অনির্ধারিত

কল্পলোকের গল্প নয়-৭

কল্পলোকের গল্প নয়-৭
পৌনঃপুনিক-দুই ঘটনাটা টের পেয়ে ছোটচাচী রীপার কাছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলেন। সে অকপটে চাচীর কাছে সব কথা স্বীকার করলো। সাথে এই অনুরোধও করলো তার আম্মাকে যেন কিছু না বলে। চাচীও কোন এক অজ্ঞাত কারনে বড় জাকে কিছুই জানালনা। অথচ জানিয়ে দেয়াটাই মুরুব্বী হিসেবে তার জন্য স্বাভাবিক ছিল। এভাবেই কারো প্রত্যক্ষ এবং কারো পরোক্ষ সহযোগিতায় রীপার দিন কাটতে থাকল।  বছর গড়াতে থাকে। রীপা এস.এস.সি পরীক্ষা দিলো এবং অকৃতকার্য হল। পরের বছর আবারও পরীক্ষা দিলো। এবার কোনমতে পাশ করলো। সে একটা কলেজে ভর্তি হল। আর এদিকে জামানও ডিগ্রি পাশ করেছে। সে এবার অন্য একটি অফিসে বেশ ভালো একটি চাকুরী পেয়েছে। বেতনও আগের চাইতে বেশী। সংসার আগের চাইতে কিছুটা সচ্ছল।  ইতিমধ্যেই এর মুখ থেকে ওর মুখ থেকে রীপার মা ওদের সম্পর্কের বিষয়টা জেনে ফেলেন। তিনি ভাবলেন মেয়ে হয়ত কম বয়সের কারণে একটা ভুল করেই ফেলেছে। মেয়েকে বুঝিয়ে বললেই সে বুঝতে পারবে। তখন সে নিশ্চয়ই এই পথ থেকে ফিরে আসবে। কিন্তু মেয়েকে বারণ করতে গিয়ে দেখেন যে পানি বহুদূর গড়িয়ে গেছে। তিনি বুঝে গেলেন যে এখন তাকে কৌশলের আশ্রয় নিতে হবে।  তিনি তাঁর ভাইদেরকে বিষয়টি জানালেন। মামারা বেড়াতে নেয়ার নাম করে রীপাকে উনাদের বাসায় নিয়ে গেলেন। ওর নানাবাড়ির অবস্থা বেশ ভাল। নানা বেঁচে নেই। মামারা সবাই ব্যাবসায়ী। অর্থনৈতিক অবস্থা ওর আব্বার চাইতেও অনেক বেশী ভালো।  নানী, মামা, মামী এবং অন্যরা তাকে বুঝাতে লাগলো। কিন্তু সে নাছোড়বান্দা। তার একটাই কথা –‘বিয়ে যদি করতেই হয় তো জামানকেই করব।‘ মামাদের বাসায় সে বন্দিজীবন যাপন করতে লাগলো। কোথাও বের হতে পারেনা। বাইরের কারো সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারেনা। বাসায় যে টেলিফোন আছে তার ধারে কাছেও সে যেতে পারেনা(তখন বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের প্রচলন ছিলনা)।  মামারা যখন বাসায় থাকেনা, তখন নানী ও মামীদের কঠোর নজরদারিতে তাকে দিন কাটাতে হয়। রীপা এই বাসায় আসার প্রায় একমাস পরে ছোটবোন দীপা নানীর বাসায় বেড়াতে এলো। এসেই সে জানাল- জামান তার সাথে যোগাযোগ করে কিছু পরিকল্পনা করেছে। এখন ওদেরকে তার বাস্তবায়ন করতে হবে।  একপর্যায়ে দীপার সহায়তায় রীপা মামাদের বাসা থেকে পালিয়ে যায় এবং ওরা বিয়ে করে ফেলে। বিয়ের পর ওরা জামানের বিভিন্ন বন্ধুর বাসায় ঘুরে ফিরে থাকতে লাগলো। জামান বউ নিয়ে বাসায় যেতে সাহস পাচ্ছেনা। কারণ পাশাপাশি বাসা......রীপার পরিবার কোন ঝামেলা করতে পারে। এই ভয়ে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছিল।  এই পর্যায়ে রীপার মামারা সবাই খুব চেষ্টা করেছিলো ওকে ফিরিয়ে এনে আবার উনাদের বাসায় নিয়ে যেতে। কিন্তু ও ভীষণ শক্ত থাকায় সেটা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।  এবার ওর মা আবারও একটা কৌশলের আশ্রয় নেন। তিনি ওকে জানান -‘তুই বাসায় চলে আয়! আমি অনুষ্ঠান করে তোকে জামানের হাতে তুলে দেব।’ বিশ্বস্ত একজনের মাধ্যমে এই কথা জানার পর রীপা মায়ের প্রস্তাব মেনে নেয়।  ঐ মুহূর্তে মায়ের প্রস্তাব মানা ছাড়া তার আর কোন উপায়ও ছিলনা। বিয়ে হয়েছে প্রায় একমাস হতে চলল। এভাবে মানুষের বাসায় থাকতেও তার ভালো লাগছিলনা। জামানের আম্মা আর আপাও লুকিয়ে প্রায়ই দেখা করে যাচ্ছিলেন। তারাও কোন সমাধান দিতে পারছিলেননা।  রীপার মায়ের শর্ত অনুযায়ী ওরা দুজন যার যার বাসায় চলে যায়। কয়েকদিন পরে মায়ের আচরণে রীপা টের পেয়ে গেল তার মা তাকে বাসায় আনার জন্য এই কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। সে খুব কান্নাকাটি করতে শুরু করলো। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিলো। এক পর্যায়ে ওর মায়ের মন নরম হতে থাকলো। কিন্তু স্বামীর ভয়ে তিনি চুপ করে থাকলেন। কারণ রীপার আব্বা এই অসম বিয়ে মেনে নিবেননা এটা রীপার মা খুব ভালোভাবেই জানতেন।  এর মধ্যে জামানের পরিবার বাসা পরিবর্তন করে অন্য এলাকায় চলে গেল। রীপা যখন বুঝল যে ওর আম্মা কিছুটা নরম হয়েছে সে এই সুযোগটা কাজে লাগাল। মায়ের অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে সে আবার পালিয়ে গেল। অবশ্য এই ব্যাপারে কেউ কেউ বলত মা নিজেই না জানার ভাণ করে মেয়েকে পালাতে সুযোগ করে দিয়েছে!!! এবার আর ওর পরিবার কোনরূপ ঝামেলায় গেলনা। তবে রীপার আব্বা কড়াকড়িভাবে স্ত্রীকে নিষেধ করে দিলেন যেন মেয়ের সাথে কোনরূপ যোগাযোগ না রাখে। কিন্তু মায়ের মন বুঝ মানেনা! মেয়ের জন্য চিৎকার করে কান্না করেন। এত আদরে-আহ্লাদে, ঐশ্বর্যে বড় হওয়া মেয়ে আজ কি করে এত অর্থকষ্টে শ্বশুরবাড়িতে দিন কাটায়!!! তিনি গোপনে মেয়েকে আর্থিক সাহায্য করা শুরু করলেন। কখনও মেয়ের বান্ধবীদের বাসায় কখনও অন্যকোথাও মেয়ের সাথে দেখা করতেন। এভাবে ২/৩ মাস পার হয়ে গেল।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)