বিবিধ

কল্পলোকের গল্প নয়-১০

কল্পলোকের গল্প নয়-১০
পৌনঃপুনিক- [শেষ পর্ব]  কয়েকদিন সে বন্ধুদের ওখানে গেলনা। আবার যাওয়া শুরু করলো। এভাবেই কয়দিন যাওয়া এবং কয়দিন না যাওয়া ...... এ চক্রের মধ্যেই সে দিনাতিপাত করতে লাগলো।  কিছুদিন পরে জামানের বড়বোন লতাআপা রীপার কাছে গিয়ে বলল, ‘তুমি আমাদের বাসায় চলে আসো। হয়ত ও আবার ভালো হয়ে যাবে।'  রীপা ভীষণ কান্নাকাটি করে এবং তাকে বলে যে, ‘আমি এবার আর আব্বা আম্মার কথার বাইরে কিছু করবোনা। একবার করে তার খেসারত এখন দিচ্ছি......। আমি কিসের আশায় ওর সাথে আবার জীবন শুরু করবো......। যদি আজ আমার বাচ্চাকাচ্চা থাকতো তবে আমি মাটি কামড়ে সব কিছু সহ্য করতাম।' ব্যর্থ হয়ে লতা ফিরে এলো। এর কয়েকদিন পরে রীপা উকিল নোটিশ পাঠাল। জামান কোন উদ্যেগ নিলনা। ফলে যথাসময়ে তালাক কার্যকর হয়ে গেল। বিয়ের আগে ও পরে মিলিয়ে প্রায় ১৪/১৫ বছরের সম্পর্ক এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল।  এরও ২/৩ বছর পর পরিবারের পক্ষ থেকে জামানের জন্য আবার পাত্রী দেখা শুরু হল। কয়েক জায়গায় দেখার পর খুব দরিদ্র ঘরের একটি মেয়ে তারা পছন্দ করলো। মেয়ের বাবা বেঁচে নেই। খালার সংসারে আশ্রিতা। সবেমাত্র এস এস সি পাশ করেছে। এই মেয়েটির নাম লিপি।  লিপির সাথে জামানের বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের ক্ষেত্রে দুইবারই জামান তার পারিবারিক অবস্থানের বাইরে গিয়েছে। প্রথমবার অনেক ধনীর মেয়েকে বিয়ে করেছে। আর দ্বিতীয়বার খুব দরিদ্র ঘরের মেয়েকে বউ করে এনেছে।  এই বিয়েতে জামানের খুব একটা সম্মতি ছিলনা। পরিবারের ইচ্ছাকে মেনে নিয়েই সে এই বিয়ে করে। কোন এক রকম কাটছিলো জামানের নতুন সংসার। প্রথম প্রথম নতুন বউ তার স্বামীর খারাপ অভ্যাসগুলো নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য করেনি। সে নতুন পরিবেশ, সচ্ছল সংসার এই নিয়েই বেশ ভালো দিন কাটাচ্ছিল। কিন্তু বছরখানেক পরে লিপি কিছু কিছু অশান্তি শুরু করলো। সে দেখছিল যে তার স্বামীর আয় তার হাতে না এসে শ্বাশুড়ীর হাতে যায়। এটা সে কোনভাবেই মানতে পারছিলনা। এই ব্যাপারে তার মা, খালা এবং নানীও বেশ ন্যক্কারজনক ভূমিকা রাখে। লিপি যখন এসব নিয়ে ঝামেলা করে তখন তার শ্বাশুড়ীও তাকে দুইচারটা কথা শোনাতে ভুল করেনা। পরিবারের অন্যদের আচরণও তার পছন্দ হচ্ছেনা। ফলে সংসারে ঝামেলা লেগেই থাকে।  এইসব দ্বন্দ্বের ফল হল এই যে কেউই কারও কোন ইতিবাচক দিকগুলি দেখতে পেতনা। ঝগড়ার একপক্ষে বউ, অন্যপক্ষে বাবা-মা এবং পরিবারের অন্যরা মাঝখানে জামান অসহায়ের মত এইসব দেখত। তার স্বস্তির জায়গাতো একটাই............ বন্ধুদের আড্ডা।  সংসারে নিত্য ঝামেলা লেগেই আছে। এই অবস্থায় সে তার স্বামীকে উদ্বুদ্ধ করে আলাদা বাসা নেয়ার জন্য। উপায়ন্তর না দেখে পারিবারিক সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য জামান আলাদা বাসা নিতে বাধ্য হয়।  দেড়/দুই বছর কেটে গেল। একসময়ে সংসারে নতুন অতিথির আগমন ঘটলো। লিপি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিলো। মেয়ের বয়স যখন ৬/৭মাস তখন আবার জামান বউবাচ্চা নিয়ে মায়ের কাছে ফিরে আসলো।  কয়েকমাস সবাই ভালো থাকার পর আবার ঝামেলা শুরু হল। এবার পুরনো ঝামেলার সাথে স্বামীস্ত্রীর মাঝেও দন্দ্ব শুরু হল। ঝামেলার এক পর্যায়ে লিপি মেয়েকে নিয়ে মায়ের কাছে অর্থাৎ খালার বাড়ি চলে গেল।  জামান এখন নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছে। রীপার সাথে জামানের বিয়ের প্রায় দেড়/ দুই বছর পর তার বড়বোন লতা আপার বিয়ে হয়েছিল । সে এখন তার স্বামী, সন্তান, সংসার নিয়ে বেশ ব্যস্ত। তার ছোট দুই ভাইও যার যার সংসার নিয়ে আছে। কয়েক বছর আগে তার আব্বা মারা গিয়েছে। সংসারে শুধু সে আর তার আম্মা। জামান সকালবেলা অফিসে চলে যায় আর ফিরে অনেক রাত করে। ওদিকে লিপি তার এবং তার সন্তানের ভরণপোষণের জন্য আইনের সহায়তা নিয়েছে।  পারিবারিকভাবে একাধিকবার চেষ্টা করেও লিপিকে কেউ ফিরিয়ে আনতে পারেনি। তার একটাই কথা- ‘আমি আর ঐ সংসারে যাবনা।‘  লিপির মামলার রায় এখনও হয়নি। সবাই এখন এই রায়ের অপেক্ষায় আছে।  আর রীপা? জামানের দ্বিতীয় বিয়ের পরে পারিবারিক পছন্দে প্রবাসী একজনকে বিয়ে করেছে। এই স্বামীর সাথে সে-ও এখন প্রবাস জীবন যাপন করছে। লোকমুখে শোনা যায় সে বেশ ভালোই আছে। [ আমার চোখে দেখা এই ঘটনাটা আমি সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। পুরো ঘটনাটাই সত্যি। একেবারে জীবন থেকে নেয়া। শুধুমাত্র নামগুলি পরিবর্তন করে দিয়েছি।] 

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ