
সখী! ময়দায় মাখামাখি কাহারে বলে! রিয়েলিটি শো গুলোতে নারী ছাড়া চলেই না। কি টি ভি অ্যাড, কি খেলার বিবরণী নিয়ে অনুষ্ঠান, কিংবা কোন অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা। নারীর বাণিজ্যিক ব্যবহার ছাড়া সব ব্যবসাই ফিকে। কিছুদিন আগে একটা এমন রিয়্যালিটি শো দেখছিলাম। এন টি ভি তে হচ্ছিলো। স্কুলে বসে থাকা ঘরের গৃহিণীদের নিয়ে প্রতিযোগিতা। সব কিছু ভালোই চলছিলো। একটা পর্ব ছিল এমন যে সবার সামনে এক বাটি ময়দা দেওয়া, ময়দার নিচে পয়সা লুকানো। ময়দা ফু দিয়ে দিয়ে যে কয়টা পয়সা বের করতে পারবে , তার সে কয়টা পয়েন্ট। একে একে শুরু হোল ময়দা ফুঁকা। মহিলারা একে একে ময়দায় ফু দিচ্ছেন, সেসব উড়ে উড়ে তাদের পুরো মুখ চুল গলা ভরিয়ে দিচ্ছে। অবশেষে একেক জন সাদা সং সেজে কয়টা পয়সা উদ্ধার করে ইভেন্টটা পার করছেন। এখানে যে ২ টা জিনিষ আমার খারাপ লাগলো- ১- এই ময়দা কারো চোখে ঢুকার পরে তার চোখের কোন ক্ষতি হতে পারতো ২- ময়দা ফু দিলে মুখে আসবে , মুখ সাদা হয়ে যাবে, দেখতে ভূতের মতো লাগবে জেনেও এমন একটা সেগমেন্ট রাখাটা অন্যায়! এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রতিটি নারীই কারো মা, কারো বোন, কারো স্ত্রী কিংবা কারো মেয়ে। আমরা সবাই কারো না কারো সন্তান। কোন সন্তান কি প্রতিযোগিতার নামে তার মায়ের সাথে এরূপ তামাশা মেনে নিতো? দুনিয়াতে কি প্রতিযোগিতার অভাব ছিল? আলু ছিলা , পটল ছিলা, কিংবা চাল ডাল বাছা, পেয়াজ কাটা কতো রকম কম্পিটিশনই তো করা যায়। কেন এই ধরনের প্রতিযোগিতা করতে হবে, যেটা দেখে দর্শকরা ঐ মাদের নিয়ে হাসবেন, ঐ সং সাজা মুখের ছবি ঐ টিভির লোকেরাই তুলে তার স্লাইড শো দেখাবেন, ঐ প্রতিযোগিতার কারনে হয়তো তার মূল্যবান চোখ ২ টি ই ক্ষতিগ্রস্থ হবে! তাই বলছি- টি ভি ক্যামেরা আর রিয়্যালিটি শো তে নারী আসলে তার মানে এই না যে নারীর ক্ষমতায়ণ হয়ে গেছে, নারী তার কাঙ্ক্ষিত সম্মান পেয়ে গেছে। বরং যা দেখি, এসব মাধ্যমে নারী শুধু ময়দায় মাখার মতো জিনিষ, কোন রিয়্যালিটি শো এর হাসি ঠাট্টা আর উপহাসের বস্তু। আমাদের দেশে যখনই শাশ্বত জীবন বিধানের কথা বলা হয়, নারীর বাণিজ্যিক ব্যবহার, হাসি ঠাট্টা মূলক ব্যবহার নিয়ে কথা বলা হয়, তখনই আমরা মধ্যযুগীয় হয়ে যাই। কিন্তু , সেই সম্মান , সেই মর্যাদার যায়গাটা যে আমরা আমাদের মা কিংবা মেয়েদের জন্য এখনো তৈরি করতে পারিনি এই রিয়্যালিটি শো এর এই ময়দায় মাখামাখি সেগমেন্ট টা তারই প্রমাণ। যদি এই প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করার আগে একজন মহিলা ও নিজেদের কে নিয়ে যে তামাশা হচ্ছে তা বুঝতেন, তাহলে বুঝতাম আমরা নিজেরা মনে মনে অন্তত স্বাধীন হয়েছি। কিন্তু, এটা আধুনিকতায় মোড়ানো এক অদ্ভুত নারী স্বাধীনতা, যেই নারী স্বাধীনতা বলে- ময়দায় মেখে সং সেজে মানুষকে ফ্রি বিনোদন দেওয়ায় কোন দোষের কিছু নেই। একবার কি ভেবে দেখবেন- এমন স্বাধীনতাই কি আমরা চেয়েছিলাম?
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)