বিবিধ

কল্পলোকের গল্প নয়-৯

কল্পলোকের গল্প নয়-৯
পৌনঃপুনিক-চার দিন কেটে যাচ্ছে। আবারও জামান নেশা করতে গিয়ে রীপার কাছে ধরা পড়লো। এবং এবারও সে ক্ষমা চেয়ে নিস্তার পেল। বারবার এইরকম হতেই থাকলো।  এভাবে রীপা এখন তার দুইটি স্বত্বার সাথে বসবাস শুরু করলো। এক স্বত্বা দিয়ে সে জামানের চোখে আঙুল দিয়ে তার অন্যায়গুলো তার কাছে তুলে ধরে প্রতিনিয়ত তাকে ভালো পথে ফিরিয়ে আনতে চায়, আরেক স্বত্বা দিয়ে সবার সামনে জামানের দোষত্রুটি গোপন করে তাকে ভালো হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।  জামানের অর্থনৈতিক অবস্থা কিরূপ তা রীপা বেশ ভালভাবেই জানে। তাই সে কখনও স্বামীকে তার নিজস্ব কোন চাহিদার কথা জানায়না। ঈদ বা অন্য যে কোন উপলক্ষে সে নিজের টাকা দিয়ে দামী শাড়ি, গয়না ইত্যাদি কিনে নিয়ে মা, বোন ও অন্য আত্মীয়দের কাছে জানায় যে এটা জামান দিয়েছে।  কখনোই স্বামী অন্যের চোখে কোনভাবে ছোট হোক এটা সে কামনা করেনা। মনেমনে তার শুধু একটাই আশা- জামান যদি নেশার এই বদভ্যাসটা ছেড়ে দেয়!...... তবে তার মত সুখী আর কে হবে? বিয়ে হয়েছে দুই/তিন বছর হয়ে গেছে। এখনও রীপার কোন সন্তান হয়নি। দুইপক্ষের আত্মীয়-স্বজনেরা নানা রকম প্রশ্ন করে! এবার রীপা ডাক্তারের কাছে গেল। কিন্তু কোন সমস্যা ধরা পড়লনা। আবারও অন্য ডাক্তারের কাছে যায়। কিন্তু এবারও কোন সমাধান হলনা।  এর মধ্যে রীপার মামারাও তাদের সব মান অভিমান ভুলে ওদেরকে উনাদের বাসায় নিয়ে গেলেন। এখন ওরা মাঝে মধ্যে মামাদের বাসায়ও বেড়াতে যায়। সবকিছু ধীরেধীরে ঠিক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রীপার মনে শান্তি নেই।  সে মা বোনের সাথে সব কথা শেয়ার করলেও কেন জানি এই সমস্যাটা শেয়ার করতে পারেনা। এমন কি সে এসব কথা জামানের মা বোনকেও কখনও জানায়নি!  দেখতে দেখতে বিয়ের প্রায় আট বছর হয়ে গেল। এদিকে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য বেড়েই চলেছে। একপর্যায়ে রীপার মায়ের চোখে ওদের মনোমালিন্যের বিষয়টি ধরা পড়ে।  একদিন সকালবেলা জামান নাস্তা না খেয়ে অফিসে চলে যায় তিনি মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলে মেয়ে বলে,’আমার সাথে ঝগড়া হয়েছে তাই না খেয়ে গেছে।‘  মায়ের অভিজ্ঞ চোখকে মেয়ে বেশিদিন ফাঁকি দিতে পারলনা। একদিন মায়ের জেরার সামনে ও টিকতে না পেরে সব কথা খুলে বলল। মা মেয়েকে তিরস্কার করলেন এতদিন তার কাছে কিছু বলেনি বলে।  রীপার আম্মা এবার সরাসরি জামানের কাছে এই ব্যপারে জানতে চাইলেন। সে প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করলো। কিন্তু উনি ওকে পাশ কাটাতে দিলেন না। বেশ জোরালো ভাষায় জিজ্ঞাসা করায় সে আর মিথ্যা বলতে পারলনা। সে সবকিছু স্বীকার করলো।  মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি ওকে এই পথ থেকে ফিরে আসতে বললেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করতেও বললেন। সে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার ওয়াদা করে আপাতত শ্বাশুড়ীর হাত থেকে রেহাই পেল।  শ্বাশুড়ীর সাথে ওয়াদা করা সত্ত্বেও জামান ডাক্তারের কাছে গেলনা। কয়েকদিন পর সে আবার আড্ডায় যাওয়া শুরু করলো। এবার মা ও মেয়ে দুজনেই তাকে তিরস্কার করলো। ফলে সে রাগ করে শ্বশুরবাসা থেকে চলে আসলো। বাবা, মা, ভাই, বোন কাউকেই কিছু বললোনা। কেউ যখন তার কাছে জানতে চায় –‘কি হয়েছে?’ তখন সে জানায়- ‘কিছুই হয়নি।‘  কয়েকদিন দিন পরও যখন সে কিছু জানালনা, তখন ওর আম্মা ও আপা রীপাদের বাসায় যায়। সেখানে গিয়ে সবকিছু শুনে তারা স্তব্ধ হয়ে যায়। রীপা বারবার অনুরোধ করে-‘আমিতো একা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি, ‘এবার আপনারা ওকে এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু আপনারা ওর সাথে কোন খারাপ আচরণ করবেননা।‘  উনারা ওখান থেকে এসে বাসায় অন্যদেরকে বিষয়টা জানাল। সবাই সব কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেল। তারপর ধীরেধীরে সবাই মিলে জামানকে বুঝাতে লাগলো। তাকে ডাক্তার দেখানো হল। কিছুদিন সে চিকিৎসাও নিলো।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ