সাহিত্য

বিড়ালের ভাষা

বিড়ালের ভাষা

টুপ করেই চড়ুইটা মরে গেলো মরে গেলো না- আসলে বলা উচিত হ... করা হলো! কিছুক্ষণ আগেও ছোট ছোট ডানা নিয়ে মুক্ত আকাশে ঘুরে বেড়াতো এক শহুরে বিড়ালের শিকার হয়ে গেলো!biral

কয়েক মুহূর্ত আগে চড়ুইটা ছড়িয়ে দেওয়া রুটির টুকরো খাচ্ছিলো টুক টুক করে বিড়ালটার দিকে তাকিয়ে বড় রাগ হলো! এত মায়াবী একটা পাখিকে হ... করতে পারলো সে

জীবনেও এই নিষ্ঠুর বিড়ালকে খেতে দেবো নাবলছিলাম

ছোটভাই বললো- ‘তাহলে তুই যখন মুরগির গোশত খাস নিজেকেও কি তোর নিষ্ঠুর মনে হয়?’

এই বিড়ালটার সাথে মাঝেমাঝে আমি কথা বলতাম রান্নাঘরের জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে খেতে দেওয়া সহজ ওই জানালায় দাঁড়িয়ে আছি সে হয়তো এসে দাঁড়িয়েছে ছাদের দেয়ালের ওপর

এই যে শোনেন- আপনি কেমন আছেন? শুনলাম আপনার নাকি বন্ধু জুটেছে?
ম্যাঁয়াও (রুটির টুকরা শেষ আরেকটা দাও)
দিচ্ছি সে নাকি কাদের বাসার পোষা আদুরে বিড়াল তা আপনার তো চালচুলো নেই ভাবছি আপনাদের বন্ধুত্ব হলো কেমন করে!
ম্যাঁয়াও ম্যাঁও (রুটিটা একটু মাছের ঝোলে ভিজিয়ে দেবে? বড় স্বাদ লাগে!)

অথবা আরেকদিন-

আচ্ছা বিড়াল-সাহিত্য বলে কি কিছু আছে?
ম্যাঁয়াও ম্যাঁয়াও (নাহ আমরা সাহিত্য করি না আমরা জীবন যাপন করি বুঝলে?)
সে কি! মুখে মুখে প্রচলিত কোনো গল্প- ছড়াও নাই?
ম্যাঁও ম্যাঁয়াও (তোমাদের কবির লেখা- ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়- পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’- কবিতাটা আমাদের সমাজে বেশ জনপ্রিয় গেলাম- রুটির জন্য ধন্যবাদ!)

কী জানি কী বলতো! আমার নিজেরো সব মনে নেই কী বকবক করতাম! যেমন- রাস্তা চলতে চলতে দেখা সব দোকানের নামই কি আর মনে রাখা যায়?

আমি বিড়ালটার কোনো নাম দিই নি কি আমার যে আমি নাম দেবো? হলি গোলাইটলিরও (ব্রেকফাস্ট অ্যাট টিফানিস এর নায়িকা) একটা বিড়াল ছিলো যাকে কি না সেক্যাটবলে ডাকতো হলি বলতো-

“Poor cat! Poor slob! Poor slob without a name! The way I see it I haven’t got the right to give him one. We don’t belong to each other. We just took up one day by the river. I don’t want to own anything until I find a place where me and things go together…

I’m like cat here, a no-name slob. We belong to nobody, and nobody belongs to us. We don’t even belong to each other.”

আমার ছোটবোন বিড়ালটার একটা নাম দিয়েছে তার ধারণা এটা তার বিড়াল আমি ওকে বোঝাতে যাই নি- কাল থেকে তুমি খাবার না দিলে আর আসবে না তোমার কাছে! অন্য কোনো জানালা খুঁজে নেবে

আমার’ – শব্দটা উচ্চারণ করতে সাময়িক আনন্দ হয়! সময় পেরিয়ে গেলে বুঝতে পারা যায় কী কীআমারআর কোনগুলোআমার নয়’ 

বিকেলে বিড়ালটা এসে আবার মিউ মিউ করছে জানালার নিচে কেমন করুন চোখ না দেখার ভাণ করেউত্তরাধিকারপড়া শুরু করলাম চড়ুই-মারার দৃশ্যটা ভুলতে পারছি না বিড়ালটার দোষ নেই জানি

ঝুপ করে বৃষ্টি শুরু হলো সে ছাদে টবের পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে আর একটু একটু কাঁপছে মনে হলো ডাকছে না আর নীরবতাও কি ভাষা নয়? এটা হয়তো অভিমান? নাকি ক্ষমা-প্রার্থনা? দুঃখ পেয়েছি বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইছে নাহলে খামোখা বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছে কেন

বিড়ালের ভাষা আমরা বুঝি না মানুষের ভাষা বুঝি কি

জুলাই, ২০১৫, ঢাকা। 


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)