
টাইমসের একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম। আজ ছাত্রীর কাছে তার বান্ধুবির একটা ঘটনা শুনে বারবার মনে প্রশ্ন জাগছে । ইজ শি মম এনাফ?
মেয়েটা প্রথম প্রথম সুন্দর মতোই ওড়না পড়তো, চপলা আর উচ্ছল , একটু চঞ্চল বলেই মা একটু রাগ হতো, আর ওড়না নিয়ে বকা ঝকা করতো। এরপর কয়েকদিন পর মেয়ের মাথায় ভূত চাপল। সে এখন সাইডে ওড়না পড়ে, একদম এক পাশে। মা যতো রাগারাগি করে , তার মাথায় একটা ঘাড় তেরামি ভাব চলে এসেছে। যদিও মা সন্তানকে ভালোবাসে দেখেই শালীনতা শিখাতে চান।
আমরা কীভাবে বড় হয়েছি! আমাদের আম্মু অবশ্য কখনো কোন ব্যাপারে বকা ঝকা করেনি। পর্দা করা শিখিয়েছেন একদম ছোট বেলায় । অনেক রকম ছোট বড় অ্যানালাইতিকাল তত্ত দিয়ে। তাই এই ধরনের ঘাড় তেরামি কোনদিন ও মাথায় ভর করেনি।
আর প্রাতিষ্ঠানিক দ্বীনি শিক্ষা তো ছিলই।
মেয়েটা এই বয়সেই একা একা ফেবু খুলে ফেলেছে। মা বুঝতে পেরে আচ্ছা মতো মাইর দিলেন। এমন মার যে মুখে বিশাল একটা দাগ হয়ে গেছে রক্তের । হাত , পিঠ কিছুই বাদ যায়নি।
এখন মেয়ের মাথায় ভূত উঠেছে, সে জমানো টাকা দিয়ে মোবাইল কিনে ২৪ ঘণ্টা ফেবু চালাবে। সে দেখতে চায় তার মা কি করতে পারে!
একধরনের প্রতিযোগিতা, খারাপ হওয়ার। কখনো কখনো শাসন করা হয় ভালোর জন্য , অথচ , হয়ে যায় হিতে বিপরীত।
আসলে, আমরা খালি চোখে যা দেখি সমাজটা তার পুরা উল্টা চলছে। এখন কিশোর কিশোরী সন্তানদের জন্য তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু মা বাবা।
আর প্রযুক্তি এতো বেশী ফাস্ট হয়েছে যে, সন্তান যে কখন চোখের পলকে বখে যাবে কেউ ভাবতেই পারে না।
এই জন্য, সন্তানকে দোষ দেওয়ার আগে মা বাবাকে নিজেদের অবস্থান দেখতে হবে। যতো দূরত্ব হবে ততোই লুকোচুরির প্রবণতা বাড়বে, বাজে জিনিষের প্রতি ঝোঁক বাড়বে। সত্যিকারের মা সেই, যে সন্তানকে খারাপ জিনিষ থেকে বাচাতে সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ গড়ে তুলে।
এই তো কিছুদিন আগে সেন্ট্রাল মসজিদে এক মা ছেলে দেখলাম। পিজি তে এসেছেন ছেলে , মা কে ডাক্তার দেখাতে। ছেলে ডিইউ টিচার, পুরা হুজুর , পাঞ্জাবি জুব্বা পড়া, শান্ত চেহারার মানুষ। আসরের সময় হয়েছে দেখে ডাক্তারের কাছে না যেয়ে মা কে নিয়ে সি এন জি দিয়ে সোজা মসজিদে আসলেন।
মা কে মহিলাদের নামাজের ঘরে দিয়ে ছেলে নামাজ পড়তে গেলেন। মহিলা বসে নামাজ পড়তে পারেন না। একটা চেয়ার চাইলেন। আমি বাহিরে যেয়ে নিয়ে আসলাম। অনেক দুয়া করলেন, আর বিভিন্ন কথা বললেন। নামাজ শেষে ছেলে মা কে ধরে ধরে আবার রিক্সায় তুলে পিজি তে নিয়ে গেলেন।
মহিলা যে বেশ সুখী তার কথায় ই বুঝেছি। এসব দৃশ্য চোখে অপার্থিব শান্তির যোগান দেয়।
আপনি কি চান এমন সুখী মা হতে? বুঝতেই পারছেন - এই মা তার ছেলেকে কেমন নৈতিকতা শিক্ষা দিয়েছেন।
হুজুর হয়েছেন তাতে কি?
তাও তো ঢাবি শিক্ষক। ঢাবি শিক্ষকের মা তিনি। সেই সাথে সন্তানের সম্মানে সম্মানিত একজন মা।
আপনার সন্তান প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠে, অথচ ফজরের নামাজ পড়ার শিক্ষা তাকে দেন নি।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াচ্ছেন, বড় ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন বলে, অথচ নৈতিকতা কি শিখছে তা নিয়ে ভাবছেন না।
কেউ কেউ হয়তো দ্বায় সারা একটা হুজুর রেখে দিচ্ছে, কুরআন শরীফ একবার পড়লেই ধর্মীয় শিক্ষার ইতি টেনে দিচ্ছেন।
ভালো খারাপ শিক্ষা দেওয়ার দরকার আপনার নেই। তাহলে বছরে একদিন মা দিবস পালন করা সন্তানকে আর দোষ দিয়ে কি লাভ!
শুনেছি সরকার নাকি বয়স্ক বাবা মার দায়িত্ব বাধ্যতামূলক করেছে সন্তানের উপরে।
শুধু ভাবি- বিবেকের আদালতটাই তো বড় তাই না?
বিবেকে যদি ডাক না দেয়, এসব আইন কি কাজে আসবে? আর যে ভালোবাসায় শর্ত থাকে সেটা কি প্রকৃত ভালোবাসা? এরচেয়ে যেই ভালোবাসা মন থেকে উতসরিত তাই কি বড় না?
আর আইন করে নাহয় বাবা মার দায়িত্ব সন্তানের কাঁধে তুলে দিলেনই, কিন্তু এরপর?
সন্তান যদি গালি দিয়ে ২ মুঠো খেতে দেয় , সেটা কি খুব ভালো হবে?
এটাই কি বাবা মার প্রাপ্য?
এতো কষ্ট করে যেহেতু লালন পালন করছেন ই, একটু নৈতিকতা, ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা দিয়েই দেখু..., এই সন্তান ইহকাল পরকালে ছায়া দেয় কিনা!
জানি, আপনার অনেক অবদান। যার কোন কুল কিনারা নেই, কোন হিসাব নেই সন্তানের প্রতি আপনার মায়া মমতা, দয়া ,আর সহানুভূতির। এটুকু তো করতেই পারেন , নিজের আর নিজের তনয় তনয়ার মঙ্গলে!
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)