উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)

বউয়ের মতো

বউয়ের মতো

 

 

প্রেমের মায়ায় আত্মসম্মান বিকাতে বিকাতে মেয়েরা বলে- তুমি তো আমার স্বামীর মতোই! বা ছেলেটা মেয়েটাকে বলে- তুমি তো আমার বউয়ের মতোই!
কিন্তু বউয়ের মতো আর বউ দুটা এক জিনিষ নয়, তেমনই স্বামীর মতো হওয়া আর স্বামী হওয়া ও এক জিনিষ নয়। 
শুধু এক বিছানাতে ঘুমালে , লিভ টুগেদার করলেই স্বামী স্ত্রী হওয়া যায় না। স্বামী স্ত্রী হওয়ার বা প্রেমিক হয়ে উপভোগ করার , শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া সবই এক। মাঝখানে শুধু সামাজিক স্বীকৃতি আর কিছু দ্বায় দায়িত্বের গণ্ডিতে বাঁধা পড়াই বিয়ে, যা মানুষের স্বেচ্ছাচারিতাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য অনাদিকাল থেকে চলে আসছে।

অনেক মেয়েরই নাকি প্রেমিকের চোখ মুখের কাকুতি মিনতি দেখে মায়া লেগে যায়। মায়ায় গলতে গলতে একসময় সব দিয়ে দেয়। 
যেটার জন্য মেয়েদের মায়া লাগে, সেটা আসলে ছেলেদের শারীরিক প্রবৃত্তি এবং প্রয়োজন ছাড়া আর কিছুই নয়। 
একবার পূরণ হয়ে গেলে তারপর চাহিদা ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে। কয়দিন পরেই ঠিক গবেষণা শুরু হয়ে যায়, কোথায় কোন খুত। এরপর খুত ধরে বাতিলের আবেদন করে, নতুন সঙ্গী খোঁজে ছেলেরা। এরপর সব হারানো নারী যদি খিস্তি খেঁউড় বা চিল্লাচিল্লি করে তাতে শুধু নিজের মানটাই যায়। 
তাহলে প্রশ্ন তুলতেই পারেন, ঐ ছেলেটার কী কিছুই হারায় না?
হারায় তো বটেই। সেটার দেনা পাওনা বিধাতা বুঝিয়ে দিলেও, মেয়েটার বিধাতার কাছে মজলুম হিসেবে কোন আবেদন করার নৈতিক ভিত্তি থাকে না। আর সমাজ ও বলে- গেছিলা কেন এমন ছেলের সাথে প্রেম করতে? 
এ ক্ষেত্রে নির্যাতিত মেয়েরা আমাদের সাহায্য চাইলেও খুব একটা কিছু করার থাকে না। স্বামীকে স্ত্রী নিপীড়নের জন্য চোখ রাঙ্গানি দেওয়ার সামাজিক সুরক্ষা জাল থাকলেও প্রেমিককে শাস্তি দেওয়ার মতো কোন বিধিবদ্ধ নিয়ম নেই সত্যিই। না ধর্মে না সমাজে। শাস্তি দিলে এ ক্ষেত্রে দুজনকেই দিতে হবে, চাই মেয়েটাই প্রতারিত হোক না কেন!

 

মাঝে মাঝে ইচ্ছা অনিচ্ছায় কিছু বোকা ধরণের মেয়েদের সাথে পরিচয় হয়ে যায়,যারা অতিরিক্ত আবেগি, দুর্বল মানবী। আবার কোন কোন মেয়ে মাত্রারিক্ত চালাক। বেশী বোকা বা বেশী চালাক হওয়া কোনটাই ভালো না। কোন কোন মেয়েকে দেখেছি এক সাথে ৪ জনকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরায়, আবার কোন কোন মেয়ে নিজেই অন্য কারো দড়িতে ঘোরে। 
মানুষ মাত্রই নিজের দুর্বলতাগুলো অন্য কাউকে দিয়ে পূরণ করিয়ে নিতে চায়। যারা একটু কম স্মার্ট তারা চায় স্মার্ট ড্যশিং হ্যান্ডসাম সঙ্গী। আর সেই স্মার্ট সঙ্গীর মন পেতে যে কোন পর্যায়ে নামতে পারে অনেক মেয়েই ।
কিন্তু বোকা মেয়েগুলো জানেনা, যে সম্ভ্রম তারা প্রেমিকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার জন্য বিকিয়ে দিচ্ছে, সেই আকর্ষণই একদিন তুলার মতো উড়তে থাকবে। যার জন্য জীবন ও বাজি রাখতে পারে প্রেমিক, কাজ ফুরালেই তার মধ্যে প্রেমিক আর আকর্ষণ পাবে না। 
মানুষের দাম্পত্যের একটা অংশ জৈবিক হলেও বাদ বাকি পুরোটাই আত্মিক এবং সামাজিক। অনেক নিয়ম আর শর্তে বাঁধা। যে মেয়েটাকে পরিবারের পক্ষ থেকে একটা ছেলের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, সে মেয়েটার গায়ে হাত তোলার সময় সেই ছেলেটা বা তার পরিবারের সদস্যদের একবার হলেও হাতটা কাঁপে বৈকি সেই শর্তগুলোর কথা মনে করে। 
কিন্তু নিজের দায়িত্ব নিজে নিজে নিলে এই আশ্রয়টুকু থাকে না। এই তো ৪/৫ দিন আগের ঘটনা! প্রেমের বিয়ে ছিল নার্গিস নামের মেয়েটার । দেড় মাস ঘুরতে ঘুরতে না ঘুরতেই প্রেমিক রাজমিস্ত্রি বউয়ের উপবৃত্তির আড়াই হাজার টাকা চেয়ে বসে। মেয়েটা দিতে অস্বীকার করলে তাকে শ্বাস রোধে হ... করে দড়িতে ঝুলিয়ে আত্মহ...র কেইস সাজায় প্রেমিক স্বামী।
অথচ, এই প্রেমিকের জন্যই মেয়েটা বাবা মাকে ত্যাগ করেছিল! 
একটা বড় সত্য কথা বলি। শুরুতে মানুষ থাকে অনেকটা অন্ধ। আপনাদের নিজেদের জীবন ঘেঁটে দেখবেন। যে বন্ধুটা বা যে বান্ধুবিটা ভুল মানুষকে পছন্দ করেছে, যে একটু বুঝাতে গিয়েছেন তো তার জন্মের শত্রু হয়েছেন। 
এরপর দিন যাওয়ার পর সেই প্রিয় মানুষটার বিধ্বস্ত অবস্থা দেখেছেন!
সিনেমা নাটকে ভালোবাসা নিয়ে অনেক মহান মহান উক্তি গানের লাইন শোনা যায়। তোকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না, হাজার বাজি রাখবো। এক কথায় মরে যাবো!
কিন্তু বাস্তবতায় আসুন। হাতির ঝিলের সেই ঘটনাটা মনে আছে তো? প্রেমিক যুগল আত্মহ... করতে গিয়েছিল?
ছেলেটা লেকে ঝাপ দিলেও মেয়েটা ভালোবাসার সাথে মরে যেতে তো পারেনি। 
যা বলছিলাম। মেয়েদের জন্য এটা খুব জরুরী যে সীমালঙ্ঘন না করা। তার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে, নিছক প্রেম করে অন্যকে ফ্রি বিনোদন না দেওয়া। 
আর একান্তই যদি ভালো লেগে যায়, তাহলে বিয়ের আত্মিক মানবিক দিকের শর্তগুলোতে দুজনেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া। কিন্তু তার আগেই যদি মন প্রাণ দেহ সব দেবতার পায়ে অর্ঘ্য দিয়ে বসে থাকেন , সে ক্ষেত্রে দেবতা পূজার ফুলে কম পেয়ে নতুন পূজারী খুঁজে নিলে দেবতাকে কী আর বিশ্বাসঘাতক বলতে পারবেন? অথবা, বলেই বা কী লাভ? হারানো সম্মান কী লাখ চেষ্টায় ও ফেরত পাওয়া যায়? 
মধু খেয়ে ভ্রমর পালালে অদৃষ্টকে দোষ দিয়ে লাভ হবেনা। 
জীবন আমাদেরকে সব রাস্তাই দেখায় , ভালো মন্দ দুই পথই আমাদের সামনে উন্মোচন করে। বাঁকা রাস্তায় যেয়ে অযথা জীবনকে দোষ দিয়ে লাভ কী বলুন?


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ