বিবিধ
প্রোষিতভর্তৃকা-১

যারা প্রবাস জীবন যাপন করেন তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, কত পরিশ্রম, কত ত্যাগের বিনিময়ে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে চেষ্টা করেন!!! পরিবারের সদস্যদের আরো একটু ভালো রাখার জন্য তারা এই কঠিন জীবন বেছে নিয়েছেন। তাদের এই কষ্টের কোন প্রতিদান কারও পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। বরঞ্চ কখনও কখনও তারা উল্টা আচরণ পেয়ে থাকেন যা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। তারপরেও হাসিমুখে তাকে সব কিছু মেনে নিতে হয়।
এবার আসি মুদ্রার অপর পিঠে। যারা তাদের প্রবাসী প্রিয়জনকে ছেড়ে থাকছেন তাদের অবস্থা কি? পিতামাতা সন্তানকে কাছে পায়না, সন্তান পিতার স্নেহ-শাসন ছাড়াই বড় হচ্ছে। অন্যান্য আপনজনেরাও তাকে বিপদে আপদে, প্রয়োজনে কাছে পায়না। আর স্ত্রী? তাকে সামাজিক পারিবারিক কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিছু ঘটনা, কিছু রটনা......... এভাবেই জীবন কেটে যায়। আমার এই লেখার উদ্দেশ্য হল প্রবাসীদের স্ত্রীদের কিছু ঘটনা তুলে ধরা। এই ঘটনা গুলোর সবগুলোই আমার দেখা নয়তো শোনা। সব ক্ষেত্রেই যে পরিবারের সদস্যরা দায়ী তা আমি বলছিনা ...... কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজেই দায়ী।
আমার এই লেখা কাউকে আঘাত দেয়ার জন্য নয়। আমি শুধুমাত্র আমার দেখা, আমার জানা কিছু নারীর সমস্যা তুলে ধরতে চাইছি এই লেখার মাধ্যমে। এটা শুধুমাত্র ঐ নারীর সমস্যা নয়। বরং পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যায় আজ রূপান্তরিত হয়েছে। আমি মনে করছি এই বিষয়ে আলোচনা হওয়া সময়ের দাবী।
সম্মানিত সচেতন ব্লগার ভাইবোনদের এই বিষয়ে তাদের অনুভূতি ও মতামত জানানোর জন্য অনুরোধ করছি।
ঘটনা-১
ভদ্রমহিলা আমার দূরসম্পর্কের আত্মীয়া। আমার খালার চাচাতো জা। আমি কখনও উনাকে দেখিনি। কিন্তু আমার খালা ও খালাতো বোনদের কাছে উনার অনেক গল্প শুনেছি। উনার নাম আমার জানা নেই। কারণ খালা যখন গল্প করত উনাকে ‘অমুকের বউ’ বা ‘অমুকের মা’ এভাবেই বলতেন। আর খালাতো বোনেরাও চাচী বলত। যার কারণে নামটা আমার অজানাই রয়ে যায়। ধরে নিই নামটা শায়লা। রূপেগুণে অতুলনীয়া। উনার বিয়ে হয় এক প্রবাসী পাত্রের সাথে। প্রবাসী পাত্র পেয়ে উনার পিতামাতা বেশ খুশীমনেই তাকে বিয়ে দেন। পাত্রের সংসারও বেশি বড় নয়। তিন ভাই ও দুই বোন............ বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। আর আছে বৃদ্ধা মা।
বিয়ের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই স্বামী প্রবাসে চলে যান। কিছুদিন পর শায়লা নিজের ভিতর আরেকজনের অস্তিত্ব টের পেলেন। সবাই খুশী। স্বামী নিয়মিত খোঁজ খবর নেন.........চিঠি ও টাকা পাঠান। বাহ্যিকভাবে তার কোন অভাব নেই। কিন্তু এইসময়ে, এই অবস্থায় তার কাছে যার সবচেয়ে বেশি থাকা প্রয়োজন ছিল তাকে সে এক মুহূর্তের জন্যও পায়নি। শায়লা যথাসময়ে একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন। মেয়ের বয়স যখন পাঁচ/ছয় বছর তখন শায়লার স্বামী দেশে আসলেন। এবারও ২/৩ মাস থেকে চলে গেলেন। এবার শায়লা এক পুত্র সন্তানের মা হলেন।
দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে বেশ দিন কেটে যায় শায়লার। বৃদ্ধা শাশুড়ি, আর ছোট দেবর নিয়ে সংসার। ইতিমধ্যে মেজভাইটি বিয়ে করেছে। শাশুড়ি এই ছেলেকে আলাদা করে দিয়েছে। শায়লার ছেলের বয়স যখন ছয়/সাত বছর তখন তার স্বামী দেশে এসে যথারীতি ২/৩ মাস থেকে চলে যান এবং এবারেও শায়লা এক পুত্রসন্তানের মা হলেন। এই ছেলেটিও দিন দিন বড় হচ্ছে।
ছোট ছেলের বয়স যখন পাঁচ কি ছয় বছর তখন শায়লার একমাত্র কন্যা তার পছন্দের একজনের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলো। মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করায় শায়লার স্বামী রাগ করে আরও ২/৩ বছর পরে বাড়ী আসলো। ততদিনে 'শায়লার কন্যা' এক ছেলের মা হয়ে গেছে।
নিজের বিয়ে থেকে শুরু করে নাতি হওয়া পর্যন্ত প্রায় আঠারো উনিশ বছরের বিবাহিত জীবনে তার দাম্পত্য জীবনের সময়কাল ৬/৭ মাস। একসময় উনার সাথে উনার ছোট দেবরকে নিয়ে ‘কিছু গুঞ্জন’ গ্রামে তৈরি হয়েছিলো। ঘটনা সত্যি মিথ্যা কতটুকু জানিনা। এভাবেই এই শায়লার জীবন অতিবাহিত হচ্ছে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)