মেইক ইউরসেল্ফ (রুপচর্চা,পারসোনালিটি,ক্যারিয়ার,স্বাস্থ্য)

ডিম নিয়ে যত কথা..

ডিম নিয়ে যত কথা..

আজ বিশ্ব ডিম দিবস।

বাঙালি হোক,এমেরিকান অথবা চাইনিজ।পৃথিবীতে ডিমের কদর সব দেশে,সব সমাজে এবং সব স্তরের মানুষের কাছেই অনেক বেশি।সকালে নাস্তার টেবিলে বা বিকেলের আড্ডায় ডিম তো থাকবেই।ঘরের খাবার ছাড়াও দেখা যাচ্ছে যতধরনের ফাস্টফুড বা রেস্টুরেন্ট আছে প্রায় সব খাবারেই ডিমের হালকা ছোয়া হলেও থাকে।এককথায় ডিমকে বিশ্বখাদ্য বললেও ভুল হবে না।

কিন্তু এই ডিম কি শুধু খাদ্যেরই স্বাদ বাড়ায় নাকি আমাদের স্বাস্থ্যের ও!!

লোকে বলে, ডিম খেলে ভুড়ি বাড়ে,দিনে একটার বেশি ডিম খাওয়া উচিত না,কুসুম খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে,এক্সামের সকালে ডিম খেলে খাতায় ডিম পারে,শনিবারে ডিম খাওয়া যাবে না...হেনতেন আরো কত কি!!

1542909-askim-yumurta-kafa
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক এক গবেষনায় এইসব ভ্রান্ত ধারনার সঠিক সমাধান এসেছে।ডিম খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা ততটা বৃদ্ধি পায় না, যতটা এত দিন ধারণা করা হতো। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষ দৈনিক গড়ে ৩০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত কোলেস্টেরল গ্রহণ করতে পারবেন। আর একটি ডিমে রয়েছে মাত্র ২০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল। ডিমের সাদা অংশ খেলে সমস্যা তো হবেই না, এমনকি কুসুমসহ সম্পূর্ণ ডিম খেলেও উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি ও হৃদরোগের ঝুঁকি অতটা নেই।
সকালের নাশতায় একটি ডিম কোলেস্টেরল মাত্রার ওপর তেমন প্রভাব ফেলে না, যতটা প্রভাব ফেলে মিষ্টি বা চর্বিজাতীয় খাবার। তাই দৈনিক খাবার থেকে বরং ছেঁটে ফেলুন লাল মাংস, মাখন, চিনির তৈরি খাবার যেমন বেকারি বা প্রক্রিয়াজাত খাবার; ডিমকে দুষিয়ে লাভ নেই। কেননা ডিমে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, ভিটামিন বি১২, রিবোফ্লোবিন, ফলেট ও ভিটামিন ডি রয়েছে। তবে কিডনি অকেজো রোগী, অ্যালার্জি-জাতীয় সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম খাবেন।

একনজরে ডিমের কিছু গুনাগুন দেখে নেয়া যাক। যা দেখে আপনি চোখ বন্ধ করে ডিমের উপর আস্থা রাখতে পারবেন।
Sunny-Side-Up
★ কেবলমাত্র ডিমেই রয়েছে ভিটামিন ডি। যা পেশীর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

★ এর মধ্যে আছে ভিটামিন এ। যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। ডিমের কেরোটিনয়েড, ল্যুটেন ও জিয়েক্সেনথিন বয়সকালের চোখের অসুখ ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। এই একই উপাদান চোখের ছানি কমাতেও সাহায্য করে।

★ এতে আছে ভিটামিন ই। এটি কোষ এবং ত্বকে উত্‍পন্ন ফ্রি র‍্যাডিক্যাল নষ্ট করে দেয়। এবং স্কিন ক্যানসার প্রতিরোধ করে।

★ ডিমের সবচেয়ে বড়ো গুণ এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। ব্রেকফাস্টে রোজ একটি ডিম মানে সারাদিন আপনার ক্ষুধা কম হবে, খাওয়া হবে কম। গবেষণায় দেখা যায় শরীর থেকে দিনে প্রায় ৪০০ ক্যালোরি কমাতে পারে সকালে একটি ডিম খাওয়া। তার মানে মাসে ওজন কমার পরিমাণ প্রায় তিন পাউন্ড। সমীক্ষা বলছে, ৬৫% বডি ওয়েট, ১৬% বডি ফ্যাট, ৩৪% কোমরে জমে থাকা মেদের পরিমাণ কমাতে পারে ডিম!

★ ডিমে আছে আয়রন, জিঙ্ক, ফসফরাস। মেনস্ট্রুয়েশনের জন্য অনেক সময় অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। শরীর তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ডিমের মধ্যে থাকা আয়রন এই ঘাটতি মেটাতে পারে সহজেই। জিঙ্ক শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। আর ফসফরাস হাড় ও দাঁত মজবুত করে।

★ প্রত্যেক নারীর শরীরে রোজ কমপক্ষে ৫০ গ্রাম প্রোটিনের দরকার। একটি ডিমে থাকে ৭০-৮৫ ক্যালোরি বা ৬.৫ গ্রাম প্রোটিন। সুতরাং চাঙা থাকতে রোজ ডিম খেতেই পারেন।

★ ২০০৩ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় একটি সমীক্ষায় দেখিয়েছে অ্যাডোলেশন পিরিয়ডে বা পরবর্তী কালে সপ্তাহে ৬টি করে ডিম নিয়মিত খেলে প্রায় ৪৪% ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব৷ সঙ্গে এটাও জানিয়েছে, ডিম হৃৎপিণ্ডে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। ফলে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটাই কম থাকে।

★ শরীর সুস্থ রাখার আরও একটি জরুরি উপাদান কোলাইন। কোলাইনের ঘাটতি ঘটলে অনেক সময় কার্ডিওভাসকুলার, লিভারের অসুখ বা নিউরোলজিক্যাল ডিজ-অর্ডার দেখা দিতে পারে। একটি ডিমে প্রায় ৩০০ মাইক্রোগ্রাম কোলাইন থাকে। যা কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম, স্নায়ু, যকৃত্‍ ও মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণে রাখে।

★ নতুন সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ডিম কোলেস্টেরল বাড়ায় না। দিনে দুটো ডিম শরীরের লিপিড প্রোফাইলে কোনও প্রভাব ফেলে না। বরং ডিম রক্তে লোহিতকণিকা তৈরি করে।

★ প্রোটিন শরীর গঠন করে। আর প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে অ্যামিনো অ্যাসিড। একুশ ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড এই কাজে প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু আমাদের শরীর অতি প্রয়োজনীয় নয়টি অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি করতে পারে না। তার জন্য আমাদের প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট নিতে হয়। খাবারের মধ্যে এই প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট হল ডিম। যা ঝটপট শরীরে প্রোটিন উত্‍পাদন করতে পারে।

★ ডিমের মধ্যে থাকা সালফার ম্যাজিকের মতো নখ আর চুলের মান উন্নত করে।

সুতরাং, ডিম খান সুস্থ্য থাকুন। ;) Hatching-Chick-Deviled-Eggs


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)