
আগে প্রায় ই অনেকে খোঁচা মেরে (পোক) জ্বালাতন করতো । কেউ কেউ আবার ইনবক্সে এসে অযথা বকবক করতো।
-আপু, আপনার ছবি নাই কেন?
-এইটা কে ফেক আইডি!
- আপনি এতো গাইয়া কেন?
-আপনি একটা খ্যাঁত
- আপনার মনেহয় চেহারা মোটেও সুন্দর না, নাহলে প্রোফাইল পিকচার দেন না কেন?
- আপনি একটা বর্ণচোরা , জানেন তো বর্ণচোরা কাকে বলে? যে নিজের রং লুকায়, চেহারা লুকায়
আপনি যা খুশি ভাবতে পারেন । নিজেকে দুষ্টু লোকের নজর থেকে আড়াল করলে যদি কেউ , খ্যাত হয় , বর্ণচোরা হয়, কিংবা কেউ যদি ভাবে ফেক আইডি তাতে কারো কিছু যায় আসা উচিৎ নয়।
সেদিন এক ছোট বোনের আইডি তে এক কল বয়ের মেসেজ আসলো। সে আমাকে লিঙ্ক দিয়ে বলল- আপু , দেখেন তো এই আইডি থেকে আমাকে খুব বাজে বাজে মেসেজ দিচ্ছে । লিঙ্কের আইডিতে ঢুঁকে তো আমার মাথা নষ্ট হওয়ার যোগাড় ।
হিজাবি, শার্ট প্যান্ট পড়া, শাড়ি পড়া কোন ধরনের মেয়ের ছবি ই বাদ দেয় নি বদমাশ টা। সব গুলো ছবিকেই এডিটিং করে, নিচে ওই আপুদের সম্পর্কে উল্টা পাল্টা অশালীন মন্তব্য ( ওই সব কথা কোথাও লিখার ভাষা আমার জানা নেই, আপনারাই আন্দাজ করে নেন) ।
দেখে আমি কিছুটা আতকে উঠলাম । যেই হিজাবি আপুটার হাসিমাখা ছবিটির উপরে এতো বাজে একটা কথা লিখা, তার নিচে ৫০০ লাইক, ২০০ শেয়ার। হয়তো সেই আপুটা কস্মিনকালেও ভাবতে পারছেনা যে তার ছবি নিয়ে ভার্চুয়াল জগতের এক প্রান্তে এতো মানুষ নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে।
তাই বোন আপনাকেই বলছি, আপনার সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে, আপনি কি আপনার থাকবেন নাকি পাবলিক প্রপার্টি হয়ে যাবেন? হয়তো আপনার ওয়াল এ আপনাকে সবাই সুন্দর , মিষ্টি কিউট বলবে, ১০০/১৫০ লাইক পাবেন হয়তো। কিন্তু এই জগতেরই আরেক প্রান্তে কিছু দুষ্টু লোক আপনার অঙ্গ প্রতঙ্গ নিয়ে অশ্লীল কথার তুবড়ি ছোটাবে । ৫০০ হাজার লাইক পড়বে , আপনাকে নিয়ে ভার্চুয়াল জগতে অশ্লীল কথার সয়লাব হয়ে যাবে। হ্যা! এটাই বাস্তবতা। তাই , ফেবুতে নিজের যে কোন ছবি ব্যাবহারের আগে ১০১ বার ভেবে দেখু...। আপনার এই ছবি দিয়ে বেশ কিছু মানুষ ব্যাবসা করবে। ফটোশপ এ এডিট করে আপনার সুন্দর মুখশ্রী কে অনাবৃত কোন দেহে জুড়ে দেওয়া হবে। আপনার প্রোফাইল পিকচারে নিজের ছবি দেওয়ার আগে একটি বার ভাবুন।
আমরা যারা বিশেষ করে (মেয়েরা) প্রপিকে নিজেদের ছবি ব্যবহার করি, তারা একটা কথা জানলে রীতিমতো আঁতকে উঠবেন যে শধুমাত্র হিজাবি আপুদের ফেস কালেক্ট করে বিভিন্ন পর্ণ পেইজে তাকে নিয়ে খুব বাজে ভাষায়ও মন্তব্য করা হয়। সেসব পোস্টে হাজার হাজার লাইক পড়ে। অনলাইনের আরেক প্রান্তে আপনার ছবি নিয়ে নোংরা কথার খেলায় মাতে কিছু মানুষ! আর কমেন্টে থাকে অশ্রাব্য ভাষা- কি মাল! চিড়িয়া! হট! আরও বলার অযোগ্য অনেক কথা!
বড় বড় স্কিনের মোবাইল, ট্যাব সবার কাছেই আছে এই যুগে। আপনি জেনে অবাক হবেন, আপনার দেওয়া প্রপিক সেভ করে রেখে অনেকে মোবাইলে রাত দিন জুম করে আপনার ফেসকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে! জানি, ফেবু মানেই ফেসের ছবি সম্বলিত যায়গা হওয়ার কথা। কিন্তু সবার হাতে হাতে নিজের ফেসকে পাবলিক প্রপার্টি বানানো অযৌক্তিক!
পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত মানুষটাও নিজের চেহারা দেখে ভাবে- সে সুন্দর! আসলেই কিন্তু সে সুন্দর! পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের চেহারায় কোন কোন সুন্দর দিক আছে। মানুষ নিজেকে সুন্দর ভাবতে, সুন্দর থাকতে পছন্দ করে। আর সেই সাথে সুন্দরের স্বীকৃতিটাও মানুষের কাছ থেকে পেতে চায়! এটাতেই নিজের সার্থকতা মনে করে।
কিন্তু আসলে এই সুন্দর হওয়াতে মানুষের নিজের কোন ক্রেডিট নেই। ক্রেডিটটা একমাত্র আল্লাহ্ তায়ালার। এমনকি আমরা কিছু রান্না করলে সেটা মজা হলে রাঁধুনিকে ক্রেডিট দেই। রাঁধুনির কিছুটা ক্রেডিট থাকলেও মুল কৃতিত্ব আল্লাহ্ তায়ালার! কারন, তিনি এইসব মজার সবজি, গোশত না সৃষ্টি করলে রান্না তো একটা স্বপ্নই থেকে যেতো।
মানুষ সুন্দর করে একটা রুমাল ভাঁজ করতে পারলেও সেটা মানুষকে দেখাতে চায়। এটাই স্বাভাবিক! সে যায়গায় নিজের সৌন্দর্য লুকিয়ে রাখা নিশ্চয়ই একটা বড় পরীক্ষা!
বিশ্বাস করুন, ফেবুতে ছবি না দিলে সামাজিক সম্পর্ক এতোটুকুও বাঁধা গ্রস্থ হওয়ার কথা নয়।
যদি রেডিওর আরজে ছবি ছাড়া মানুষের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে, লেখিকা যদি মুখ না দেখিয়েই লিখতে পারেন, আমরা যদি আগের দিনের লেখকদের না দেখেই ওনাদের লিখা পড়ে অনুপ্রাণিত হতে পারি, তাহলে কি নিজেকে পাবলিক প্রপার্টি বানানোর কোন মানে আছে?
তবে নিজের সৌন্দর্যকে ঢেকে রাখাও একটা বড় পরীক্ষা
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)