বিবিধ

টুকরো কথন-৪

টুকরো কথন-৪

আজ অনেকদিন পর বাচ্চারা দুপুরে ঘুমিয়েছে। একখন্ড অবসর কুড়িয়ে পেয়েছি বলা যায়! এ কোণ ও কোণে খেলনা ছড়ানো,বিকেলের নাস্তা তৈরীর তাড়া আছে আরো কতক কাজ! 

এরমধ্যে ফেসবুকে ঢুঁ দিয়ে জানলাম,বেশ লিখতো ছেলেটা,সুইসাইড করেছে। অনেকক্ষন চুপ করে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ছেলেটা সবাইকে অনুপ্রেরণা দিতো তার লেখা দিয়ে,আজ কিসের অভাবে চলে গেছে এভাবে কেউ জানিনা,কেবল অবাক সবাই!  

হঠাত মনে হলো,ছেলেটাও হয়তো আমার মতোই স্বজন বিহীন একটা শহরে থাকতো,যেখানে জীবন ধারণের জন্য সবই আছে কেবল দেহের ভেতর প্রাণ নেই বলা চলে! চারপাশে কতো মানুষ,কাজের প্রেশার তবুও কি যেন নেই... সে শূণ্যতার ভার বয়ে যাওয়া এতো সহজ না। 

এক সময় ছুটি পেলেই ছুটে আসতাম এই পাহাড়-সমুদ্রের শহরে। এখানে সেখানে ঘুরতাম,চেক ইন দেয়া ছবি তোলা সবই ছিলো। এখন আমার এখানেই বসবাস অথচ সেই আবেগের ছিটেফোঁটা ও নেই। 

মাঝ দুপুর থেকে আকাশ কাঁপিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। পাহাড়ের উপরে বাসা আমার কিন্তু জানলায় তাকিয়ে আমি কিছুই দেখতে পাই না। ছুটি হলেই কবে নিজের শহরে ফিরে যাব সেই তাড়া এদিকে ক'ঘন্টার পথ পেরুলেই সমুদ্রের পার কিন্তু আমাকে সেসব একদম ই টানে না। 

জীবনে পরিচিত মানুষ আর জায়গা এগুলো বেসিক নিডের মধ্যে কাগজে কলমে পরে না কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে,এগুলো আসলেই বেসিক নিড। যে পরিবেশ,সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছেন,সেখান থেকে একদম ভিন্ন কোথাও আপনাকে সেই অনুভূতি টা দিবে না,যা প্রতিদিনের ভালো থাকার জন্য দরকার হয়। হয়তো অনেক দিন পর হয়তো অনেকদিন পরেও না,এক রাশ শূন্যতা নিয়েই দিন,মাস,বছর অন্য শহরে চলে যায়। এক সময় সে শহরে ঘর হয়,নতুন মানুষ হয় তবুও সেখানে নিজের সেই প্রশান্তি মেলে না। তবুও এই আসা-যাওয়া,শহর বদলের নিয়ম বেঁচে থাকার তাগিদে করতেই হয়। 

কয়েক বছর আগে এক আপু হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন,স্বামীকে নিয়ে ইউএস পড়তে গেছেন,কোন এক অজানা কারণে যেখানে থাকেন,বাংগালি কমিউনিটির সাথে উনি মিলতে পারছেন না,তারা উনাকে ডাকে না কোথাও। প্রচন্ডভাবে একলা লাগে তার,পাগলের মতো করেন একটু কারো সাথে বসে আড্ডা দেয়ার জন্য,কথা বলার জন্য,হাসার জন্য। এখন আমি বুঝি,উনার কেমন লাগতো! 

নতুন শহরে সবচেয়ে বড় অভাব পরিচিত মানুষের। যাদের সাথে দিনের পর দিন দেখা হতো,কথা হতো। রোজ সকালে উঠে অফিস যাবার সময় সদ্য খোলা টং এর দোকানদার,পরিচিত গলিটা,অপছন্দের কারো সাথে দেখা হবার ভয়ে এড়িয়ে চলা মোড়টা,ক'মিনিট হাঁটলেই কোন প্রিয় মানুষের বাসা এগুলো লাগে,খুব লাগে। আত্নার খোরাক গুলো হারিয়ে যায় যদি ধীরে ধীরে আবেগ গুলো একটা কঠিন দেয়ালে ঢেকে যায়। বাইরে থেকে বুঝা যায় না,কি শক্ত তা। কথায় কথায় অনেক কিছু বলা যায়,এতো ভালো শহরে থেকেও নাকি ভালো লাগেনা! সুখের অসুখ ইত্যাদি। অথচ কি নাজুক সময়টা ই না সে পার করছে! স্বার্থপরের মতো তাকে ঠেশ দিয়ে কথা বলায় তার ভেতরটা কি পরিমাণ রক্তাক্ত হয় এটা বুঝার জ্ঞান ক'জনের ই থাকে? আফসোস!   

এই দিনের পর দিনের অভিজ্ঞতা আমাকে অনেক কিছুই শেখাচ্ছে,চেনাচ্ছে মানুষকে অনেক ভাবে। যদি কখনো সুযোগ পাই,আমার মতো কাউকে পেলে বলবো, যেখানেই যাও মানুষ নিয়ে যেও,ভালো থাকার জন্য মানুষ লাগে। 

- জৈষ্ঠ্যের বৃষ্টি দুপুর। 


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ