বিবিধ

টুকরো কথন-৩

টুকরো কথন-৩
কি দিয়ে যেনো লেখা টা শুরু করবো ভেবে রেখে এখন তা বেমালুম ভুলে গেলাম! মনে করার চেষ্টা করছি,এই উসিলায় সকালের চা টা একবার ঠান্ডা হলো বটে,আবার হলে আর খেতে পারবো না। এটা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গেলো,প্রথমে ভুলে গেলাম এরপর চা ঠান্ডা হলো, আজকেও কি সব কিছু এলোমেলো যাবে?
মানুষ সব কিছুর নাম বা শিরোনাম চায়! দিন শেষে আজকের দিনটা কেমন গেলো এটার একটা নাম দেয়াটাও জরুরি কাজ,এর উপর ভিত্তি করে পরের দিনটা, পুরোটাই মানুষিক ব্যাপার তবুও জরুরি।
 
সাহায্যকারী খালা,প্রায় ২সপ্তাহ পর গ্রাম থেকে ফিরলেন৷ গতকাল রাত ১০.৩০টায় এসে দেখা করে গেছেন,কাজটা আদৌ তার আছে কি না চিন্তায় ছিলেন। আমি অনেকটা ভাবলেশহীন।
 
আসলে সাহায্যকারী কাউকে রাখার ব্যাপারে গত ৫বছর ধরেই আমি দ্বিধাহীনভাবে ছিলাম৷ কেউ একজন থাকলেই নির্ভরশীল হয়ে যাবো,কাজ জমবে, আলসে হবো ইত্যাদি! মায়ের বাসায় বুয়া নিয়ে প্রায়ই হাজারো তিক্ত অভিজ্ঞতা, কষ্ট কান্নাকাটি সাথে আশপাশের অনেক কিছু,এক রকমের জেদ চেপেই ছিলাম৷ সত্যি কথা বলতে,জেদ থেকে দারুন কিছুই হয়েছে,আলহামদুলিল্লাহ। নিজ হাতে সব রকমের কাজ শেষ করে অসম্ভব একটা আনন্দ পেতাম।
 
'সব কাজ শেষ ' এই একটা অনুভূতি ভেতরকে এতো নাড়া দেয়,আলহামদুলিল্লাহ। যেদিকেই তাকাতাম এটা আমার করা কাজ,এগুলো আমি করেছি এটা মনে প্রশান্তি দিতো,শারিরীক কষ্ট হলেও তা খুব মনে থাকেনি। ক্লান্তি লাগতো কিন্তু নিজেকে আবার সচল ও করতে পারতাম।
 
কিন্তু মানুষের জীবন তো,সব সময় একই রকম যায় না। সাহায্যকারী একজন কে রাখতেই হলো,এবং এরপর থেকে সেই অভিজ্ঞতা গুলো ফিরে আসছে। যে কাজ গুলো আমি সকাল ৮টার মধ্যে শেষ করেছি সেগুলো বেলা ১২/১টা পর্যন্ত জমিয়ে রাখতে হচ্ছে,প্রায় ই কোন না কোন সমস্যা,চাইলেও আমি হুটহাট কোথাও যেতে পারছি না ইত্যাদি৷ এই দু'সপ্তাহের ব্রেকে নিজেকে আরেকবার যাচাই করে দেখার সুযোগ হলো,নিজের সংসারের কোণা কোণায় আরেকবার হাত বুলানোর সুযোগ এলো। আস্তে আস্তে হলেও কাজ গুলো নিজেই গুছাতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ!
 
কতোবার গুগোল কে জিজ্ঞেস করি,থার্ড ট্রাইমেস্টার এ এই কাজ গুলো করা যাবে কি না কিভাবে করতে হবে ইত্যাদি। গুগল ও বলছে,এগুলো খুবই স্বাভাবিক কাজ একটু সচেতনতা নিয়ে করলেই হবে এবং এতে করে শরীর-মন সবই ভালো থাকে। বাচ্চাদের বাবাও সহোযোগিতা করতে শুরু করলেন,যদিও সে বারবার জিজ্ঞেস করতো,খালা কবে আসবে? আমি মনে মনে হাসতাম! মুখে বলতাম,"কেন কাজ টা করে তোমার ভালো লাগছে না? এই ঘরটা কতো সুন্দর করে ক্লিন করলে,তোমাকে কাজ করতে দেখে ছেলেটাও দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে নিজের খেলনা নিজেই গুছালো,বিছানা ঝেড়ে দিলো তোমাকে এটা সেটা এগিয়ে দিলো সব কিছু মিলিয়ে নিজের কাজ নিজে করাটা আনন্দের না?" সে তখন একটু চুপ করে মুচকি হাসতো। ছেলেকে বারবার বলতো,"এই নোংরা করবে না কিছু এগুলো ক্লিন করতে অনেক কষ্ট!"
বাসার কাজ,চাকরি, পড়াশোনা সাথে শরীরের নানান রকমের কষ্ট তবুও কাজ ফেলে রাখতে হয়নি,এই কয়দিন। আজ অফিস নেই,কাজের প্রেশার নেই সকাল থেকে তাই কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে!
 
বড়ই অদ্ভুদ সাইকোলজি মানব জাতির!
মান্না-সালওয়া খেতে ভালো লাগেনি,নিজেরটা নিজে করে খাবো৷ এরপর নিজের থেকে হয়েগেলো সবার,প্রশ্ন উঠলো,নিজেরটা করতে চাইছিলাম সবারটা তো না,সবারটা কেন একজনকে করতে হবে? সবারটা করতে সেই 'একজন' বাধ্য না এটা জেনেও বাড়লো বিপদ,মুখ বেজার। 'একজন' করবে না তো করবেটা কে? সেই 'একজন' ই বা তাহলে করবেটা কি? তার জীবনের কাজ কি? দায়িত্ব কি?
 
সব কিছুর সমাধানে আবার ইসলাম নিয়ে আসলেও সমস্যা,হাত-পা বাঁধা হয়ে যায়,সময়ের দোষ অমুক নিয়মের দোষ দিয়ে ছাড় পাওয়া যায় না,কিন্তু সেই 'একজনের' জন্য ইসলাম কে বেশি দেখলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি হয়ে যায়। বড়ই সংকটময় অবস্থা!
 
সেদিন দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ অবস্থা নিয়ে কথা হচ্ছিলো,স্পষ্টভাবে বুঝাই যাচ্ছে,এখন আর একজনের ইনকাম দিয়ে ২/৩/৪ জনের সংসার চালানো ব্যাপারটা রুপকথার গল্পের মতো হয়ে যাচ্ছে,পরিবারের প্রায় সবাইকেই ইনকামের দিকে যেতে হবে,হচ্ছে না হলে,টিকা থাকা দায়৷অন্তত হালাল ভাবে ইনকাম করার মানুষদের জন্য। মানুষ বাধ্য হচ্ছে এখন এভাবে ভাবতে,পরিস্থিতি বাধ্য করছে৷ এখানেও 'একজন' এর উপর সবার নির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ নেই যতোই দায়িত্ব তার হোক।
 
তেল ছাড়া রান্ধেন আর গরুর গোসত ভুলে যান,দেয়ালে পিঠ ঠিকই ঠেকে যাচ্ছে। এর মাঝে টিকে থাকার সব রকমের প্রচেষ্টাই করতে হয়। আংগুল একটা তুলে আর কয়দিন?
কে যেনো সেদিন ইনবক্সে জিজ্ঞেস করেছেন,দুপুর থেকে চা খাওয়া বন্ধ করলাম কিভাবে?থাকতে পারছি কিভাবে? সময় করে উত্তর দেয় হয়নি। কিভাবে পেরেছি আসলে অতো জানিনা,প্রথম প্রেগন্যান্সির সময়েও কফি পুরো সময় একদম বেবি হবার পরেও ৬মাস পর্যন্ত অফ ছিলো,শুধু চা সারাদিনে এক কাপ ছিলো। কোনদিন দুধ চা কোনদিন রঙ চা। এবার ও কফি শুরু থেকেই অফ,আর চা টা অনেক দেরিতে বন্ধ করতে হলো,আল্লাহ সর্বোত্তম সাহায্যকারী। মনে যে হয় না খারাপ লাগে না তা না,তবে এরচেয়েও বড় কষ্ট করতে হয় তা হলো,বমি। এই কষ্টের দিকে তাকালে চা কে কিছু মনে হয় না। এটাও একটা সাইকোলজির খেলা! যা আপনার জন্য অসম্ভব ছিলো চিন্তা করা তা এখন হাতের মুঠোয় পুরে রাখার মতো সহজ! এজন্যই ফিলোসোফি বলে,সহজ করে ভাবতে শিখুন। আরেকটু সুন্দর করে ভাবলে,আল্লাহ অনেকভাবেই বুঝিয়েছেন,
সহজ করে ভাবো,সুন্দর করে বলো আর সর্বোত্তম চিন্তা করো বাকীটা আমার দায়িত্ব! ?

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন
তিনকোণা শত্রু

তিনকোণা শত্রু

Women Express

৪ এপ্রিল ২০২৩

So, if you wishing...

So, if you wishing...

Women Express

১৫ মার্চ ২০২৩

আবেশ

আবেশ

Women Express

৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩