অনির্ধারিত

কল্পলোকের গল্প নয়-৮

কল্পলোকের গল্প নয়-৮
পৌনঃপুনিক-তিন স্ত্রীর অবস্থা দেখেই হোক বা অন্যকোন কারণেই হোক ধীরে ধীরে রীপার আব্বা বেশ নরম হলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে তার স্ত্রী মেয়ের সাথে গোপনে দেখা করে। আর বাবা হিসেবে তার কষ্টওতো কম নয়! তাই তিনি বিষয়টি মিটমাট করার একটি উদ্যেগ নিলেন। তিনি সস্ত্রীক মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে এসে মেয়ের সাথে দেখা করলেন। জামানের আব্বা-আম্মার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বললেন।  খাওয়া দাওয়ার পর এক পর্যায়ে উনারা জামানের বাবামাকে তাদের বাসায় যাওয়ার দাওয়াত দিলেন এবং বলে দিলেন,'আপনারা আপনাদের আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে আসবেন। আমাদের একে অপরের সাথে পরিচিত হওয়া দরকার।' এই উপলক্ষে রীপার আব্বা তাদের সকল আত্মীয়দেরকেও দাওয়াত দিলো।  যথাসময়ে দুইপক্ষের আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতিতে ঘরোয়াভাবে পারস্পরিক পরিচয় পর্ব হয়ে গেল। কিন্তু রীপার মামারা এই দাওয়াতে অংশ নেয়নি। এমনকি তারা কয়েক বছর জামানকে পরিবারের জামাই হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়নি।  এবার জামানদের বাসায়ও রীপার আব্বা-আম্মা আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে দাওয়াত খেয়ে গেলেন।  সব কিছুই ঠিকঠাক মত চলছিলো। কিন্তু রীপার আম্মার মনে শুধু একটাই দুশ্চিন্তা- তার মেয়ের ঐ বাসায় কষ্ট হচ্ছে! ওরা কি আমার মেয়েকে তার পছন্দের সব কিছু দিতে পারছে? যদিও তিনি নিয়মিত মেয়ের হাতখরচ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তবুও তার মন কোনভাবেই মানছিলনা।  আরও কিছুদিন গেল। রীপার আম্মা তার স্বামীর সাথে একটি পরিকল্পনা করলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী এবার রীপার আব্বা তার ছোট ভাইকে আলাদা বাসা ভাড়া করে দিলেন। আশ্বস্ত করলেন যে তার বাসা ভাড়া ও সংসারের সমস্ত খরচ তিনিই চালাবেন। ছোটভাই তার পরিবার নিয়ে পৃথক হয়ে গেল।  তার কিছুদিন পর রীপার আম্মা জামান কে বললেন, 'আমার কোন ছেলে নেই। তুমিতো আমার ছেলের মতই। তুমি রীপাকে নিয়ে আমাদের বাসায় এসে থাক। এত বড় বাসা আমরা মাত্র তিনজন মানুষ। তোমরা আমাদের সাথে এসে থাকলে আমাদের কাছে খুব ভালো লাগবে।' জামান বলল, 'দেখি!বাসায় বলি!! যদি আব্বা আম্মা রাজি হয় তাহলে আসবো।'  রীপা এবং জামান দুজনেই বাসায় এসে কথাটা সবাইকে বলল। প্রথমে জামানের আব্বা আম্মা আপত্তি করলেন। পরে তারা রাজি হলেন এই জন্য যে তারা যদি এখন এই বিষয় নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করেন তবে হয়ত ছেলে এবং বউ বিগড়ে যেতে পারে।  জামান বউ নিয়ে তার শ্বশুরবাড়িতে এসে থাকতে শুরু করলো। প্রায় প্রতিদিনই সে অফিস থেকে আসার পথে আব্বা আম্মার সাথে দেখা করতে যায়। রীপাও কয়েকদিন পরপর গিয়ে সবার সাথে দেখা করে আসে। জামানের আম্মা ও বোন রীপাদের বাসায় যায়, আবার রীপার মাবোন ও এই বাসায় বেড়াতে আসে........। দুই পরিবারের আন্তরিকতা বাড়তে থাকে। এভাবেই ওদের দিন বেশ ভালই চলে যাচ্ছিল।  জামান প্রতি মাসের বেতন পেয়েই আগে গিয়ে তার আম্মার হাতে সংসার খরচের টাকা দিয়ে আসত। এব্যাপারে রীপা ও তার মায়ের বেশ জোরালো সমর্থনও ছিল। ফলে অর্থনৈতিকভাবেও তার পরিবারকে কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি। এদিকে রীপার মা সবসময় জামানের পছন্দ অপছন্দ খেয়াল রাখেন। সে কি খায় কি খায়না সবকিছু তার নখদর্পণে। রীপার আব্বা বাজারে গেলে জামাতার পছন্দের জিনিসটা আগে কিনে নেন। জামানও শ্বশুরশ্বাশুড়ীকে নিজের বাবামায়ের মত শ্রদ্ধা, সম্মান করছে।  প্রায় বছর খানেক পর রীপার চোখে জামানের একটা সমস্যা ধরা পড়লো। সমস্যাটা বেশ গুরুতর।  জামান সব সময়ই বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতে পছন্দ করে। বিয়ের বহু আগে থেকেই সে এটা দেখে আসছে। বিয়ের পরও তার এই আড্ডা দেয়ার অভ্যাসটা ছাড়তে পারছেনা।  জামান অফিস থেকে ফেরার পথে মায়ের বাসায় যায়। সেখান থেকে আড্ডা সেরে বাসায় আসতে আসতে প্রায়ই দশটা এগারটা বেজে যায়। রীপা ওকে আড্ডায় যেতে বারণ করে। কিন্তু জামান এই কথাটি মানেনা।  কয়েকদিন পর রীপা একজনের কাছ থেকে জানতে পারল জামান ওর বন্ধুদের সাথে নিয়মিত মাদক সেবন করে। বুদ্ধিমতী রীপা প্রথমেই স্বামীকে কোন প্রশ্ন করলনা। কয়েকদিন সে পর্যবেক্ষণ করল।  তারপর যখন তার হাতে প্রমাণ আসলো এবার সে জামানের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলো তখন জামান সব অস্বীকার করলো। রীপা প্রমাণ দেখানোর পর সে দুঃখ প্রকাশ করলো এবং আর কখনও এসবের ধারেকাছেও যাবেনা বলে প্রতিজ্ঞা করলো।  রীপা বেশ খুশী। দুই পরিবারের কাউকে না জানিয়ে এতবড় একটা সমস্যার সমাধান সে একাই করে ফেলেছে!!! 

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)