পৃথিবী নামের গ্রহটির সৃষ্টি ৪৫০ কোটি বছর বলে বিজ্ঞানীরা একমত হলেও মানব জাতির বয়স নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলেন নি বিজ্ঞানীরা। শুধু একটি কথা অনস্বীকার্য, পৃথিবীতে প্রথম পুরুষ এবপং প্রথম নারীর আবির্ভাব একই সাথে হয়েছিলো, এবং নারী-পুরুষের একত্রে পথচলা সেদিন থেকেই শুরু হয়েছে। সভ্যতার শুরুতে, সংগ্রহ বা পশুপালন সমাজে শ্রমের পরিমাণ নারী-পুরুষ ভেদে ভিন্ন ছিলো না। তবে পশুপালন ও চাষাবাদের যুগে, মানুষ যখন বসতবাড়ি তৈরী করে থিতু হচ্ছে, তখন সন্তান পৃথিবীতে আনা এবং এর আনুষঙ্গিক ব্যস্ততায় নারী আর পুরুষের কর্মক্ষেত্রে ধীরে ধীরে বিভাজন শুরু হতে থাকে। এ বিভাজন ছিলো সময়ের প্রয়োজনে, সভ্যতার অস্তিত্বের প্রয়োজনে এবং নারী তখনও ‘মানুষ’ ছিলো।
একটি সপুষ্পক উদ্ভিদে ফুলের কাজ হল মৌমাছিকে আকর্ষণ করা, ফল বা বীজ ধারণ করা এবং শিশু গাছের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নিশ্চিত করে আস্তে আস্তে ঝরে যাওয়া। গাছের অন্যান্য অংশের কাজ ভিন্ন, কেউ পানি আনে, কেউ খাবার রান্না করে, কেউ ফুলের দোরগোড়ায় ছুটে পানি আর খাবার পৌঁছে দেয়, উদ্দেশ্য একটাই, বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে সৃষ্টির কল্যাণে কাজে লাগানো। এখানে শ্রমবিভাগ আছে, একাগ্রতা আছে, অসম ত্যাগ আছে, শুধু নেই হানাহানি।
আজকের নারী, যখন মুঠিবদ্ধ করে স্বাধীনতা চায়, তার মনে লালিত ছিমছাম গৃহকোণের স্বপ্ন ভুলে সেটা চায় না। আবার সর্বতোভাবে প্রতিষ্ঠিত একজন নারীকেও হয়তো তীব্র বমনেচ্ছা দমন করে দাঁত চেপে ভুলে যেতে হয় পুরুষ সহকর্মী কিংবা বন্ধুর শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ। আবার কপর্দকহীন হয়েও শুধু নারীত্বের বৈশিষ্ট্যে অথচ ‘নারীত্ব’কে অপমান করেও উন্নতির কথা ভাবতে পারে একজন নারী, যা তার সমবয়সী এমনকি অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন পুরুষও পারেন না। তাহলে কী সেই স্বাধীনতা, যা সমাজের চোখ বন্ধ করে রেখেছে? সম্পূর্ণ জৈবিক যে প্রয়োজনে সৃষ্টিগতভাবেই নারী-পুরুষের যে গঠনগত পার্থক্য, তাকে উপজীব্য করে নারী-পুরুষ উভয়েই আজ ফায়দা লুটে নিতে ব্যস্ত, কেউ ভোগ করে তৃপ্ত, কেউ নিজেকে অজ্ঞানতায় বিলিয়ে দিয়ে আনন্দিত।
নারী-পুরুষ আলাদা সৃষ্টি, তবে এর মধ্যে একটি সুন্দর মেলবন্ধন আছে। কেউ পুরোপুরি নারী, কেউ পুরোপুরি পুরুষ, কেউ এর মাঝামাঝি। সভ্যতার প্রয়োজনেই এদের সৃষ্টি, সুতরাং নিজ তাগিদেই এদেরকে যার যার স্থানে মর্যাদার আসনে আসীন করা সভ্যতার কর্তব্য।
উইমেন এক্সপ্রেসের যাত্রাকাল মাত্র দুই বছর আগে, সে হিসেবে নবীন একটি মুখপাত্র। উৎসাহী ও মেধাবী লেখক-লেখিকা, উন্নত জীবনের জন্য পরিচ্ছন্ন চিন্তা করার মত সংস্কারবিহীন কিছু সমাজকর্মীর মিলনমেলা এখানে। সব মিলে এরই মধ্যে এর অর্জন কিছু কম নয়।
সভ্যতা তৈরী হয় একটি একটি করে করে মানুষের সচেতন পদযাত্রায়, আর ধ্বংস হয়ে যেতে পারে একটিমাত্র অচেতনের ধাক্কায়ও। নারী দিবস প্রতিবছর জাগিয়ে দিক এমন কিছু মানুষকে, তাদের হাতে ধরিয়ে দিক ভালোবাসা আর প্রতিবাদের হাতিয়ার, আমাদের প্রতিটি লেখক-লেখিকা হয়ে উঠুন এক একজন বাতিঘর। আলোর রোদ-মশালে হারিয়ে যাক অচেতনতার বৈরী কুয়াশা।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)