উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)

বয়ফ্রেন্ড

বয়ফ্রেন্ড
images (15) ইমতির আজকে ভীষণ মন খারাপ। তমা তাকে এড়িয়ে চলছে কিনা সে ঠিক বুঝতে পারছে না। মনে পড়ে যায় শৈশবের কথা। তমাকে চিঠি পাঠাতে ষে গাঁদায় গাঁদায় কাগজ কেটে বক্সে ভরে দিতো।  এরপর তমা সেই গিফট মহা আনন্দে খুলে ঘর কাগজে কাগজে একাকার করে ফেলত, আর মায়ের বকা খেত। একবার ইমতি তমাকে ৪ হাত লম্বা একটা চিঠি লিখল, তমা তার সাথে প্রতিযোগিতা করে ৮ হাত লিখল। কি এতো কথা ছিল ২ জনের মধ্যে ভাবতেই ইমতির অবাক লাগে। আর এখন মাসের পর মাস তমা ইমতির সাথে কথা বলে না, রাস্তায় দেখলেও উল্টা দিকে চেয়ে থাকে, কেন! আগে একটা মেসেজ পাঠাতে পাশের ঘরের খালামনিদের মোবাইল চেয়ে নিতে হতো, কিন্তু সেই মেসেজ পেয়ে তমা কতো ই না খুশী হতো। আর এখন ২ জনেরই মোবাইল আছে ২ জনই চাইলে যখন তখন কথা বলতে পারে। একবার কি হোল। তমার জন্মদিনে বাসায় কোচিঙের নাম করে ২ জনই ফাঁকি দিয়ে ওয়ান্ডারল্যান্ডে গেলো। দুনিয়াটা তখন নতুন নতুন লাগে খালি। কিন্তু, কপাল খারাপ। তমার আব্বু দেখে ফেললো ওদেরকে গুলাশানের রাস্তায়, বাড়ি ফিরে সেই যা বকা দিলো তমাকে। আহারে! আর আজ সেই তমা, সেই প্রিয় বান্ধুবি একটা ছেলের কারনে এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিলো নিজের বান্ধুবির কাছ থেকে? আজকে ইমতি এর একটা বিহিত করেই ছাড়বে। ইদানিং ফোন করলেও তেমন একটা কথা বলে না ষে। সারাদিন তো ক্লাসেই থাকে । আর রাতে করলে অপেক্ষমান। ভাবতে ভাবতে তমার নাম্বার দায়াল করে ইমতি। ৪ বার রিং হওয়ার পর তমা ফোন ধরে। - হ্যা বল কি দরকার। - কোন দরকার না - দরকার ছাড়া কি আর কেউ কাউকে ফোন করে? - কোন দরকারে তুই আমাকে ৮ হাত লম্বা চিঠি লিখেছিলি, বলতো? - ঐসব ছোট বেলার কাহিনী বইলা লাভ আছে। আমরা এখন অনেক ম্যাচিউর। তোর এটা বুঝা উচিৎ -ম্যাচিউর হলে কি মানুষ বাল্য বন্ধুর সাথে এমন পর পর আচরণ করে? - তোর সমস্যাটা কি রে ভাই? এতো ত্যানা পেচাস কেন? - তুই এভাবে কথা বলছিস কেন? - এই ! রকি ফোন করেছে। একটু রাখ তো! এটা বলে তমা নিজেই ফোন রেখে দেয়। রকির সাথে পরিচয় হওয়াটা যে তমার জীবনের কতো বড় ভুল তা তমা নিজেই জানেনা। প্রথম আলো পত্রিকার সংবর্ধনায় যেয়ে রকির সাথে তার পরিচয়। এরপর থেকে প্রায়ই কথা হয় ২ জনের। রকি তো তমাকে এক কথায় বাঁদর নাচ নাচায়। নিজে চান্স পায়নি কোথাও, কিন্তু প্রেমিকা বানাইছে সবচেয়ে ভালো ভার্সিটির মেধাবী ছাত্রী। রকির বড় স্বপ্ন, তমা ওকে রোজগার করে খাওয়াবে। তাই, নিজে যতো যাই করুক, তমাকে সবসময় প্রেশার দিবেই। কিন্তু তারপরও তমা ইমতির কথা শুনে না। ইমতি রকি কে একটু অপছন্দ করে বলে ইমতির সাথে মিশতে ও দেয় না তমাকে। রকির সামনে ইমতির ফোন ও সে ধরে না।   ইমতি বিষণ্ণতা কাটাতে এফ বি তে বসলো। তমা বোধ হয় ভুলে তাকে অনলাইন দিয়েছে। ইমতি তাকে মেসেজ দিলো -কি রে? ফোন টা কেটে দিলি যে? - ফোন আসলে কি করবো? - তুই আমার সাথে এমন করিস কেন? আমি তো তোর সাথে জাস্ট একটু কথাই বলতে চাই। এরচেয়ে বেশী কিছু তো চাই না। আমার সবচেয়ে ভালো বান্ধুবি তুই। - তোর সমস্যা টা কি? আমি কি না করছি কথা বলতে কখনো? - না। যেদিন থেকে তোর বয় ফ্রেন্ড হইছে সেদিন থেকে তুই আমাকে পাত্তাই দিস না। - ও সব সমস্যা আমার বয় ফ্রেন্ড ! এবার বুঝলাম - তুই কি অস্বীকার করবি? - তুই আসলে আমাকে জেলাস করিস! আমার বয় ফ্রেন্ড আছে তোর নাই, এইজন্য তুই আমাদের সম্পর্কটা ভাংতে চাস। - আমার বয় ফ্রেন্ড নাই দেখে আমি তোকে জেলাস করবো কেন? আজব তো! এই বুঝলি! - হ্যা এই বুঝলাম। যেসব ফ্রেন্ড তার ফ্রেন্ডের সুখ দেখতে পারে না, এসব ফ্রেন্ড থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। ইমতি এই লাইন টা পড়ে কেঁদে ফেলে ঝরঝর করে।রাগের বশে তমাকে লিখে - তাহলে ফ্রেন্ডের খাতা থেকে বাদ দিয়ে দিলেই পারিস - হ্যা তাই করতে হবে। জত্তসব এই বলে তমা ইমতিকে ব্লক করে দেয়। ইমতি কাদতেই থাকে । তার এতো ভালো বান্ধুবি টা আর রইলো না। মনে মনে রকির  মুণ্ডপাত করে ইমতি।       -------------     ৬ মাস পর   তমা ইমতিকে আনব্লক করে মেসেজ দেয়। - দোস্ত! রকি আমাকে নিয়ে খেলেছে! ও আমার সাথে প্রতারণা করেছে। - আমাকে এই করেছে, সেই করেছে - আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেছে রে। - ও আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। -আমাদের ব্রেক আপ হয়ে গেছে দোস্ত। ছেলেটা এতো খারাপ। - তুই আমার মেসেজের উত্তর দিস না কেন? ইমতি সব মেসেজ ই পড়লো। যেই বয় ফ্রেন্ডের কারনে সে একদিন তার সবচেয়ে কাছের মানুষটাকে দূরে ঠেলেছিল, আজ সেই বয়ফ্রেন্ড ই তার সব কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব করে ছাড়ল। ইমতির খুব মায়া হোল তমার জন্য। ও লিখল- সত্যিকারের বন্ধু বলেই তোকে সাবধান করেছিলাম। কিন্তু, তুই ভাবতি আমি তোকে জেলাস করি। এখন কি করার? - দোস্ত! তুই আমাকে মাফ করে দে। বয়ফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড করতে করতে করতে আমার বান্ধুবিকে আমি কতো অপমান করেছি!   তমার পরিণতিতে ইমতির মন কাঁদে। তবুও কেন যেন মন থেকে তমাকে মাফ করতে পারে না। ভালোবাসার মানুষগুলোর দেওয়া কষ্ট ক্ষণে ক্ষণে বুকে হাতুড়ি পেটায়।  

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ