উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)

ফুল বালিকা

ফুল বালিকা
-ভাইয়া! ফুল নিবেন?   কুলসুম এসে খুব আবদারের সুরে ফুল কিনার আবেদন করে। কিন্তু ফুল কিনে কাকে দিবো সেটা একটা চিন্তার বিষয়। যূথী অবশ্য ফুল খুব পছন্দ করে। পাশে দাড়িয়ে আছে ও। ওর আবার একটা শুভ সংবাদ আছে। বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এতো সাত পাচ না ভেবে ফুলগুলো কিনে যূথীকে দিলাম। কিন্ত, কিঞ্চিত আগ্রহ হোল, কুলসুমের লাভ লোকসানের খবর নিতে।   - আজ তোর কয় টাকা লাভ হয়েছে?   - এখনো গুনি নাই   - কয় টাকার ফুল কিনে আনছিস?   - ৫০ টাকায় ৫০ টা   - তো আমার কাছে যে ১০ টা বিক্রি করলি। তাতেই তো টাকা উশুল!   এবার কুলসুম টাকা বের করে গুনতে থাকে। ওর গুনার স্টাইল দেখে হাসি পায় আমার।   - ভাইয়া! ৫০ টাকার সাথে ৪০ টাকা যোগ হলে কয় টাকা হয়?   - ৯০ টাকা!   পাশে দাঁড়ানো সাব্বির কেন জানি কুলসুমের দিকে খুব লোভাতুর দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে আছে। আমি একটু অবাক হলাম। জানি, সাব্বিরের স্বভাব চরিত্র খুব একটা সুবিধার না। অনেক উল্টা পাল্টা নেশা ওর আছে , তার মধ্যে নারীর প্রতি আসক্তি টা একটু বেশী। পূর্ণ বয়স্ক মেয়েদের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করা ওর খুব বাজে অভ্যাস। যেটা করতে যেয়ে অনেক জরুরী কাজে ওর মনোযোগ থাকে না। তাই সাব্বিরকে কোন স্টাডি গ্রুপে রাখতে আমি আগ্রহী হইনা। কিন্তু এবার ভাগ্যক্রমে ও আমার গ্রুপে পড়েছে।   বেশী অবাক হলাম এই ভেবে- আচ্ছা! কুলসুম তো বাচ্চা মেয়ে। বড় জোর আট বছর বয়স! হাফ হাতা গেঞ্জি আর প্যান্ট পড়ে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ায়। ওর মধ্যে নারী সুলভ কিছুই নেই। তাও ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন!   আমার কেমন জানি অস্বস্তি লাগতে শুরু করলো। সাব্বির বলল- কীরে কুলসুম! তুই কি খালি সকালেই ফুল বেচস? সন্ধ্যায় এদিকে বেচস না?   কুলসুম মাথা নাড়ায়। সে এখানে আসে না সন্ধার পর। সাব্বির আবার বলে- শুন! আসল সময় তো সন্ধ্যা বেলা! এখানে সন্ধ্যায় প্রচুর মানুষ আসে। এদিকে আসবি সন্ধ্যার পরে। তোর ২০০ টাকার ফুল বেঁচে দিবো নে।   কুলসুম খুশী হয়ে যায়। আমার তাও মনে মনে কেমন খচখচ লাগে। সাব্বির আমাকে বলে   - বুঝলি মুসা! পিচ্চির অনেক লাভ হবে সন্ধ্যার পর ফুল বিক্রি করলে।   আমি অন্যমনস্ক। যূথী লাইব্রেরী যাবে, আর সাব্বির যাবে কার্ড খেলতে। আমি যূথীর সাথে যাওয়ার চিন্তা করে সাব্বিরের থেকে বিদায় নিলাম। কুলসুম তখনো আসে পাশে ঘুরঘুর করছে। যেতে যেতে যূথী বলল- একটা জিনিষ আমার ভালো লাগে না   - কি ভালো লাগে না?   - আমাদের সমাজটা যা খারাপ হয়েছে! এই মেয়েটা কে ওর বাবা মা এভাবে ছেড়ে দিয়েছে কেন? তাও এতো অল্প বয়সে? ছেলেরা যা খারাপ! মেয়েটার যদি কোন ক্ষতি কেউ করে!   - কিছু করার নেই!   - তারপরও ওদের নিরাপত্তা কতো টুকু?       আমি নিজেও যে ভাবিনি ব্যাপারটা নিয়ে তা নয়। কিন্তু আমি তো নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে কিছু করতে পারবো না। ওর বাবা মা কে বুঝাতে গেলে উল্টা ঝারি খাওয়ার চান্স আছে।       লাইব্রেরী থেকে হলে ফিরে খেয়ে দেয়ে একটা ঘুম দিলাম। ঘুম তো ঘুম। মরার ঘুম। উঠে দেখি মাগরিবের সময় শেষ হয় , হয়।       তাড়াতাড়ি নামাজ পরে গায়ে হাওয়া বাতাস লাগাতে বের হলাম।       আজকে ক্যাম্পাস তুলনামূলক অনেক ঠাণ্ডা। লোকজন নেই বলতে গেলে। আমার আবার নির্জন যায়গা দিয়ে ঘুরতেই ভালো লাগে। গাছের ছায়ায় আর অন্ধকারে অনেক কিছুই দেখা যায় তো যায় না।   একটা গাছের দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম।   শিশু কণ্ঠের গোঙানির আওয়াজ, কণ্ঠটা ও কেমন পরিচিত পরিচিত।   আরেকটু সামনে যেয়ে পিছন থেকে মোবাইলের লাইট এর আলো আওয়াজের দিকে ফেললাম। এক বালতি গোলাপ ফুল মাটিতে পরে আছে। সাব্বির একটা বাচ্চা মেয়েকে পিছন থেকে শক্ত হাতে জাপটে ধরে চাপাচাপি করছে। লাইটের আলো পরতেই সাব্বির মেয়েটা কে ছেড়ে দিলো। ভয়ার্ত চেহারায় মেয়েটা ঘুরে দৌড় দিলো। সাব্বির কিংকর্তব্য বিমুর। মেয়েটা কুলসুম! ক্যাম্পাসের ফুল বালিকা কুলসুম। সবাইকে ফুলের সুবাস বিলাতে বিলাতে যার নিজের জীবনই হয়তো কখনো বাসি ফুলের মতো হয়ে যাবে। এভাবে কতদিন কতো সাব্বিরের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করবে এই নিষ্পাপ ফুল বালিকারা?

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ