উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)
নারী কোঁটার নাম ভাঙ্গিয়ে রমরমা ব্যবসা

বহুদিন ধরেই একটা বিষয় নিয়ে মাথা ঘামিয়ে যাচ্ছেন । কিন্তু কোন কুল কিনারা করতে পারেন্নি। অথচ একজন শিক্ষক ও গবেষক হিসেবে এটা জানা এবং সবাইকে জানানো টা তার অবশ্য কর্তব্য । ভাবতে ভাবতে রুমের চেয়ারে গা এলিয়ে দেন রুবায়েত আঞ্জুম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে ঢুকেছেন প্রায় ১২ বছর হোল। এই ১২ বছরে দেখেছেন সরকারী চাকরি ক্ষেত্রে নানা বৈষম্য দুর্নীতি । চেষ্টা করেছেন অনেক সংস্কারের । চালিয়ে গেছেন নিরলস গবেষণা । কিন্তু যতই গবেষণা করেছেন ততই বুঝতে পেরেছেন বাংলাদেশের সরকারী চাকরি মানেই বিরাট একটা খেলা।
রুবায়েতের মনে পড়ে যায় ফয়সাল ভাইয়ের কথা। টগবগে তরুণ মেধাবী এক ছাত্র। সেই সময় সরকারী চাকুরী মানেই ছিল সমাজে বিরাট প্রতিপত্তি। অনেক ভালো ছাত্ররাও শিক্ষক হওয়ার সুজুগ পেয়েও সরকারী চাকরি করতো । তাদের অনেকেই এখন বড় বড় সচিব, উপ সচিব। কিন্তু ফয়সাল ভাই পারেননি সরকারী চাকরীর দলাদলি রেশারেশির মাঝে টিকে থাকতে। নিরপেক্ষ ছিলেন বলে ,যে সরকার ই আসতো সে সরকার ই ভাবতো সে প্রতিপক্ষের লোক। বস কে জি হুজুর জি হুজুর করার প্রবনতাও না থাকায় নিজেকে বুঝাতে পারতেন না কর্তা ব্যক্তির কাছে। আজ বান্দারবান ট্রান্সফার তো কাল খাগড়াছড়ি ! এভাবেই নাজেহাল অবস্থা সইতে না পেরে চলেই গেলেন দেশের বাইরে। এখন তিনি মস্ত বড় গবেষক। ওনার চলে যাওয়ায় ওনার হয়তো কোন ক্ষতি হয়নি, কিন্তু দেশের যে ক্ষতি হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ক্লাসের সময় হয়ে যায়। আজ ক্লাসে পড়াবেন কোঁটা ব্যবস্থা। মনে মনে ছাত্র ছাত্রীদের মনোভাব যাচাইয়ের একটা বুদ্ধি আঁটেন রুবায়েত।
শিক্ষকতার বড় পাওয়া হোল সম্মান। রুবায়েত জনপ্রিয় শিক্ষিকা। ক্লাসে ঢোকার সাথে সাথে সবাই মনোযোগ দিয়ে কথা শুনে।
- আজ আমি তোমাদের বি সি এস নিয়োগের নিয়ম নীতি পড়াবো , সেই সাথে কোঁটা প্রসঙ্গ ও থাকবে।
পড়াচ্ছেন আর ছাত্ররা মনযোগী স্রোতা । এরা হোল দেশের বাছাই করা মেধাবী। এদেরকে যা শিক্ষা দেওয়া হবে তা এরা সমাজে ছড়িয়ে দিবে বলেই আশা রুবায়েতের
কোঁটা প্রসঙ্গ আসতেই এক হ্যাংলা পাতলা ছেলে উঠে দাঁড়ালো। বলল- ম্যাম, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও আমরা কত শোষণের শিকার! যেমন দেখেন! আমি আর আমার বান্ধুবি ২ জন ই মেডিক্যাল এ পরীক্ষা দিলাম। আমার বান্ধুবি আমার চেয়ে ১৫ নাম্বার কম পেয়েও সুযোগ পেলো। আর আমি ওর চেয়ে বেশি পেয়েও কাজ হোল না। অথচ , আমাকে ও নিজে বলেছে, এই কোঁটার সনদ ওর বাবা ৫ লাখ টাকা দিয়ে বানিয়েছে। ম্যাম , এটা কি আমাদের মেধার সাথে জালিয়াতি নয়?
- জালিয়াতি তো বটেই । কিন্তু এর সমাধান করা যায় মুক্তি যোদ্ধাদের খাটো না করে ও। যেমন ধরো , যদি জাতীয় ভাবে কোঁটা তোলার দাবী করা হয় তাহলে যে যে খাঁতে কোঁটা আছে , তাদের সেভাবে গড়ে তোলার জন্য পরিপূর্ণ আর্থিক ও সামাজিক সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। যাতে তারা এই প্রতিযোগিতার উপযোগী হয়ে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে। কিন্তু অযোগ্য লোক দিয়ে দেশের প্রশাসন চালালে যে কি হয় তা তো তোমাদের দুর্নীতির অধ্যায়েই পড়ালাম ।
হ্যাংলা পাতলা ছেলেটি ক্ষোভে লাল হয়ে ছিল। সে আবার বলল- ম্যাম! নারী কোঁটা কি আদৌ দরকার আছে? আমার তো মনে হয়না মেয়েরা পিছিয়ে আছে। তাদের কে পিছিয়ে পড়াদের মধ্যে ফেলার কতো টুকু যৌক্তিকতা? ফেললেও ১০% কোঁটা কি দরকার আছে?
রুবায়েত ভাবনায় পড়ে যায়। মন চলে যায় কয়েকবছর আগের সেই থিসিস করার সময়টায় । নারী কোঁটা / কোঁটা দিয়ে নারীর কতটা উপকার হচ্ছে তার বাস্তবতা ভাবলেই মন খারাপ হয়ে যায় রুবায়েতের। এখন মেয়েরা যেভাবে পরালিখায় এগিয়ে গেছে তাতে নারী কোঁটা লাগে না বললেই চলে। তাও, গ্রামীণ নারীদের জন্য যে কোঁটা আছে তার ২% পরিপূর্ণ হয়। প্রতি বছরই পি এস সি র গ্যাজেট এ দেখা যায় তাই। এইখান থেকেই মনে প্রশ্ন জেগেছিল - তাহলে বাকি ৮ % কোঁটা কিভাবে পূর্ণ হয়। এর সুলুক সন্ধান করতে গিয়েছিলেন এক বন্ধু সচিবের কাছে। সেই বলল যতো গোপন কথা। তার দেখা মতে, এই ৮% কোঁটা অপূরণীয় দেখানো হলেও , এই কোঁটা কি দিয়ে পূরণ হয় তার কোন লিখিত হিসেব নেই। এগুলো সব ই পায় সরকার দলীয় মাস্তানেরা। এভাবে নারীর নাম ভাঙ্গিয়ে বেশ রমরমা চলছে কোঁটার ব্যবসা।
আরও মজার কথা জানা গেলো বন্ধুর থেকে। অনেকসময় দলীয় ক্যাডারদের আর কোন উপায়ে ঢুকানো না গেলে , প্রতিবন্ধী কোঁটা দিয়ে দেওয়া হয়। পরীক্ষার দিন একটু হাত পা বেঁকিয়ে বেঁকিয়ে পরীক্ষা দিতে গেলেই হয়।
এসব ঘটনা বলতে বলতে রুবায়েত খেয়াল করেন , ২/১ জন ছাড়া সবাই তার সমাধানে সন্তুষ্ট । যারা সন্তুষ্ট নয় কেন নয় তা স্পষ্ট। নিচে হটাত হট্টগোল শোনা যায়। কলা ভবনে এসব চিল্লা পাল্লার আওয়াজ নিত্য নৈমিত্তিক। এক ছেলে বলল- ম্যাম, আজ কোঁটা বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল তো তাই এতো আওয়াজ। কিছুক্ষন পর কলা ভবনে অনেক ছাত্রের ঢোকার গুঞ্জন পাওয়া যায়। কোঁটা বিরোধী সরকার দলীয় গুণ্ডারা অবরুদ্ধ করেছে জাতির মেধাবীদের । চারিদিকে রাবার বুলেট আর টিয়ার শেল ছোড়ার শব্দ। এভাবেই বুঝি মুখ থুবড়ে পরবে জাতির মেধাবীরা। ভাবতে ভাবতে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যান রুবায়েত।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)