উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)

কন্যা দ্বায়গ্রস্থ পিতা

কন্যা দ্বায়গ্রস্থ পিতা
fathr বিয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে যে ছেলে তার স্ত্রীর অপমানের প্রতিবাদ করেনা, সারা জীবন সেই ছেলেটিই কীভাবে মেয়েটাকে আশ্রয় দিবে কিংবা বটবৃক্ষের মতো আগলে রাখবে এই প্রশ্ন একটি বিশাল কিন্তুযুক্ত।  ঘুরে ফিরে মেয়েদের অধিকার বঞ্চনার কথাগুলো বৈবাহিক জীবনে এসে ঠেকে।কারন, এই জীবন থেকেই শুরু হয় নারীর জীবন বৈচিত্র্যের, দুঃখ সুখ কিংবা হতাশার।  ছেলে পক্ষীয় অনেক আত্মীয় স্বজন বিয়ের দিন সারাক্ষণ ওত পেতে থাকে। কখন মেয়ে পক্ষ কোন একটি অমার্জনীয় ভুল করবে, আর কখন তাকে এই নিয়ে চূড়ান্ত হেনস্থা করা যাবে! সুসম্পর্ক কিংবা দুঃসম্পর্কের অনেক আত্মীয়ই চায় মেয়েকে বিভিন্ন ভাবে কটাক্ষ করতে। মেয়ের রূপ গুণ উচ্চতা গায়ের রঙ তো আছেই, আরও আছে ভালো ছেলেটার কাছে মেয়ে পক্ষের সবচেয়ে পচা মেয়েটা গছিয়ে দেওয়ার মতো অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগ ও। আর খাবার দিতে দেরী হলে, কিংবা শেষ হয়ে গেলে , কিংবা একটা দুটা আইটেম কম পড়লে তা নিয়ে বাড়ি মাথায় তুলে বিয়ে বাড়িকে শোকের বাড়িতে পরিণত করতে এইসব কথিত দোষ সন্ধানী মানুষদের কোন তুলনাই হয়না! এই তো কিছুদিন আগে এক বিয়ের কথা শুনলাম। কোন কারণে খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় ছেলে পক্ষীয় একজনকে খাবার দিতে কিঞ্চিৎ দেরী হয়ে যায়। অতঃপর, যখন খাবার আনা হয়, সেই আত্মীয় খেতে না বসে হাউ কাউ লাগিয়ে দেন, এবং বলেন খাবার দিতে দেরী হয়েছে। তিনি পাশের রেস্তোরায় যেয়ে খাবেন। আর মেয়ে তো নিয়েই যাচ্ছেন। এরপর এর মজাটা বুঝাবেন, শ্বশুর বাড়ির ভাত খাওয়া এতো সহজ নয়, তাও বুঝাবেন।  বরের সামনে বউয়ের বাবা মাকে কী যাচ্ছে তাই অপমানই না করলো সেই কথিত আত্মীয়। মেয়েটা বাবার অপমান দেখে বসে বসে কাঁদল। কিন্তু বর একবারও সেই আত্মীয়কে থামতে বলল না। পাশে বসে ক্রন্দনরত বধূকেও সান্তনা দিলেন না। অথচ, শুনেছি! অনুষ্ঠানের আগে কাবিন হয়ে যাওয়ায় তাদের নাকি বোঝাপড়া অনেক ভালোই। এই যদি হয় বোঝাপড়া ভালো হওয়ার ধরণ, তখন ধরে নিতে হয় এটা সুখ ভাগাভাগির বোঝাপড়া ছিল, দুঃখ ভাগ করার নয়। অথচ , বোঝাপড়া মানেই কিন্তু সুখ দুঃখ সবসময়ই ছায়ার মতো থাকা।  উল্টো সারাটা অনুষ্ঠান বর মুখ উল্টিয়ে বসে থেকে সে যে জামাই, ছেলে না তার প্রমাণ দিলো।  এমনকি! শরবত খাওয়ানো থেকে শুরু করে প্রতিটি আনুষ্ঠানিকতায় মুখ প্যাঁচার মতো করে রাখল, আত্মীয়কে অপমান জানানোর প্রতিবাদ স্বরূপ।  সবশেষে কোন দোষ না করা সত্ত্বেও মেয়ের বাবা যখন বলল- আমরা তো মেয়ে পক্ষ! সব দোষ আমাদেরই! তারপরেও মন ভরল না কারো। মেয়ের বাবা লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিয়েও দিলো, আবার সম্মান তো পেলেনই না, বরং হেয় প্রতিপন্ন হলেন! এই কারনেই মনে হয়, আমাদের সমাজে এই শব্দটা প্রচলিত, " কন্যা দ্বায়গ্রস্থ পিতা" কন্যারা এইসব মানুষের এই ধরণের আচরণগুলোর কারনেই বাবা মায়ের জন্য বিশাল এক দ্বায়। কন্যা সন্তানকে দ্বায় বানানোর দ্বায় এই সমাজের কম নয় কোন অংশেই।  আর যে সমস্ত আত্মীয়রা বিয়েতে মেয়ের দোষ কিংবা ঝামেলা পাকাতেই যান, তাদের ঘরেও মেয়ে সন্তান আছে নিশ্চয়। তারা যে সংস্কৃতি সমাজে চালু করছেন তার ভুক্তভুগি তাদের কন্যারা ও হবেন না তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে? আর কথায় বলে- স্বামী ভালো তো জগত ভালো! স্বামী যে স্ত্রীর পাশে থাকে, শত খারাপ কথা ও সেই মেয়ের জন্য বোঝা হয়না। যে স্ত্রী স্বামীর মূল্যায়ন পায়, তাকে সবাই মূল্যায়ন করে। যে স্বামীর কণ্ঠস্বর স্ত্রীর অপমানে উচ্চকিত হয়, সে স্ত্রীকে অপমান করার সাহস অন্তত আর যাই হোক ছেলে পক্ষের লোকদের নেই। শ্বশুর বাড়িতে তাকে সবাই হুজুর হুজুর করে চলে। সবাই জানে, স্বামী এই মেয়ের পাশেই আছে। সুতরাং, তার বিরাগভাজন হওয়া মানে তাদের ছেলের সাথেও সম্পর্ক খারাপ হওয়া।  কিন্তু ঐ যে! এক গাছে লাগেনা আরেক গাছের ছাল! বেশীরভাগ ছেলেরাই স্ত্রীকে শ্বশুরের মেয়েই ভাবে। নিজের জীবন সঙ্গী কিংবা আয়না ভাবেনা। নিজের পোশাকে কাঁদা লাগলে সেই ময়লা তো নিজেকেই সরাতে হয়। আর স্বামী স্ত্রী তো একে অপরের পোশাক স্বরূপই। তাহলে বিয়ের মঞ্চে কেন স্ত্রীর অপমানই স্বামীর অপমান হয় না? আর তার বিরুদ্ধে ছেলেদের কণ্ঠস্বর কেন শোনা যায় না? যে ঠোঁট ভালোবাসি বলতে জানে সে ঠোঁট কি ভালোবাসার মানুষের অপমানে সরব হতে পারেনা? 

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ