ডিসক্লেইমার ঃ লেখাটা শুরু থেকে শেষ "আমাকে নিয়ে"। একটু পুরোনো লেখা। একটা দ্বিধায় লেখাটা পোস্ট করা নিয়ে সংশয় ছিলো। এই লেখার উদ্দেশ্য কোন রকম " colorism /shadism"এর চরিত্রচিত্রন নয়। আমি মনে প্রানে মানি-
"your impression entirely depends on your knowledge, skill, approach & personality. Skin color never defines the content of your character or identity"
চোখবুজে কল্পনায় এক পলক এঁকে নিন- শ্যামবর্ণ, কোকড়া চুল আর রাগী চেহারার একটা ছোট্ট মেয়ে, মুখের বাম পাশে আল্লাহ প্রদত্ত সবুজ রঙের একটা জন্মদাগ ।
ভালো নাম হুমায়রা, আদরের ডাকনাম "শাম্মু"। জন্ম বেড়ে ওঠা রাজধানীতেই। বুঝ হওয়ার আগেই তাহাদের চোখের ভাষা সীমারেখা টেনে দিয়েছিলো--- আমার বর্ণ আর বিউটিস্পট নাম দেয়া চেহারা নিয়ে কতদূর স্বপ্ন দেখতে পারবো আমি।
সঙ্গত কারনেই শৈশবের লালনীল ঝুরওয়ালা জামা পরে, রঙিন ফিতায় চুল বেধে - পুতুল খেলার বিকেলবেলা গুলো কাটতো ভাইয়ার সাথে ক্রিকেট খেলে। এরপর দড়িলাফ, হাড়িপাতিল, লুকোচুরি অথবা গানের কলির স্মৃতি টাও দুঃসহ হয়ে বুকে শেলের মতো বিঁধে ছিলো বহুদিন - তথাকথিত কতিপয় প্রতিভাবান পুং লিঙ্গের স্বকীয় চরিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বহুমাত্রিক ভাব প্রকাশ জনিত জটিল ধাধার একমাত্র সাক্ষী হওয়ার সুবাদে।
সেই থেকে একটু একটু করে ডুব দেয়া শুরু " আমার আমি" এর জগৎে। সমাজ যাকে নাম দেয় "ঘরকুনো"!
কৈশোর এ পা দিতে দিতেই আম্মুর ড্রইংরুমে সাজানো বইয়ের তাকের সবগুলো বইয়ের ঘ্রান আমার মতিষ্কের শীরায় উপশীরায়। সেই যে বুঝে ওঠার আগের অযাচিত চাহনীগুলো--- তখনো পিছু ছাড়েনি।
লিখছি একটু আধটু। কিন্তু, এতেও যদি ছাপ পড়ে যায় মুখের দাগটার--- সেই শংকায় কখনো বলা হয়নি কাউকে-- "এই যে আমার কবিতাটা!! পড়ে বলোতো কেমন হয়েছে?! " তবু লেখা জমছে!!!
সবে এইচ এস সি দিয়েছি। সাল ২০০৫।
ঐ যে বলেনা- "আমার মধ্যে প্রতিভা আছে, কিন্তু সুপ্ত! হিডেন ট্যালেন্ট!!!" -- সেরকমই অনেকটা!!
জীবনের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রথম ঝড়টা একটা মারাত্মক ঝাকুনী দিয়ে গেলো রাতারাতি। গল্প কিংবা নাটকের মত কতগুলো ঘটনা একটা টান দিয়ে শৈশবের দুঃখবিলাসী কালো মেয়েটাকে অনেক সাহসী বানিয়ে দিলো। ঘটনাটা বাবা সমতুল্য একজন প্রিয়জন এর অযাচিত প্রস্থান।
প্রথম লেখা ছাপা হলো জাতীয় দৈনিক এ তঁার স্মৃতিচারন নিয়ে। সর্বমহলে প্রশংসিত আর জীবনের প্রথম উপার্জন। এরপর সমান্তরালই কেটেছে জীবনের রেলগাড়ীটা। অর্জন হয়েছে, সার্টিফিকেট হয়েছে।
উঁচু উঁচু ভাবনার পাহাড়ে বাধঁাহীন আপনমনে চলছি।পারিবারিক, সামাজিক কিছু কারনে হতাশা যে আমাকে বশ করতে পারেনি, তা নয়। ডিপ্রেশনে পড়ে ঔষধ খেয়ে খাটের কোনায় বসেও কেটেছে কতক রাত। কিন্তু এই সময় গুলো জীবনের জন্য অনেক বড় শিক্ষা, শক্তি আর সাহসের বাতিঘর। ঠিক জয় করা বললে ভুল হবে - নিজের বিশ্বাস, বোধ, বাস্তবতা, সাহস আর শক্তিকে আরো দৃঢ় করতে এমন সময় পার করে আসতে হয় কিছু মানুষের৷
মাঝের দশটি বছরের অর্জন- অনেক বর্নাঢ্য একটা ক্যারিয়্যার- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা, কিছু ট্রেনিং, কোর্স আর লেখালিখির সামান্য কিছু সামাজিক স্বীকৃতি।
পরের অধ্যায়টায় --স্ত্রী এবং মা হিসেবে নিজেকে নতুন করে চিনতে পারার শুরু!!!
আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবানী- জীবন টাকে সহজ করে দিয়েছে একজন উপযুক্ত জীবনসঙ্গী দিয়ে।আলহামদুলিল্লাহ। প্রথম পুত্র সন্তান জন্মের পর শারীরিক কিছু জটিলতায় আই সি ইউ থেকে ফিরে গল্প শুনেছিলাম - সবার কি আশ্চর্য দুয়া ছিলো মহান রবের দরবারে ৪ দিনের ছোট শিশুটির মা কে ফিরিয়ে দিতে।
গড় আয়ু হিসেবে অর্ধেকের বেশী জীবনকাল পার করে ফেলেছি। জীবন গতিশীল। এখন এক থেকে ২ সন্তানের জননী। পথচলার বহু বাকি। অনেক স্বপ্নের হাতছানী। ২ টি ছোট ছোট পুত্র সম্তান কে জ্ঞান, গুন এবং গরীমায় অনেক বড় করার বাকি। এখন আর মুখের কালো দাগের ভয়টা আসেনা। তবে হঠাৎ ঔ মৃত্যুর খুব কাছাকাছি যেয়ে ফিরে আসাটা মাঝেমাঝে প্রবল হতাশা এনে দেয়। যাওয়াটা অবশ্যম্ভাবী। তবু এই সুন্দর সৃষ্টির মাঝে সৃষ্টিশীল হয়ে আরো কিছুদিন বেঁচে থাকার লোভটা খুব স্বার্থপর করে দেয় নিজের আগোচরে।
সরল স্বাভাবিক "আমি" র গল্পটা প্রতিদিন নতুন করে ঢেলে সাজাই। অনেক কিছু করার নতুন উদ্দ্যমে প্রতিটা নতুন সকাল যেন নতুন নতুন সাহস, যোগ্যতা আর সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয় । শুধু আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে সফলতার নিয়তে করে যেতে চাই সব সেইসব অর্জন যা কল্যাণকর।
নামের স্বার্থকতা বিচারে একজন বলেছিলো- প্রদীপের মত আলো জ্বেলে যেও শেষ বিন্দু নির্যাস টুকু পুড়িয়ে হলেও!! এই কালোয় আধার আসেনা, এই কালোয় আলো হয়ে থাকবে...
সবশেষে বিদায় নেবার আগে নিজের ছোট্ট ৪ টা লাইন লেখার লোভটা সামলানো গেলোনা---
"এ কোন রাত্রি গ্রাস করে নিলো
চন্দ্র রবির আলোকোদয়;
ভয় নাই তবু মৃত্যু যে ধ্রুব-
অদূরে নতুন সূর্যোদয়!!"
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)