উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)

মানিয়ে নেওয়ার খেলা

মানিয়ে নেওয়ার খেলা
domestic-violence এতো কিছুর পরেও মেয়েদেরকেই মেনে নিতে হয়। ছোট বেলার একটা ভয়াবহ স্মৃতি মনে পড়ে গেলো । দুঃসম্পর্কের এক আত্মীয়া তার বর সহ ঢাকায় বসবাস করতো। ৩ টা ছেলে আর একটা মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার। খুব বেশী পুরাতন না। কিন্তু আত্মীয়ার বাচ্চা কাচ্চার খুব বেশী শখ ছিল, তাই অল্প বয়সেই চার সন্তানের জননী। গ্রাম থেকে তার ছোট বোন আসে ঢাকায় পড়ালেখা করতে। এরপর কীভাবে কীভাবে জানি কতদূর। শত সেক্রিফাইস করা বড় বোনের স্বামীর সাথে ছোট বোনের প্রণয়। অতঃপর চার সন্তানের জননী স্ত্রীকে রেখে শালির হাত ধরে কোলের সন্তানকে নিয়ে দুলাভাই আর শালীর ঢাকা ছেড়ে পলায়ন। এরপর ঘটনা সমাধানের আশায় সেই আত্মীয়ার আমাদের বাসায় এসে অবস্থান নেওয়া।কারণ লোকটা বউকে খুব বেশী অসহায় করে রেখে গেছে। ঘরে ভাতের চাল পর্যন্ত নেই। আমার ছোট মনে কী নিদারুণ দাগ আর ঘৃণাই না জন্ম দিয়েছিলো সেই ঘটনা! ভাবলেই কষ্ট লাগে। দিনের পর দিন ফোনে স্বামীর সাথে কান্নাকাটি, বাচ্চাদের নিয়ে তার সে কী আহাজারি! অবশেষে, বিভিন্ন ভয় ভীতি দেখিয়ে ছোট বোনকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করানো হল স্বামীর অধিকার ছেড়ে দিতে। যদিও মায়ের পেটের বোনকে বিয়ে করলে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক তালাক হয়ে যায়। তারপরেও ৪ টি ছেলে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সেই যে মেয়েটি সেই বিশ্বাসঘাতক স্বামীর সাথে আবার সংসার শুরু করলো, তাই অবাক বিষয়। এরপরে অনেক পানি গড়িয়েছে। ছোট বোনের বিয়ে হয়েছে সুখে শান্তিতে আছে। উনি সেদিন ফোন দিলেন অনেক বছর পরে। এখনো চলছে সংসার ধর্ম যথারীতি যা শুনলাম। এই ঘটনা দেখেই বুঝেছি- যতো যাই হোক, যতো বিশ্বাসঘাতকতাই ছেলেরা করুক, যতোই দ্বিমুখীতা দেখাক না কেন ঘটনার মেনে নেওয়ার পার্টটা যেন শুধু মেয়েদের জন্যই বরাদ্দ। এতো গেলো ছোট বেলার কথা। খুব সম্প্রতি চোখের সামনে আরেকটা ঘটনা দেখলাম। মেয়েটা কালো, এবং বহুমুখী গুণের অধিকারী। গ্রামের ছেলে , নিজে যেচে পড়ে মেয়েটার পরিবারে প্রস্তাব দেয়, নিজের পরিবারের কারো পছন্দের কথা না ভেবেই । অতঃপর সব ঠিক হওয়ার পরে নিজেরই এক আত্মীয়কে দিয়ে ফোন দিয়ে সম্পর্ক ছেদ করে মেয়েটির সৌন্দর্যর ব্যাপারটা ছাড় দিতে পারবেনা বলে। এতো বড় বিশ্বাস ঘাতকতার পরেও ছেলেটি বারবার ফিরে আসে, কোন এক পার্থিব স্বার্থে। এখানেও রিস্ক মেয়েটারই। আজ যে সৌন্দর্যের কথা ভেবে , পারিপার্শ্বিকতা আর পরিবারের চাপে প্রস্তাব ফিরিয়ে নিতে পারে, কাল সে বিয়ের পর নিজেকে ফিরিয়ে নিবেনা সৌন্দর্যের জন্য তার কী আদৌ কোন ঠিক আছে? কিন্তু এখানেও মানিয়ে নেওয়ার দ্বায় মেয়েটারই যেন। বিশ্বাসঘাতক কাউকে চোখ বন্ধ করে নিজের জীবন সমর্পণে খুব বেশী ভাবার ও সুযোগ নেই মেয়েটার। এই কারণে সংসার না টিকলেও মেনে নিতে হবে মেয়েটাকেই! ভালো মন্দ যাই হোক, মানিয়ে নেওয়ার দ্বায়টা যেন শুধুই নারীর। অদ্ভুত এই জাতি! জঠর জ্বালা থেকে শুরু করে পদে পদে ঘাত প্রতিঘাত, বাবার বাড়ির বঞ্চনা শ্বশুর বাড়ির লাথি উশটা , ছেলের অবহেলা সব কিছুতেই মেয়েরা মানিয়ে নিয়ে যায়। নিঃশব্দে। কিন্তু জানেন কী! এইসব মানিয়ে নেওয়া মানসিক চাপকেই বিশ্বের আরেক প্রান্তে ডোমেস্টিক ভায়লেন্স বলা হয়ে থাকে। যেটাকে বাংলাদেশের মেয়েরা খুব স্বাভাবিক নিয়তির মেনে নেওয়ার খেলা হিসেবে দেখে থাকে।এতোটা মানিয়ে নিতে পারে বলেই হয়তো মেয়েরা মমতাময়ী।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ