উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)

ভাতার তুঁই কোম্বে?

ভাতার তুঁই কোম্বে?

 

 ডাক্তার বললেন- পিটাতে পিটাতে মেয়েটার পায়ের সবচেয়ে শক্ত হাড্ডি , টিবিয়া ভেঙ্গে দিয়েছে ওর স্বামী।

মেয়েটা শিক্ষিত, দেখলাম ফর্সা ও । তাহলে অন্যায়টা কোথায় ছিল? খবরে জানা গেলো, দীর্ঘদিন ধরেই স্বামী আর শাশুড়ি যৌতুকের জন্য চাপ দিচ্ছে। এটা সেই চাওয়ার ঘাটতি পড়ার ফসল।

পাশাপাশি আরেক খবরে জানা গেলো, গাইবান্ধার আরেক নির্যাতিতার কথা। স্বামী শাশুড়ির সাথে সাথে নির্যাতনে এখানে যুক্ত হয়েছেন সতীন, অভিযোগ তাই, যৌতুকের জন্যই এই পাশবিকতা। ভদ্র মহিলাকে উত্তম মধ্যমের সাথে সাথে চুল ও কেটে দিয়ে যথার্থ গলাধাক্কা দেওয়া হয়েছে।

আমাদের দেশের বেশিরভাগ মেয়েই বাবার মান সম্মানের দিকে তাকিয়ে বছরের পর বছর কিছু কথিত মানুষের সাথে সংসার করে যায়। বরিশালে স্বামীকে বলে ভাতার। অর্থাৎ যে ব্যক্তি ভাতের যোগান দেন তাকেই ভাতার বলে। যে স্বামী মদ খায়, জুয়া খেলে, পরকীয়া করে কিংবা বউয়ের বাপের টাকা চায় তাকে ঐ অর্থে আর ভাতার বলা যায় না। তারপরেও মেয়েরা তার পা ধরে জীবন কাটিয়ে দিতে চায়।

যে মেয়েটার টিবিয়া ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে, সে যথেষ্ট শিক্ষিত। শিক্ষিত হওয়ার একটা দাবী হচ্ছে তার বিচার বুদ্ধি একটু বেশি কাজ করবে। আসন্ন অশনি সংকেত  আগেই টের পাবে,  অন্তত ভিকটিম হওয়ার আগে নিজেকে সেইফ করবে।

এই যে, এই মেয়েটা! সে কিন্তু অনেকদিন ধরেই ব্যাপারটা নিয়ে টুকটাক মার খাচ্ছে। এরপর বাবার বাড়ি রাগ করে চলেও গিয়েছিল।

তারপর বাবার বাড়িতেই বাচ্চা হয়েছে।  

আসলে মেয়েদের এই চলে যাওয়াগুলো রাগ না বলে, অভিমান বলাই শ্রেয়।রাগে আবেগের যায়গা কম, ঘৃণা বেশি। অভিমানে ঘৃণা নেই, থাকলে যা থাকে তার নাম ভালোবাসাই তো। সদ্য গর্ভাবস্থা থেকে ওঠার পর আবার তার ডাক পড়লো শ্বশুর বাড়ি।

ডাকতে দেরি , যেতে দেরি নেই। যাওয়ার পরের দিনই ভাঙা টিবিয়া নিয়ে হসপিটালে মৃত্যুশয্যা নিলেন। পাহাড় সরে যেতে পারে, এটা বিশ্বাস করা যায়! কিন্তু মানুষের স্বভাব বদলে গেছে ,এটা বিশ্বাস করতে হলে কয়েকবার ভেবে নিতেই হবে । তাইনা?

এই স্বাভাবিক সূত্রটা তার মাথায় খাটেনি। যেদিন স্বামী নামক পশুটাকে চিনতে শিখল, সেদিনই যদি এই  পশুর সাথে থাকবো না  সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতো, তাহলে আজ হয়তো তার এই পঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে হতো না।

শিক্ষিত হয়েও যদি চাকরির বাজারে যায়গা না হয়, অন্তত গার্মেন্টসে চাকরি করে হলেও জীবন কী চালানো যায় না?সেই আত্মবিশ্বাস কেন তৈরি না এতো শিক্ষিত হয়েও?  এই ক্ষেত্রে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের সহ্য ক্ষমতা গণ্ডারের চামড়াকেও হার মানায়।বাসার বুয়াটাও দেখি মদখোর স্বামীকে তালাক দিয়ে মানুষের বাসায় কাজ করে পেট চালায়। যদি ভাতারের ভাত খাওয়াই জীবনের উদ্দেশ্য হয়, তাহলে সে ভাতের ব্যবস্থা যে কোন উদ্যোগী নারীই করতে পারে। তার জন্য নির্যাতক , নিপীড়ক স্বামীর পদলহেন করে থাকাটা খুব জরুরি নয়। 

কথায় বলে দুধ দেওয়া গাইয়ের লাথিও ভালো। কিন্তু লাথি দেওয়া গরুযে পেটে লাথি দিয়ে নাড়িভুঁড়ি পর্যন্ত বের করে ফেলতে পারে, সেটা আমাদের প্রবাদ বলেনা।

সবাই সুখে শান্তিতে জীবন কাটাতে চায়, জানি। এই চাওয়াটাই স্বাভাবিক এবং অন্যায় ও না। কিন্তু সব রোগের ওষুধ যেমন নাপা না, তেমনই সব মানুষের জীবন সমান গতিতে চলেনা। নিজস্ব কোন অন্যায় কিংবা অপরাধ না থাকার পরেও অনেক সময় মানুষ জীবনে ধাক্কা খায়। আর ধাক্কা খাওয়ার নামই আসলে জীবন।

 ভাত কাপড় কিংবা সন্তান প্রতিপালনের দ্বায় চাইলে একজন নারী ও নিতে পারে। হ্যা! পায়ের উপর পা তুলে খাওয়ার জীবন ছেড়ে সেক্ষেত্রে রাস্তায় নামতে হবে। অন্যথায় দুধেল গাইয়ের দেওয়া লাথি ভালো মনে করে লাথি খেতে খেতে একদিন মরতেও হতে পারে সেই ঝুঁকি কেউ নিবে কিনা এটা তার ব্যাপার অবশ্যই।

জানি, অনেকে বলবে অনেক সহজ লেখে ফেলাটা। কিন্তু বাস্তব জীবনে সহ্য করা এতো সহজ নয়। সহজ না হলেও, খুব কঠিন ও কিন্তু নয়। বস্তুবাদী সুখের চিন্তা আর পাছে লোকে কিছু বলার আশংকা ঝেরে ফেলতে পারলে জীবন চলেই যায়। শুধু একটু সাহসের অভাব আমাদের।

চিন্তা করে আসলে কিছুই অর্জন করা যায়না। যখন কোন ইচ্ছা মনে আসে, তার সাথে সাথে উপায় ও আসে।একজন সৌদি নারী শুধুমাত্র নামায না পড়ার কারনে তার স্বামীকে বিয়ের ৫ দিনের মাথায় ছেড়ে দিয়েছেন। আর আমাদের সমাজের বউ পেটানো যৌতুকখোর পুরুষরা তার থেকেও তো বহু গুণে নিকৃষ্ট। জীবন সঙ্গী এটা একটা বড় তাৎপর্যপূর্ণ শব্দ।ভাঙা ঘরেই তো আমরা থাকতে চাইনা, বসবাস উপযোগী না বলে। একজন আস্ত মানুষ, যার কোন মানবিকতা নেই, তার সাথে বসবাস কীভাবে সহ্য করে নেয়, সেটা নারীরাই ভালো জানে। তবে, টিকে থাকাই যে সার্থকতা না তা তেলাপোকা আর শ্বেতহস্তীর জীবন দেখলেই বোঝা যায়। 

এই লেখা গণহারে তালাক দেওয়ার জন্য লেখছিনা। কথায় কথায় সংসার ভেঙ্গে যাক সেটাও কাম্য নয়। আমরা জানি, কতোটুকু চাওয়া আমাদের না পেলেই নয়, এটাকে মৌলিক চাহিদা বলে। একজন মানুষ কোনদিন শতভাগ নির্ভুল হতে পারেনা। কিন্তু আদরের ভাষা তো ময়না পাখি ও বোঝে, তেমনই বোঝে কুকুর ছানা ও। ময়না পাখি খাঁচায় থেকে আদর বুঝে নেয়, আর কুকুরকে একবার আদর করলে তাকে যতোই মারা হোক, তাড়িয়ে দেওয়া হোক, এমনকি গরম ভাতের মাড় তার গায়ে ছুড়ে ফেলা হোক সে আবার কুই কুই করে লেজ নাড়িয়ে ফিরে আসবেই। শুধু আদরের টানে।

 

ঠিক তেমনই , মানুষ ও খুব তাড়াতাড়ি বুঝে নেয়, কে তাকে ভালোবাসে কে বাসেনা। আমরা চাইনা কোন মানুষের জীবনই ময়না পাখির মতো হোক, কিংবা কুকুরের মতো হোক। প্রতিটা মানুষ বিশেষত মায়ের গোত্রের মানুষগুলো , মানুষ হয়েই বাঁচুক। ভাতের গরম মাড় ঢেলে দেওয়া লেজ নাড়ানো কুকুরের জীবন কারোই কাম্য হওয়া উচিৎ নয়। ভাত কাপড় সহ মৌলিক চাহিদা পূরণই শুধু বিবাহিত জীবনের লক্ষ্য নয়। এটাও যদি লক্ষ্য হয়, তাহলেও কিন্তু পরে পরে মাড় খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। এবার সিদ্ধান্ত আপনার............ 


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ