উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)

সে... এডুকেশনঃ বোকার রাজ্যে বসবাস

সে... এডুকেশনঃ বোকার রাজ্যে বসবাস
চারটা গল্প বলিঃ
এক। ছেলে মেয়ে উভয়ে শিক্ষিত, পরিবারও। বিয়ের দুই সপ্তাহ পর ছেলে কর্মস্থল ইটালিতে চলে যায়। আরও মাসখানিক পর মেয়েটি বুঝতে পারে, সে সন্তানসম্ভবা। ছেলে আর তার বাড়ির লোক, সবার সন্দেহ, মাত্র দুই সপ্তাহে সন্তান ধারণ যেহেতু অসম্ভব, এই সন্তান আগের কোন অনৈতিক কাজের ফল। একসময় সন্তান জন্মের আগেই মেয়েটি বাবার বাড়ি ফেরত আসে। সন্তান সেখানেই হয়।
দুই। ইউনিভার্সিটি ক্যম্পাসে বুম মাইক্রোফোন হাতে এক সাংবাদিক প্রায় পনরজনকে জিগেস করলেন, মেয়েদের এই ব্যপারটা আসলে কি? এমনকি মেয়েরাও কাল্পনিক কিছু কথা বলেছে। এ দিয়ে নাকি 'শরীর পবিত্র হয়' টাইপ।
তিন। মা বলেছেন, এসব কাউকে বুঝতে দিতে নাই। মেয়েটা তাই লুকাতো। প্রচন্ড ব্যথা, জামাকাপড়ের দাগ ইত্যাদি। একসময় ব্যথা ভয়াবহ হয়েছে। মা বলেছেন, 'হয়ই এমন। চিৎকার করবি না, বাপ ভাই আছে ঘরে'। সবাই বলেছে, এসবের জন্য ডাক্তার লাগে না, তাড়াতাড়ি বিয়ে দেন। একদিন জরায়ুমুখের সিস্ট ফেটে গেছে। মেয়েটা মারা যাবার পর সবাই কাঁদে, কেন মারা গেছে বলা বারণ।
চার। শরীরের মধ্যে অদ্ভুত অনুভূতি হয়, আমি ছেলে নই। এই অনুভূতিটা ছেলেটা কাউকে জানায় নি। দিনের পর দিন প্রতিবেশী এক ভাবী তাকে যন্ত্রণা দিয়েছেন। এটা এক হিজড়ার গল্প। সে অভাগা, কারণ অন্যদের পরিবারের সাথের স্মৃতি নাই। তার আছে। এগারো বছর পরিবারে কাটিয়ে তারপর মায়ের কান্না মুখ পেছনে রেখে সে হিজড়া পল্লীতে এসেছে।
আরও অনেকগুলো গল্প চেপে যাচ্ছি। বছরের পর বছর ধরে এগুলো অকারণ মন খারাপের কারণ হয়ে আছে।
জি, সে... এডুকেশন দরকার। জোরালোভাবে দরকার। হতে পারে, যেভাবে এখন হচ্ছে সেভাবে হওয়াটাতেই হাজারো ভুল আছে।
ছেলেরা কেন মেয়েদের বলবে? মেয়েরা নাই? আছে। কিন্তু মেয়েদের এইসব কাজ করতে বের হতে দিতে সমাজের আপত্তি আছে। সবাই সে আপত্তি পার হয়ে বের হয় না। আর শিক্ষিকারা? সরকারি স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষয়ত্রী বয়স্কা, ওই যে এক আর তিন নং গল্পের মায়েদের প্রজন্ম। বলবে, 'আহা আদিখ্যেতা, আহ্লাদ। আমরা কি শিখি নাই? জানেন...?'
তবু, এখনও সময় আছে। আপনি যদি ভাবেন, ওরা ভুল করছে। আপনি ঠিকটা করেন। দুইটা কাজ করবেন না শুধু। এক, এগ্লা লাগে না, এম্নেই শিখে যাবে, এটা বলবেন না। দুই, ছি ছি শরম, এসব বলতে নেই, এটা বলবেন না। নারী পুরুষের আভ্যন্তরীন অঙ্গবিন্যাস দেখিয়ে মানুষকে জ্ঞান দেয়া জরুরি, এবং ওই সব ছবি দেখে আর যা ই হোক, প্রথম রিপু জাগ্রত হয় না। হলে, দুনিয়ায় আগে সকল ডাক্তারদের হাতে হাতকড়া পরাতে হতো।
বাঙ্গালী পুরুষ ঘুষ খেলে ধর্ম যায় না, পর্ণ দেখলেও না, বাসে রাস্তায় মেয়েদের গায়ে হাত দেয়াও সহনীয়। গুলিস্তানে মেয়েদের ব্যক্তিগত কাপড় বিক্রি হয়, তাতে ভিড় করে দাঁড়ানোও দস্তুর। শুধু এ নিয়ে ছেলেমেয়েদের সচেতন করতে চাইলে গলায় ত্যাজ আসে, খামোশ! মহিলারা মসজিদে যেতে চাইলে ঈমান মাথায় উঠে আসে। কি আজব এক এই পুরুষত্বের ব্যখ্যা। শুধু এসবের মধ্যে অনেক কয়জন মানুষ আছেন এখনও, মাসে একবার এক প্যাকেট সম্ভ্রম কিনে এনে বউয়ের হাতে দেন, 'কাজের মেয়েটাকে দিও'। এই মানুষগুলো আছেন, তাই এখনও মেয়ে সন্তানদেের নির্বিচারে কবর দিতে হচ্ছে না। আলহামদুলিল্লাহ।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ