পরিবার ও আমি (বিয়ে ,দাম্পত্য,শিশু লালন পালন )

প্রিয়তম, বুঝবে তো আমায়?

প্রিয়তম, বুঝবে তো আমায়?
download (1) মেয়েদের মনে যেই শঙ্কাটা সবসময় কড়া নাড়ে - আমার প্রিয়তম আমায় ঠিক বুঝতে পারবে তো? থাকবে কি তার হাতে আমাকে বোঝার সময়? আর বুঝতে না পারলেই হয়ে যায় অনর্থ, মনের আকাশে যোজন যোজন দূরত্ব। সাধারণত, নারীর ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যে বিশ্বাস করে এমন পুরুষের সংখ্যা হাতে গোনা। ব্যতিক্রম ও যে নেই তা নয়। যেমন , রাসুল (সাঃ ) ও আয়েশা (রাঃ) এর কথাই ধরেন। রাসুল (সাঃ ) বললেন - তুমি কখন আমার উপর সন্তুস্ত থাকো আর কখন অসন্তুষ্ট হও তা আমি জানি! হজরত আয়েশা- কীভাবে জানেন? রাসুল (সা)- যখন তুমি আমার ওপর খুশী থাকো, তখন কোন কথা খণ্ডন করতে হলে তুমি বলে থাকো- মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রভুর শপথ। এটা ঠিক নয়। আর যখন আমার উপর অসন্তুষ্ট থাকো তখন তুমি বল- ইবরাহীমের প্রভুর শপথ। আয়েশা (রা) বললেন- আপনি ঠিকই বলেছেন। তবে হে রাসুলাল্লাহ আল্লাহর কসম! আমি কেবল আপনার নামটা মুখে উচ্চারন করা থেকেই বিরত থাকি। (অন্তরে আপনার স্থান বহাল আছে) ( বুখারি, মুসলিম) এভাবেই স্বয়ং রাসুল (সাঃ) হজরত আয়েশার (রাঃ) এর ব্যক্তিত্ত্যের একটি মনোহর দিকের সন্ধান করেছিলেন। এমনিভাবেই প্রতিটা নারীর আলাদা ব্যক্তিসত্তা আছে। অথচ, পাত্রীর বাজারে যা মূল্যায়ন করা হয়, তাকে আর যাই হোক ব্যক্তিসত্তার মূল্যায়ন বলা চলেনা। আর বিয়ের পরের মূল্যায়ন সম্পর্কে আর কি বলবো! বাহ্যিক দিক দেখে বিয়ের ফলাফল যা হয় আর কি! দেখা যায় বউয়ের মন থাকে আকাশে আর স্বামীরটা থাকে পাতালে। মনের জগতে ২ জনের ব্যবধান তেপান্তরের মাঠের মতো। আর অনেক ছেলে তো এটাই বিশ্বাস করেনা, যে একজন নারীর আলাদা কোন ব্যক্তিত্ব থাকতে পারে, তার আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য শুধু তাকেই মানায়, তার মাঝেই আছে। এমন খোঁজার প্রবণতা ও খুব কম মানুষের মধ্যেই থাকে। আর সারাদিন ব্যস্ত স্বামীর কাছে নারীরাও আশা করতে পারেনা, আলাদা মূল্যায়নের। ফলাফল- মনোজগতে দূরত্ব আর শূন্যতার বিশাল কৃষ্ণ গহ্বর। সংসার জীবনে ইহকালিন লক্ষ্য তো বাস্তবায়ন হয়ে যায়, কিন্তু জীবনের আসল লক্ষ্য অর্জন অধরাই থেকে যায়। আল্লামা আসাদ , প্রাথমিক জীবনে যিনি ছিলেন একজন ইহুদী, এরপর পৃথিবীর পথে প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে ইসলাম নামক আলোর সন্ধান পান। তাকে নিয়ে লেখার কারন কি? জাস্ট শুধু এতোটুকু বলা যে- যেসব মানুষের মাঝে সত্যিকারের ইসলামের আলো পান তাদের মন আসলেই মানবতাবাদী। তারা কখনোই বাহ্যিক এবং বস্তুগত দিকগুলোকে বিবেচনা করেন না। যেমন ধরুন , আল্লামা আসাদের স্ত্রী এলিসার কথাই। এলিসার যখন ৪০ বছর বয়স, তখন আল্লামা আসাদের বয়স মাত্র ২৬। আল্লামা আসাদ যখন এলিসাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন তখন এলিসা বলেছিল- তুমি তো আমাকে বিয়ে করতে চাও। কিন্তু এখনো তোমার বয়স ছাব্বিশ হয়নি। অথচ আমি চল্লিশ। ভেবে দেখো, যখন তোমার বয়স ৩০ হবে তখন আমার বয়স হবে ৪৫, তখন আমি বুড়ি হয়ে যাবো! আল্লামা আসাদ বললেন- তাতে কি! আমি তোমাকে ছাড়া নিজের ভবিষ্যৎ কল্পনা করতে পারিনা। বিয়ের পর নিজের জীবনসঙ্গী সম্পর্কে আল্লামা আসাদ লেখেছিলেন- সে আমার জীবনের আশা আকাঙ্ক্ষা বুঝবার ব্যাপারে এমন সংবেদনশীল ছিল যে, তার কারনেই আমার ইচ্ছা শক্তি চাঙ্গা হয়ে উঠলো। যদিও নিজের চেয়ে স্ত্রী বয়সে বড়, তবুও আল্লামা আসাদ বলতেন- তার চরিত্র এমন মনোমুগ্ধকর ছিল যে সে ছাড়া আর কোন নারীর দিকে আমি চোখ মেলেও তাকাতে পারতাম না। আল্লামা আসাদের ইতিহাস খ্যাত মানুষ হওয়ার পেছনে এলিসার অবদান আর বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই। যে প্রসঙ্গে বলছিলাম। ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য এমন একটি জিনিষ, যার সাথে মিল না হলে আপনার কখনোই আরেকজন মানুষের সাথে বছরের পর বছর ঘর করার কথা কল্পনা ও করা উচিৎ নয়। কারন, সময়ের সাথে সাথে শারীরিক আকর্ষণ ফুরিয়ে যায়। যা ২ জন মানুষকে ধরে রাখে তা হোল জীবনের অভিন্ন ও একমাত্র লক্ষ্যের মিল । এই খানে মিল হলেই সব মিল। কাশ্মীরের হাব্বা খাতুন, একজন ইতিহাসখ্যাত নারী হলেও তার বিয়ে হয়েছিলো সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রের একজন গোঁয়ার লোকের সাথে। যার কারনে নিজের জীবন প্রায় নরক সম হয়ে গিয়েছিলো। অবশ্যই, কোন মানুষকে কোন মানুষের সাথে মিলিয়ে ফেলা যাবে না। আপনার বোন একটা কাজ করেনি, বা আপনার মা একটা কাজ করতো না বলে আপনার বউ ও সেই কাজ করতে পারবে না, এই উদাহরণ গ্রহণযোগ্য নয়। সবাই আলাদা, চিন্তা ও লালাদা। অবশ্যই, মানুষটির ব্যক্তিত্বকে আপনার মূল্যায়ন করতে জানতে হবে। কঠিন ব্যক্তিত্তধারি মানুষের সাথে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যক্তিত্ব, পড়াশোনা কিংবা জীবনের লক্ষ্য নিয়ে উদাসীন মানুষের আর যাই হোক, মনের মিল কিন্তু সুদূর পরাহতই। ধরুন, আপনার মনটা একটা প্রাসাদ, এই প্রাসাদে যদি নোংরা মনের কেউ থাকে সে প্রাসাদ কে নোংরা করবেই। ভালো মনের মানুষ আরও সুন্দর করে গুছিয়ে রাখবে। আমাদের বাহ্যিক সত্তা অন্তরের সত্তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। আর নারীদের ক্ষেত্রে তার দাম্পত্য জীবনের সাফল্য নির্ভর করে ব্যক্তিত্ব আর স্বতন্ত্র নারী স্বত্বার উপর। স্বামী যদি সেই স্বতন্ত্র সত্তার মূল্যায়ন না করতে পারে , আমার কাছে মনে হয়, সে কিছু বস্তুগত জিনিষের জন্যই পৃথিবীতে বাঁচে, তার আত্মার চাওয়া আর প্রতিভার মূল্যায়ন কখনোই পায় না।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ
আমার ডিভাইস ভাবনা

আমার ডিভাইস ভাবনা

২২ জানুয়ারী ২০২৪

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

২৮ ডিসেম্বার ২০২৩

আমার বাচ্চা খায় না!!????

আমার বাচ্চা খায় না!!????

২৪ ডিসেম্বার ২০২৩

আক্রমনাত্মক দাওয়াহ!!!

আক্রমনাত্মক দাওয়াহ!!!

১৩ ডিসেম্বার ২০২৩