উল্টা পাল্টা কিছু হলে চরম বিরক্ত! আসলে বিয়ে এতো কঠিন কিছু নয়। পারিবারিক কিছু কাছের মানুষ, ব্যক্তি জীবনে খুব কাছের কিছু বন্ধু, আত্মীয় স্বজন নিয়ে ছোটখাটো ছিমছাম অনুষ্ঠান করাই তো ভালো ! অনেকে আবার ডাবল অনুষ্ঠান করে। একবার কাবিন একবার তুলে নেওয়া। একসাথে জীবন শুরু করার প্রক্রিয়া থেমে থাকে শুধু মাত্র সামান্য লৌকিকতার জন্য! আমার পিচ্চি ছাত্রীর কাবিনেই এতো আয়োজন করেছে, যে তার মা এখন ঋণের জলে হাবুডুবু খাচ্ছে। ভাবছি, আসল অনুষ্ঠানে না জানি কতো ঋণ করবে! তাও , লোক দেখানো বলে কথা। এই চাকচিক্যই সমাজে তাদের ছেলেমেয়েদের সুখের পায়রা উরাবে এই হলো আশা! কিন্তু, যা হওয়ার একবারেই করুন না কেন? হাদিসেও তো অপচয় করতে নিষেধ করা হয়েছে বিয়ের অনুষ্ঠানে! আর কবুল বললেই তো একসাথে থাকার অনুমতি হয়ে যায়, ছেলের ঘাড়ে মেয়ের সব দায়িত্ব বর্তায়, তো একবারে জীবন শুরুতে কেন এই অযথা অজুহাত? জহুরীর লেখা প্রেস্টিজ concern এ পড়েছিলাম, এক লোকের গল্প! যার পূর্ব পুরুষ নবাব ছিল বলে ছেলের বিয়েতে সব অতিথিদের সোনার পয়সা উপহার দেন। অবশেষে শেষ বয়সে তরকারি বিক্রি করে খেতে বাধ্য হন। যদিও তার প্রেস্টিজ রক্ষার উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল তা, এরপর এরই ফলস্বরূপ তরকারি বিক্রি করতে বসেছিল নবাব বংশের বংশধর। আর প্রেস্টিজ রক্ষার বিষয় তো? তা সম্মান সেই ব্যক্তি এমনিই আপনাকে দিবে, যে আপনাকে মন থেকে প্রকৃতই সম্মান করে। আর যে সম্মান করেনা, তাকে হাতি ঘোড়া খাওয়ালেও তার মুখে সম্মানসূচক উক্তি শুনতে পাবেন না। বিখ্যাত লেখক নইম সিদ্দিকি তাই বলেছেন- বিয়ের অনুষ্ঠানে বেশী হলে ১৫০ অতিথি দাওয়াত দেওয়া যেতে পারে। আর এক অনুষ্ঠানে এতো এতো খাবারের জিনিষ কিনে, এরপর ডিপ স্তুপ করে অনেকদিন খেয়ে নিজেদের ১২ টা তো মানুষ বাজায়ই, দেশের ও ১২ টা বাজায় । চাহিদা যোগানে ভারসাম্যহীন অবস্থার ও সৃষ্টি করে। সুতরাং, বিয়েতে বেশী জাঁকজমকের চিন্তা বাদ দিয়ে নীরবে, সুস্থির অবস্থায় এর কোমলতা উপভোগ করুন। এই জাকজমক ২ দিনের, কিন্তু এই শান্তির অনুভূতি, পবিত্রতার অস্তিত্ব সারা জীবনের। এটা জীবনের বেশ বড় একটা মোড়। অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যতের এক অদ্ভুত মেলবন্ধন। অনেক অপেক্ষার পর একটু স্বস্তির ছায়া। ব্যস্ত জীবনের একটা ব্রেক, রিফ্রেশমেন্ট! এই সময়টা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস না ফেললে আর কবে ফেলবেন?
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)