একসময় শুধু মেয়ে ছিলাম। দস্যি মেয়ে। মাঠ ঘাট তো নাই ঢাকা শহরে, সমার্থে বলা যায়- রাস্তা ঘাট অলিগলি এদিক ওদিক নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়িয়েছি। যাকে বলে এঞ্জয় করা, কতজনে কত কথা বলতো! মেয়েকে রান্নাবান্না, দ্বায়িত্ব ঘরের কাজ শেখান না কেন?
আম্মু হেসে হেসে বলতো- "ওরা করেনা ঠিকই, কিন্তু মাকে দেখে শেখে- যখন ঘাড়ে পড়বে ঠিক করে নিবে, সবার জন্য করবে। "
সবার জন্য করা মানে- সবার জন্য করা করা আর করতেই থাকা, অনেক ভালবাসা আনন্দ আর আত্মতৃপ্তি নিয়ে অন্যের জন্য জীবন বিলিয়ে দেয়া।উড়নচন্ডির মত বনে বাদাড়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াইতাম আমি নিশ্চিন্তে।
আর মা --- সকালের ঘুমটা ঘুমাতে পারতোনা কার কি লাগবে, কেকি খাবে বাসায় সেই চিন্তায়- এখনো পারেনা। রুমে ঢুকে দেখতাম কাপড় গুলো সযতনে ভাজ করা, না চাইতেই টেবিলে চা চলে আসতো, কখন জানি মনের অজান্তে একটা কাশি দিলাম নিজেও জানিনা, ভাতের প্লেট গ্লাসের পাশে কাশির ওষুধ!! হঠাৎ চোখমুখ শক্ত করে রাতবিরাতে কোথা থেকে তুলশি পাতা এনে দেয়া। সেইই কবে কোন জামার কোনা ছেড়া ছিল নিজের ও মনে নাই, হঠাৎ দেখি ছেড়া নাই, কই ছিল খুজেও পাইনা!!
এক এক সময় গিল্ট ফিল হত, হতাশ হয়ে ভাবতাম, কি দরকার মা এত কষ্ট করার, আমি কি বলসি করতে??
এর চে ঘুমাইতা একটু। আর রান্নার কথাতো নাইবা বললাম। কেন করো মা এত!! এসব তো ফরয কাজ না, অনেকেই করে না। সবাইতো নিজের জন্য বাচে। নিজের স্ত্রী, নিজের স্বামী, নিজের সন্তানের জন্য যতটুকু করা দ্বায়িত্ব ততটুকও করেনা অনেকেই। তাদের কি চলেনা।??
চলে যায়।
উত্তর তো একটাই-- ওইযে- "আমি যে মা তাই; যেদিন মা হবি সেদিন বুঝবি। "
মায়ের চোখে মুখে এখন রাজ্যের ক্লান্তি। পড়ন্ত গোধূলীর সমস্ত বর্নআলো গুলো ও আড়াল করতে পারছেনা তোমার অজস্র বসন্তের নির্ঘুম চোখের ভাজ গুলো। তোমার ঐ একচিলতে বারান্দার রৌদ্রজ্জ্বল চিরসবুজ গাছফুল গুলোও হার মেনেছে তোমাকে ছায়া না দিতে পারার ব্যর্থতায়। ক্লান্ত শরীরের ভাজে ভাজে একটু জিরিয়ে নিতে চাওয়া। ভারে নুয়ে যাওয়া মেহেদী রাঙা হাত দুটো ও আর চলতে চায়না।
এখন আমি মা, স্ত্রী। নিজের ঘর, নিজের সংসার, অনেক ব্যস্ত আমি, অন্য সবার মত!!
হলোনা আমাকে দিয়ে,তোমাকে একটু ছুটি দেয়া, একটু বিশ্রাম দেয়া। পারলামনা কোন বিকেল সন্ধ্যা মাড়িয়ে তোমার সাথে তোমার বাগান করা দেখতে। অথবা ভারে নুয়ে পড়া কাধ দুটো থেকে একটু বোঝা নামিয়ে দিতে। কোন মেয়েই কি পারে??
ঝাপসা চোখে ব্যাগ গুছাচ্ছি, বাসায় ফিরতে হবে।
" এই জামাটা নিওনা, রেখে যাও, ছেড়া হাতার জামা মানুষ পড়ে কিভাবে??"
আমি কিছুই বলতে পারলামনা, রাগে, দুঃখে না লজ্জায় জানিনা।
"আজকে না মা - আরেকদিন দিয়ে যাব!!! "
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)