
স্বামীর সাফল্যে স্ত্রীর কর্তব্য
এই নামে ডেল কার্নেগী এক খানা বই লিখেছিলেন। অনেক ছোটবেলায় পড়েছি বইটা। সম্ভবত আব্বু কোন একটা উপলক্ষে আম্মুকে দিয়েছিলেন।
কতো নাটক কতো সিনেমায় এই ডায়ালগ কতবার শুনেছি- একজন পুরুষের সাফল্য এবং ব্যর্থতার পেছনে একজন নারীরই অবদান ।
নজরুল ও কবিতা লিখেছেন- কোন কালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি, শক্তি দিয়েছে সাহস দিয়েছে বিজয়ী লক্ষ্মী নারী!
আসলে স্বামীর সাফল্যকে এক হিসেবে স্ত্রীর সাফল্য হিসেবেই দেখা হয় আমাদের সমাজে। এমন শিক্ষা নিয়েই আমরা বড় হই যেন স্বামীর সাফল্যে সবেচেয়ে বেশী ভূমিকা পালন করতে পারি।
কিন্তু ছেলেরা কি কখনো মেয়েদের সাকসেসের কথা ভাবে? নিজের শখ, প্যাশন, ক্যারিয়ারকে যতোটা প্রাধান্য দেয়, ঠিক অনুরূপ প্রাধান্য কয়টা ছেলে দেয়!
এক দম্পতির কথা জানি, যাদের মধ্যে ছেলেটি বেশ সাকসেস জীবনে। তার শখে বউ কখনো বাঁধ সাধেনি। কিন্তু ছেলেটা বউয়ের কোন ইচ্ছার মর্যাদা দিত না। এক পর্যায়ে মেয়েটা এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের জন্য ছেলেটাকে দায়ী করলে ছেলেটা বলল- আমি তো তোমার সুখের জন্যই ক্যারিয়ার গড়েছি। এটা আমার প্যাশন ছিল না বেশী একটা!
এভাবেই ইমোশনাল ব্ল্যাক্মেইল করা যায় খুব সহজেই। কারন, মেয়েদের মাথায় একটা বিরাট ঋণ থাকে। সেটা হোল অনেকটা- যার নুন খাই, তার গুন গাই এর মতোই।
তাই, কখনোই নিজের জীবনের অপূর্ণ চাওয়ার কথা বলা যায় না। দামী শাড়ি, গহনা নিয়েই আত্মতৃপ্তিতে ভুগতে হয়, আর স্বামীর স্থুতি কীর্তন করতে হয়।
তারমানে এই না যে আমি বলছি - স্বামীর গুণগান করা যাবে না, বা সাফল্যে সঙ্গী হওয়া যাবে না!
তবে স্বামীর ও এতোটুকুই দায়িত্ব থাকে নিজের স্ত্রীর সাফল্যের জন্য নিবেদিত হওয়া। সাহায্য, আর সাফল্যের আকাঙ্ক্ষার দ্বায়ভার যেন একজনের ঘাড়ে না থাকে।
আরেক সরকারী চাকুরে দম্পতির কথা জানি। একই মন্ত্রনালয়ে কাজ করেন। অথচ, স্ত্রী স্বামীর চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। কিন্তু ২ জন বাসায় ফিরে মহিলাটা জলদি পাঁক ঘরে যান। স্বামীকে চা করে দেন, স্বামী আরামে সোফায় বসে টি ভি দেখে , আর তার ভাই বোন বাবা মার জন্য বিকেলের নাশতা বানাতে বলে। স্ত্রী কাপড় গুছিয়ে রাখলে ইচ্ছা করে এলোমেলো করে দিতে ব্যাপক মজা পান ভদ্র লোক, আর ঘনঘন বাসায় মেহমান এনে স্ত্রীর চাকরী জীবনের উপর আক্রশ ঝাড়েন।
চাকুরীজীবী নারী যখন ক্লান্ত কিংবা বিধ্বস্ত থাকেন, তখন সে যা করছে তা যে অন্যায় তাই বুঝাতে স্বামী যেন খড়গহস্ত। ইচ্ছাকৃত বিশৃঙ্খলা করে বুঝিয়ে দিতে চান - তোমার কারনেই আজকে সংসারের এই অবস্থা!
অথচ, শেয়ার করে কাজ করে যে সুন্দর সংসার করা যায় এটার উদাহরণ পশ্চিমা কিংবা কোরিয়ান মুভি গুলোতে দেখা যায়। my little bride নামক কোরিয়ান ছবিতে দেখা যায়- স্বামী স্ত্রী ২ জন একসাথে পাস্তা রান্না করে খেয়ে দেয়ে বাটি থালা বাসন একসাথেই ধুয়ে ফেলছে।
কিছু গৃহস্থ কাজ , বা টুকটাক সাহায্যে হাত খসে পড়ে না, খসে পড়ে না স্বামী ট্যাগ ও!
অনেকে আছেন, এক গ্লাস পানি ও ঢেলে খেতে পারেন না। বান্ধুবির বোনের জামাইকে একদিন পানি ঢেলে খেতে বলেছিল আপু, ভাইয়া সেই পানি ঢালতে যেয়ে এক জগ পানি ফেলে দিয়েছিলেন। এমনকি একদিনের জন্য বাবার বাড়ি ও যেতে দেয়না ভাইয়া। কারন, রান্না করে গেলেও উনি খাদ্য গরম করতে পারেন না।
আপনি হয়তো ভাবছেন আমি সাফল্য বলতে ক্যারিয়ারকে বুঝাচ্ছি।
কিন্তু একটা মেয়ের সাফল্য শুধু ক্যারিয়ার হিসেব করলে হয়না। একজন স্বামী তার স্ত্রীকে একজন সফল মা হতে সাহায্য করতে পারেন সন্তানদের সামনে তার সাথে সম্মানের ভাষায় কথা বলে, একজন স্বামী তার স্ত্রীকে সাহায্য করতে পারেন সফল হতে তার বাতলে দেওয়া সাংসারিক উন্নতির ক্ষেত্রে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা মূল্যায়ন করে, নিজের বাবা মা আত্মীয় স্বজনের অন্যায় কথা, চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের জগদ্দল বোঝা সরিয়ে দিয়ে, একজন স্বামী তার স্ত্রীর সাফল্যে এভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন, যখন সে সমাজের কাজে আত্মনিয়োগ করে তাকে হেয় না করে, উৎসাহ দিয়ে!
কিন্তু, বিষয়টা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে- জীবনে শুধু স্বামীর সাফল্য হলেই হবে, মেয়েটির কোন চাওয়া পাওয়ার হিসেব জানার দরকার নেই!
কিন্তু যে মেয়েটি নিজের জীবনে সফল সে সফল একজন মা হিসেবে, একজন গৃহিণী হিসেবে, একজন চাকুরীজীবী, ডাক্তার, শিক্ষক হিসেবে। আর এইসব সফল স্ত্রীদের সাফল্যের পিছনে স্বামীর সহযোগিতা কতোটুকু থাকে বিবাহিতরাই ভালো বলতে পারবেন।
লাস্ট একটা ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে শেষ করছি- উরুগুয়ের এক মহিলা কবি দেলমিরা আগুস্তিনি। এই কবি যাকে বিয়ে করেন, সেই তার কবিতা লেখার পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাড়ায়। তালাক চেয়েছিল মেয়েটা। কিন্তু স্বামী তালাক দেয়নি। দেলমিরা কে হ... করে নিজে ও আত্মহ... করে।
দেশে দেশে এসব কাহিনীতে রক্তাক্ত হয়ে আছে অনেক দাম্পত্য জীবন।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)