উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)

উচ্চতা একটা সাইজ মাত্র

উচ্চতা একটা সাইজ মাত্র

 

 

বউটার প্রতি আর আকর্ষণ বোধ করছি না। কারণ- বিয়ের সময় তো বুঝিনি! বউটা তো আসলে কালো আর খাটো!
এই কথা সেদিন একজন খুব আক্ষেপ করে বলছিল। 
৩ ইঞ্চি বলে অনেক সময় খাটো মানুষকে বিদ্রুপ করা হয়। কয়দিন আগে একজনের জন্য একটা জামা কিনতে গিয়েছিলাম। দোকানিকে সাইজ বলার পর দাড়িয়ে থাকা ডলটা দেখাল। বলল- এমন হবে?
আমি বললাম- এটা কয় ফিট! 
বলল - ৬ ফিট! এবং যা শুনলাম ডলের একটা নির্দিষ্ট মাপ আছে, সাধারণত এই মাপেই সব ডল বানানো হয়। 
পুতুল তো মানুষ বানায়। নির্দিষ্ট উপাদান কারখানায় নির্দিষ্ট ছাঁচে ফেললেই হয়ে যায় সুন্দর একটা পুতুল।
কিন্তু মানুষ কী পুতুল? মহাগ্রন্থে বলা হয়েছে- আমি মানুষকে উত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি। এই বলেই তো সার। কয় ফিট লম্বা হলে একজন মানুষ উত্তম মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে তা বলা হয়নি। 
বারবি ডল নিয়ে দুনিয়াবাসির গবেষণার অন্তঃ নেই। উহাই নাকি সুন্দরী নারীর স্ট্যান্ডার্ড! প্রশ্ন জাগে- তাহলে মানুষ কী এই প্রমাণ করতে চায় যে স্রস্টার চেয়েও তারা বড় স্রস্টা? (নাউজুবিল্লাহ)। কারন, বারবি তো মানুষের তৈরি, তাহলে বারবির মাপেই যদি মানুষকে মাপা হয় তাহলে স্রস্টা হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব কার বলে আমরা মেনে নিচ্ছি?
এটা কি এক ধরণের শিরক নয়?
কতোটুকু উচ্চতার ছেলের সাথে কতোটুকু উচ্চতার মেয়েটা মানাবে সেই হিসাব সমাজের সবাই জানে। এবার শুধু উচ্চতা আর জাতে ওঠার মতো গায়ের রঙের বউ হলেই চলবে। মাস শেষেই বুটিক হাউজে যেয়ে ২০ হাজার টাকা বেতন পাওয়া স্বামীর থেকে ২ টা শাড়ি, কিংবা দামী রেস্টুরেন্টে খেতে চাওয়া, ফেইসবুকে সেলফি দিতে চাওয়ার খবর রাখাটা তুলনামূলক গৌণই। 
অন্ততঃ গবেষণা কিন্তু তাই বলে! মেয়ের স্বভাব চরিত্র মানসিকতার মূল্যায়ন করে মাত্র ১০ ভাগ মানুষ। বাকি ৯০ ভাগেরই প্রধান চাওয়া লম্বা ফর্সা বউ।
আর যারা বিয়ের পর বউয়ের প্রতি আকর্ষণ হারান এইসব অজুহাত তুলে, আমার ধারণা এদের বেহেশতে দিয়ে আসলেও এরা হুর পরীতেও বৈচিত্র্য খুঁজবে। কারণ, মনের প্রশান্তি যার নেই তার আত্মা ভরানো খুব সহজ বিষয় না। 
নুমান আলী খানের ফাইন্ডিং ইনার পিস এ শুনেছিলাম, মানুষের চাহিদার কোন সীমা নাই। তাই কারো মনেই কোন শান্তি নেই। একমাত্র আল্লাহর স্মরণই মানুষের সন্তুষ্টি এনে দিতে পারে। 
কেউ যদি কালো খাটো বউটার দিকে তাকিয়ে স্রস্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ভাবে তাহলে তার অন্তরের শান্তি ছিনিয়ে নেয় , এমন দুঃসাধ্য কার আছে?

আকর্ষণ কী উচ্চতা আর গায়ের রং দিয়ে মাপার বিষয়? মানুষের ব্যক্তিত্বের একটা প্রবল আকর্ষণ থাকে। নেলসন ম্যান্ডেলা তো কালো ছিলেন। কোন আকর্ষণে পৃথিবীর সাদা সাদা মানুষগুলো তাকে শান্তি পুরস্কার দিয়েছিলেন?
সংসার একটা ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। বহির্বিশ্বে যদি ব্যক্তিত্বই রাষ্ট্র চালনার মূল মন্ত্র হয়, তাহলে সংসারের আকর্ষণের মূল মন্ত্র ও এটাই হওয়া উচিৎ।

 

যে মেয়েটা সুরেলা কণ্ঠে কুরআন পড়তে পারে, ওটার কী আকর্ষণ হতে পারে না? যে মেয়েটা এই লোক দেখানোর যুগেও অন্যকে দেখিয়ে বেড়ায় না, এই ঋজু স্বভাবের কী আকর্ষণ থাকতে পারে না?
যে জীবন জগতের উদ্দেশ্যকে শুধু ভোগের দৃষ্টিতে দেখে না ঐ মানসিকতার, এমন ব্যক্তিত্বের তীব্র আকর্ষণ যদি শুধু চামড়ার রং আর উচ্চতার কাছে হেরে যায়, তাহলে কে হেরে যায় বলতে পারেন? 
হেরে যায় ঐ ব্যক্তিটির ব্যক্তিত্ব, আর মানুষ চিনতে পারার ক্ষমতা। যে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সে মুসলিম জাতির অন্তর্ভুক্ত, যে তাকওয়া সৃষ্টিকে ভালবাসতে শেখায় হেরে যায় ঐ স্রস্টা ভীতির মনোবল। জয়ী হয় প্রবৃত্তি। 
কয়দিন আগে এফবিতে রিকি নামের এক ৩ ফিট লোকের ছবি দেখলাম। ৫ ফিট ৩ ইঞ্চি লম্বা স্ত্রী আর বাচ্চার সাথে। লোকটা বামনের চেয়েও ছোট। কিন্তু সুখী দাম্পত্যের মুহূর্ত ধরে রাখার জন্য তার সুন্দরী স্ত্রী বিচের বালিতে বসে সন্তান সহ ছবি তুলেছে। 
ভাবছিলাম , লোকটার হয়তো এক সময় বামন হওয়ার জন্য মনে খুব দুঃখ হতো। কিন্তু এমন মমতাময়ী স্ত্রীর জন্য জীবনটা হয়তো তার কাছে আশীর্বাদ।
নেপলিয়ান ছিলেন ৫ ফিট দুই ইঞ্চি এক আগ্রাসী সম্রাট। উচ্চতা তাকে পৃথিবীর খ্যাতি থেকে দূরে সরাতে পারেনি। সুন্দরী , উঁচা লম্বা ফর্সা রমণীকুলে তিনি বহু ভালোবাসার বীজ বুনে গেছেন সম্রাট সুলভ প্রজ্ঞা আর ব্যক্তিত্ব দিয়ে। 
উচ্চতা একটা সাইজ মাত্র, চিন্তার দৈর্ঘ্য প্রস্থ নয়। মেধার আকাশ নয়, নিউরনের সেলগুলোর পরিপক্কতার ও কোন চিত্র উচ্চতা বহন করেনা। 
হ্যা। আপনাকেই বলছি। 
দৃষ্টি ভঙ্গি বদলান, জীবন বদলে যেতে বাধ্য


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ