আমরা যারা বাচ্চার মায়েরা আছি, এই কোয়ারেন্টিন বা বাসায় থেকে একা বাচ্চা, সংসার সামলাতে হিমসিম খাচ্ছি- পারছিনা মনে করে নিজের ওপর লোড নিয়ে হতাশ হয়ে যাচ্ছি, বা বিরক্তি এসে যাচ্ছে, তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নিজের ব্যক্তিগত ভালো থাকা, মন্দ থাকার কথাগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখলাম।
প্রসঙ্গ আমিঃ
১। সেলফ মটিভেশন হচ্ছে আল্লাহ অতিরিক্ত বোঝা দিবেন না।। তাই আমার যে কষ্ট হচ্ছে বা লোড হচ্ছে এটার ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরতে হবে। আর ধৈর্যের প্রথম শর্ত হল অভিযোগ / তুলনা করা যাবেনা। যেমনঃ আমি সারাদিন এই করি সেই করি, আর বাচ্চাদের বাবা এই হেল্প করলনা, সেটা বুঝলোনা এগুলা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। সবার দায়িত্ব আলাদা। এমন অনেক পরিস্থতি আসতে পারে যেখানে আপনি চাইলেও কিছু করার থাকবেনা, বা যার ওপর দায়িত্ব টা পরেছে তার হাজার কষ্ট হলেও তাকেই করতে হচ্ছে। এগুলা মাথায় রাখলে অস্থিরতা কমে যায়।
২। নিজের মানসিক সুস্থতা কে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে, বাচ্চার কি হবে জামাইয়ের কি হবে ওরা পারবেনা, কষ্ট হবে বা আমার হাজার কষ্ট হলেও আমাকেই করতে হবে - এগুলা চিন্তা প্রশ্রয় দেয়া যাবেনা।
৩। আমার যদি এখন মনে হয় আমি বিরক্ত হচ্ছি আর পারছিনা তখন কারো কথা না ভেবে নিজের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। । যদি রান্নাও না থাকে , না থাক। আমার দ্বারা এখন সম্ভব না, যেভাবে হোক কিছু না কিছু ম্যানেজ হয়েই যায়। জোর করে আমাকেই করতে হবে- এই আচরন টা তে নিজেকেও অভ্যস্ত হওয়া যাবেনা, বাসার অন্য সদস্যদেরো বোঝাতে হবে যে বাচ্চা বা অন্যদের সুবিধা অসুবিধা যেমন আমি দেখব , তেমন ভাবে আমার সুবিধা অসুবিধাও ঊনাদের বুঝতে হবে।
প্রসঙ্গ ঃ বাবা ও বাচ্চা (কী পয়েন্ট হল এটেনশন দেয়া যাবেনা)
১। বাচ্চারা কমান্ড এ অভ্যস্ত হয়ে গেলে ওরা কেমন যেন ডিজিটাল টাইপ হয়ে যায়। একটা সময় নিজেরা কোন পারটিকুলার সিচুয়েশনে নিজেদের মনের ভাব বা চিন্তা বহিপ্রকাশ করতে পারেনা। কারন মা বলে দেয়নি এখন কি করতে হবে। তাই ওদের কমান্ড না দিয়ে ফলো করতে শেখানোটা বেশি ইফেক্টিভ। এটাতে কাজের গুরুত্ত টাও ওরা দ্রুত ক্যাচ করতে পারে। প্রথমে বোর হবে, তারপর নিরুপায় হয়ে কাজে সহোযোগীতা করবে। আম্মুর অনেক কাজ থাকে, বাচ্চার সাথে খেলাও একটা কাজ। তাই খেলা ছাড়া অন্য কাজের সময় মা কে বিরক্ত করা যাবেনা। আম্মুর কাজের মনোযোগ নষ্ট হবে। মজার কথা হলো আমার ৪ বছর বয়সের ছেলে এখন আমি ঘর ঝাড়ু দেয়ার সময়েও আমার সাথে কাউকে কথা বলতে দেয়না, বলে কথা বললে আম্মুর কাজের মনোযোগ নষ্ট হবে।
২। বাবা-মা এবং বাচ্চা যখন একসাথে বাসায়ঃ
তখন আমরা যেটা করি, -আমাদের কাজই করি, বাট খেয়াল রাখি যে ওরা কোন অঘটন যাতে না ঘটায়। শুধু মাথায় রাখি ওরা যাতে আনেটেন্ডেন্ট না থাকে। এটাতে কি হয় - ওরা - হয় আব্বু নাইলে আম্মু এরকম অল্টার করে ঘুরে বেরায় কথা বলে আবার নিজেদের মত খেলে। কিন্তু যে কোন একজন কে অনেক কাজে বাধা দেয়না। হ্যা এতে আমাদের ২ জনেরই কাজে হ্যাম্পার হয়, কিন্তু কোপ আপ করার চেষ্টা করি। । আবার কয়েক্টা কাজ ভাগ ও করে নেই। যেমনঃ বাচ্চাদের খাওয়া, গোসল, ঘুম পারানো । আর এই ভাগের নিয়ম হচ্ছে- একজনের ভাগের কাজে আরেকজন নাক গলাইনা। সেটা যদি মারামারিও হয়, তাওনা। এজন্য বনিবনা না হলেও ওরা পার্টি বদল করে নালিশ করতে আসেনা। জানে যে আব্বুর সাথে ঝামেলা আমি করেছি আমাকেই সেটেল করতে হবে আম্মু উকিল হয়ে আসবেনা।
৩। বাবার সাথে বাচ্চারা থাকলে ঘরটা একটু এলোমেলো হবেই, এটার কোন উপায় আমার জানা নাই।
শেষকথাঃ তারপরও সব বাচ্চা বা সব বাসার পরিস্থিতি আলাদা। এটা বুঝে ম্যানেজ করতে হবে। যেমন আমার একটা অনেক বড় সুবিধা হলো আমার ২ই পুত্রই অসম্ভব রকম বাবা ভক্ত- বাবা খাওয়ার সময়, কম্পিউটারে কাজ করার সময়, ফোনে কথা বলার সময়, নামায পড়ার সময়, এমনকি হাটার সময় ও ২ জন পেছনে পেছনে ঘুরে। এখন উনার আর উপায় নাই, ওদের ভাগানোর। ইভেন ওয়াশ রুমে গেলেও ২ জন দরজার সামনে দাঁড়ায় থাকে। এক্ষেত্রে উনার যত কষ্টই হোক আমার ঘাড়ে চাপানোর উপায় নাই, উনাকেই ম্যানেজ করতে হয়।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)