বিবিধ

মানুষ খুঁজিয়া ফিরি জনতায়, মানুষ কই?

মানুষ খুঁজিয়া ফিরি জনতায়, মানুষ কই?
  আমার বন্ধু আমাকে জিজ্ঞেস করলো যে হিজাব পরা সত্ত্বেও কখনো কোনো ইভটিজিংজাতীয় হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়েছি কী না। জানালাম- হয়েছি! কিন্তু একজন মেয়েকে গড়পরতা যতখানি হ্যারাসড হতে হয় তারচেয়ে সংখ্যায় ও মাত্রায় অনেক কম, আলহামদুলিল্লাহ! হিজাব অবশ্যই মুসলিম নারীর মর্যাদা রক্ষার একটি বড় নিয়ামক শক্তি! ব্যক্তিগতভাবে আমি আভরণেই নিজেকে অনেক বেশি নিরাপদ মনে করি, নিরাভরণে নয়! এই নববর্ষে যা ঘটলো এধরণের ঘটনা প্রতিবছর ঘটছে- নববর্ষে কি বইমেলায়, তরুণী হোক কি প্রৌঢ়া- হোক শিশু! শালীন- অশালীন নির্বিশেষে। কেবল *পোশাক* দায়ী হলে তো এসব ঘটতো না। সূরা নূরের ৩০ নং আয়াতে পুরুষের পর্দার (দৃষ্টি সংযত রাখা ও লজ্জাস্থানের হিফাযত) পর ৩১ নং আয়াতে নারীর পর্দার (দৃষ্টি সংযত করা, হিজাব ও লজ্জাস্থানের হিফাযত) কথা বলা হয়েছে! আল্লাহ ভারসাম্যপূর্ণ একটি ব্যবস্থার কথা বলছেন!  আমরা পড়ে আছি ‘জামা’তে- সমস্যা কিন্তু ‘আপনা’তে ও ‘আমা’তে! আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে, আমাদের কাজে। এটা খুব অ্যালার্মিং ব্যাপার যে, ভিকটিমের উপর দোষ চাপিয়ে আমরা প্রকারান্তরে প্রকৃত অপরাধীর পক্ষে সাফাই গাইছি! আরেকটি স্কুল অব থট আছে। এরা তথাকথিত নারীবাদী ও প্রগ্রতিশীল (এই টার্ম কি তাদের জন্য ব্যবহার করা উচিত??)। তারা জামা’তে স্বাধীনতা-র দলে। এরা মনে করেন মেয়ে যত পোশাক বর্জন করতে পেরেছে সে তত স্বাধীন হয়েছে। তারা পোশাক নিয়ে কথা বলা ‘ব্যক্তিস্বাধীনতা’য় হস্তক্ষেপ বলে মনে করেন। আপনি শালীনতার কথা বলতে আসলে তারা আপনাকে ‘মৌলবাদী’ ‘গোঁড়া’ ‘অনগ্রসর’ ও ‘অসুশীল’ গোত্র বলে চিহ্নিত করবে। তারা হয় হিউম্যান সাইকোলজি বোঝে না অথবা না বোঝার ভান করে। এইসব ঘটনা কি খুব ভয়ংকর একটি জাতিগত ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে না? আমাদের সাংস্কৃতিক-সামাজিক মানবিক বোধগুলোর দেউলিয়াত্ব প্রকাশ করছে না? সরকার হয়তো এবারও এই পশুদের উপযুক্ত বিচার করবে না- এভাবে ১৪২২ এর পার পেয়ে পাওয়া অপরাধীরা জন্ম দেবে শতাব্দীর অসংখ্য মানুষরূপী জানোয়ার, বায়োল্যজিকাল না হোক, মানস-সন্তান! তাই প্রতিবাদ- প্রতিরোধ তো চালিয়ে যেতেই হবে! সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে! সমস্যার গোড়া ও উৎপাটনের পথগুলো অনেক বিস্তৃত আলোচনা ও বিতর্কের ব্যাপার। ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক পর্যায়ে কিছু পরিবর্তন দিয়েই সুদিনের শুরু হতে পারে… তো, পরিবর্তন আপনাকে- আমাকে দিয়েই শুরু হোক না! বুকে হাত দিয়ে শপথ করি, আসুন! ভাইয়া, বলুন! নারী (পড়ুন মানুষ) হোক সে আমার ধর্মানুসারী কিংবা অন্যধর্মের কিংবা কোনো ধর্মেরই নয়- হোক পর্দানশীন কিংবা পর্দাহীন, শালীন কি অশালীন- আমি স্বীয় দৃষ্টি সংযত রাখবো, আমার ভেতরকার অনুচিত/ অযাচিত ইচ্ছেকে দমন করবো! আপু! আপনি শপথ করুন, – অন্য পুরুষের চোখে আবেদনময়ী হতে চেয়ে মূল্যবোধকে বিসর্জন দেবো না! গায়ের রঙ, দেহের মাপ, আবেদনময় মেক’আপ-গেট’আপ, ভ্রু ও ঠোঁটের ভঙ্গি ইত্যকার রাবিশ জিনিস নিয়ে না ভেবে আমার মানবিক সত্তার অগ্রগতি নিয়ে ভাববো। বাহ্যিক ও আত্মিকভাবে আমি সুন্দর-পরিচ্ছন্ন- স্মার্ট ও মার্জিত হবো! ভাইয়া! এবার আপনি বলুন- এই জীবনে আর কোন পর্ন সাইট ভিজিট করবো না, কোনো পর্ন মুভি/ভিডিও দেখবো না, আমার সামনে কেউ পর্ন দেখলে/ আদান-প্রদান করলে / কথায় বা কোনো কাজে পর্নকে প্রমোট করলে সমস্ত শক্তি দিয়ে রুখবো! আপু! বলুন- টিভিতে, পত্রিকায়, বিলবোর্ডে, সাহিত্যে, বিজ্ঞাপনে, চলচ্চিত্রে যারা আমার নারীসত্তাকে, মানবসত্তাকে, বুদ্ধিবৃত্তিক সত্তাকে ছাপিয়ে আ্মাকে স্রেফ একটি ‘সে...ুয়াল অবজেক্ট’ রূপে প্রদর্শন করছে- তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো! আমি আমার সৌন্দর্যকে, আমার নারীত্বকে পুঁজিবাদের কাছে, সস্তাদরের প্রশংসার কাছে, খ্যাতির কাছে বিক্রি করবো না! ভাইয়া/ আপু! আসুন শপথ করি, মানুষের মর্যাদা নিয়ে জনসমাবেশে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথার তুবড়ি ছুটিয়েই নিজের কর্তব্য সমাধা করা হয়েছে ভাববো না- কথায়, কাজে, প্রকাশ্যে, গোপনে, রাজপথে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে- সবখানে আমি মানবাধিকার রক্ষায় আমার কর্তব্য পালন করে যাবো! আমার সামনে কাউকে নির্যাতিত হতে দেখলে আশপাশের মানুষদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করবো, কাউকে না পেলে একাই দাঁড়াবো নির্যাতিতের পাশে। কবি ফররুখ বলে গেছেন আক্ষেপের সুরে, ‘মানুষ খুঁজিয়া ফিরি জনতায়, মানুষ কই?’ মঙ্গলশোভাযাত্রায় কিছু প্যাগান প্রতীক নিয়ে পদযাত্রা মঙ্গল বয়ে আনবে না! ‘মঙ্গল’ আসবে আমাদের মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তনে। আসুন, এই নববর্ষে শপথ নিই- আবার আমরা মানুষ হই, আমাদের সন্তানেরা বেড়ে উঠুক মানুষের মাঝে! ২০ এপ্রিল, ২০১৫, ঢাকা।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ