সবাই সবার জায়গা থেকে মনে করে যে সে যা বলছে ঠিক বলছে। আর তাই সঠিক ভুলের পার্থক্য করার জন্য এবং শিশু পরিচালনায় জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকার প্রয়োজন।
প্রাক-স্কুলগামী শিশুদের জন্য ২ ধরণের নির্দেশিকা রয়েছে যা দ্বারা তাদের পরিচালনা করতে হয়।
ক। কথায় নির্দেশিকা
খ। কাজের নির্দেশিকা
কথায় নির্দেশিকাঃ
· শিশুকে আদেশ বা নির্দেশ যাই দেয়া হোক না কেন তা নেতিবাচক বলা যাবে না,ইতিবাচক বলতে হবে। যেমন-শিশু ঘর নোংরা করলে তাকে তার জন্য বকা বা নিষেধ না করে ঘর ময়লা করার পর তাকে নিয়েই ঘর পুনরায় ঘুছানো যেতে পারে। এর থেকে শিশু সৌন্দর্য সম্পর্কেও ধারণা পাবে।
· এই বয়সী শিশুকে সব কিছু হাতে হাতে শিখানোর চেয়ে তাকে ছেড়ে দিতে হবে।শিশু তার চাহিদা অনুযায়ী গ্রহণ করবে।জেমন-মা শিশুর পিছনে দুধের বোতল নিয়ে ঘুরবে না। বরং শিশু নিজেই মায়ের কাছে দুধের বোতল খুঁজবে।
· শিশু তার পছন্দ মত যা করতে চায় তা যদি তার জন্য কোনরূপ ক্ষতির কারণ না হয় তাহলে তা তাকে করতে দিতে হবে।কিন্তু অধিকাংশ সময় দেখা যায় শিশুকে শিশু মনে করা হয়না আর বড়রা শিশুর মতো আচরণ করে। যেমন- বাড়ির কলিং বেলের আওয়াজ হলেই শিশু গেইট খুলতে দৌড় দেয়।কিন্তু তার চেয়েও দিগুন দৌড়ে বড় সদস্যাটি গেইট খুলে দেয়। এই ক্ষেত্রে শিশু গেইট খুলতে পারলে তাকে তা করতে দিতে হবে। আর না পারলে তাকে কোলে নিয়ে গেইট খুলার সুযোগ দিতে হবে।
· অভিভাবককে শিশুর এমন বন্ধু হতে হবে যেন তার কণ্ঠ হয় শিশুর জন্য আস্থার স্বর । যেমন- অনেক ভীড়ের মধ্যে যখন শিশু তার মাকে খুঁজে না পায় তখন হটাত মায়ের কণ্ঠস্বর শুনে তার মধ্যে সস্থি আসবে।কিন্তু শিশুর যদি এমন হয় যে কোন ভাবে কোথাও পরে যেয়ে ব্যথা পেলো আর হটাত তার মায়ের কণ্ঠস্বর শুনে “আত্মা রাম খাঁচা ছাড়া’’ হয়ে যাওয়ার দশা হলো।সে তার ব্যথা লুকানোর চেষ্টা করলো,তখন বুঝে নিতে হবে এখানে অভিভাবকের কণ্ঠস্বর শিশুর জন্য আস্থাবাচক নয়।
· শিশুর সাথে এমন কোন আচরণ করা যাবে না যা তাকে লজ্জিত করবে বা ভীত করবে। অনেক অভিভাবক মনে করেন লজ্জা দিলে শিশু কোন কাজ দ্রুত শিখে। বাস্তবে এর কোন ভিত্তি নেই। যেমন-শিশু রাতে ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব করে দিলে সকালে উঠে যদি তিরস্কারের মুখে পরে তবে সে ভীত হয়ে পরবে। যা তার টয়লেট ট্রেইনিঙ্গে মারত্মক বাঁধা দিবে। আর এছাড়াও এভাবে লজ্জা দিলে শিশুর ব্যক্তিত্বে মারাত্মক প্রভাব পরে।শিশু দুর্বল চরিত্রের হয়।
· আমরা জানি প্রতিটা শিশু আলাদা, প্রতিটা শিশুর রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট, তাই তাদের কে আলাদা ভাবেই চিন্তা করতে হবে।প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করার জন্য কখনোই অন্যের সাথে তাদের তুলোনা করা যাবে না। এতে তাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়।
· নিজেদের কৃষ্টি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের মধ্যে থেকে যতদুর সম্ভব শিশুকে তার নিজের পছন্দ অনুযায়ী পরিচালনা করতে হবে।যেমন-শিশু যদি নিজের পছন্দের কবিতা পড়তে চায় তাহলে নতুন কবিতা নিয়ে তাকে চাপ দেয়া যাবে না।
কাজের নির্দেশনাঃ
· চারু ও কলার কোন ধরণের জিনিষ শিশুর সামনে মডেল হিসেবে আনা যাবে না।কারন মডেল দেখলে সে অনুকরণ প্রিয় হয়ে উঠবে,আর তার সৃজনশীল কাজে বাঁধা আসবে। যেমন – তাকে বৃত্ত ,ত্রিভুজ এই জাতীয় জ্যামিতির চিত্রের মডেল না দিয়েই বলতে হবে গোল করে আঁক ,লম্বা একটা দাগ দাও ইত্যাদি।
· শিশুদের স্বনির্ভর করার জন্য নুন্যতম সাহায্য দিতে হবে।যেমন- শিশু সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে চাইলে তাকে উঠতে দিতে হবে কিন্তু তার সুরক্ষার জন্য পিছনে থাকা বা একটা হাত ধরে থাকতে হবে।যেন শিশু পরে যেয়ে ব্যথা না পায়।
· শিক্ষন দ্রুত করার জন্য পুরুস্কার একটি মাধ্যম। যেমন – আপনার একটি ছোট হাসিও শিশুর জন্য পুরুস্কার হতে পারে।শিশু যাই ই করুক না কেন তাকে হাত তালি দিয়ে, মুচকি হেসে,সাবাশ বলে,কোলে তুলে নিয়ে,গালে চুমু দিয়ে উৎসাহিত করতে হবে।
· যেকোন সমস্যা সমাধানের জন্য অভিভাবকদের দূরদর্শিতা খুবই প্রয়োজন।যেমন-শিশুর কাছাকাছি বিপদজনক কিছু থাকলে আগেই মাকে সতর্ক থাকতে হবে।ঘরে সুইচ বোর্ড শিশুর নাগালের মধ্যে হলে মাকে বিপদ সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা করে রাখতে হবে এবং সেখানে টেপ বা ফার্নিচার জাতীয় কিছু রাখতে হবে যেন শিশু তা দেখতে না পায়।
· কোন কাজে যদি সীমারেখা নির্দেশ করতে হয় তাহলে শিশুকে একদম স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। যেমন- ছাঁদের কিনারায় শিশু যেতে পারবে না তা তাকে ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে।আর এমন অবস্থায় শিশু যেন তার কথা শুনে তার জন্য অন্য বড় সদস্যাদের কেও একই নিয়ম মানতে হবে।
· পূর্ণ পরিস্থিতি সম্বন্ধে সতর্ক হয়ে পরিদর্শনের জন্য চাতুর্যপূর্ণ ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন – অনেক গুলো শিশুর মাঝখানে একটি শিশু যখন মারমুখী হয়ে যায় তখন অভিভাবকের উচিৎ সেই শিশুর সাথে খেলা করা যাতে অন্য শিশুর সাথে মনমালিন্য না হয়।
· সবসময় শিশুর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার কথা সবার প্রথমেই মনে রাখতে হবে।যেমন-শিশু পানি নিয়ে দুস্টামি করতে চাইলে তার স্বাস্থ্য হানীর সম্ভাবনা থাকলে তাকে পানির পরিবর্তে অন্য কিছু দিয়ে খেলতে দিতে হবে।
· পর্যবেক্ষণ করে শিশুকে বুঝতে হবে যে শিশুর আকাঙ্ক্ষা কি, তার চাহিদা কি, শিশুর আচরণের পিছনে তার কারণ কি ইত্যাদি বিষয়গুলোর দিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে অভিভাবককে।যেমন-শিশু রাগ দেখাচ্ছে কোন কারণ ছাড়াই। এই ক্ষেত্রে আদরের ভাষা দিয়েই কেবল শিশুকে বুঝা সম্ভব।
শিশু এমন অনেক কিছুই করতে চায় যা দেখে বড়রা মনে করেন শিশুর জন্য এটা ঠিক নয়। এমন ক্ষেত্রেও ‘না’ কথাটি এড়িয়ে তাকে অন্য কিছু করতে উৎসাহ দিতে হবে।মনে রাখবেন শিশুর মন কাঁদা মাটির মতোই নরম তাই তার মন ভুলানো অনেক সহজ। কিন্তু শিশুর সাথে পেরে না উঠলে নিজেই শিশু হয়ে যাবেন না। বকা,মারধোর ছাড়াও শিশুকে বিভিন্ন কাজ থেকে ফেরানো যায়। তবে শিশুর জন্য ক্ষতিকর কাজ ছাড়া অযথা অন্যান্য কাজ থেকে তাকে ফিরানোর চেষ্টা করবেন না। যেমন- শিশু গেইট খুলতে গেলে আপনি বারন করলেন, রিমোট হাতে নিলেও আপনি তা নিয়ে নিচ্ছেন হয়তশিশুর পছন্দের চ্যানেলটিই ছেরে দিলেন,শিশু ঘর ময়লা করছে তাই তাকে যখন তখন খেলতে দিলেন না ইত্যাদি এই সকল কাজে শিশুর কোন ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল না তবুও আপনি তাকে বাঁধা দিলেন।এর পর দেখা যাবে শিশু কখন ছুরি ধরেছে আর তখন ও আপনি বাঁধা দিলেন,কারেন্টের বোর্ডে হাত দিয়েছে আর আপনি তাকে ধমক দিলেন ইত্যাদি সকল কাজে বাঁধা দেয়ার পর ও শিশু এই থেকে কিছুই শিখতে পারলো না। কারণ তাকে সকল কাজেই বাঁধা দেয়া হয় তাই তার জন্য ক্ষতিকর কোনটি আসলে তা সে বুঝে না। আর এসবের কারণে শিশুর মেজাজ হয় খিটখিটে,মারমুখি।
শিশুর যেকোন আচরণের জন্য শিশু দোষী নয় বরং তার পরিবেশ দায়ী।
দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার সব সময়ই হয় কিন্তু তাই বলে শিশুকে উত্যক্ত করে বা নিজের মন মত পরিচালনা করে সুদূর প্রসারী কোন ফল পাওয়া সম্ভব নয়।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)