উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)

সতীত্ব-একটি নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ ( পর্ব-২)

সতীত্ব-একটি নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ ( পর্ব-২)
  soti2 এক তালাক প্রাপ্তা মহিলাকে তার পূর্বের স্বামী নাকি খুব অহংকার করে বলেছিল- তোমার নতুন স্বামীর থেকে আর মোহরানা কি নিবে! সে তো তোমার মোহর ভাঙতে পারবে না! কখনো কখনো জীবন আমাদের ছকে বাঁধা নিয়মে চলেনা। সংসার সন্তান সবই অনেকের হয়, অনেকের আবার কিছুই হয়না, মানসিকতা অথবা বাস্তবতার মিল না থাকায়। কিন্তু ছেলেদের দাম্ভিক উক্তি শুনে অবাক লাগে। মনেহয় সম্পর্কটা যেন শুধুই মেয়েটার ছিল।  মোহর ভাঙ্গা বলতে আসলে কি বোঝায়? যে কোন মেয়েকে শরীয়তসম্মত উপায়ে বিয়ে করতে হলে তাকে কিছু সম্পদ দিতে হবে। এটা তার ইজ্জত ও আব্রুর হেফাজত এবং নারীকে সহজলভ্য না করে তোলার শরয়ি মাধ্যম। আর এর বিনিময়ে পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে একটি পবিত্র জীবন শুরুর নৈতিক অধিকার পায়, এই অধিকারের নামই বোধহয় মোহর ভাঙ্গা। ছোট মানসিকতার মানুষরা যেটাকে সতীত্ব ভাঙ্গা হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে- একজন পূর্ব বিবাহিতা নারীর মোহর কি সত্যিই ভাঙ্গা যায় না? সে কি তাহলে অসতী! কিংবা তার কি সত্যিই নেই নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখার কোন অধিকার। যদি তাই হতো তাহলে ইসলামে তো এইসব নারীদের ২য় বিয়ের সময় মোহর দেওয়ার প্রশ্নই উঠত না। অথচ, একজন নারীর যদি ১০ বার ও বিয়ে হয়, ১০ বারই ১০ জন ভিন্ন ভিন্ন পুরুষের কাছ থেকে মোহর পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এরমানে দাড়ায়, কথিত সতীত্ব বলতে যা বোঝায় তা আসলে কেউ ভাঙতে পারেনা, শত বারে ও! যদি পারতো তাহলে একবারের পর আর সেই সতীত্বের দাম দিতে হতো না। এর মানে নারীর যতবারই বিয়ে হোক, নতুন জীবন সঙ্গীর কাছে সে একেবারেই নতুন! এরপর যে প্রশ্নটি আসে তা হলো, যে ছেলেটির সাথে বিবাহিতা নারীর আগে বিয়ে হয়েছিলো তার কি কৌমার্য বজায় থাকে নাকি? যদি একই কাজে মেয়েটি বাসি হয়ে যায়, তাহলে ছেলেটি কেন হবে না? তালাক প্রাপ্তা কিংবা বিধবা নারী, যার পুনরায় বিয়ে হবে, যার সাথে বিয়ে হবে, সে কি এই মহিলাকে আদৌ পূর্বে ভোগ করেছিলো? তারমানে এই মহিলা তার জন্য সম্পূর্ণ নতুন। কিন্তু বিয়ে হওয়ার পর পরেই পুরান হয়ে যাবে এক পলকে। তারমানে তার সেই কথিত সতীত্ব ও সে হারাচ্ছে। তাহলে কি এই পুরুষ বারবার কথিত সতী মেয়ে ভোগের জন্য প্রতি দিন একটি বিয়ে করবে? একটা সময় সতীদাহ প্রথা ছিল। স্বামীর সাথে তার বউকে জ্বালিয়ে মারা হতো নির্দয়ভাবে। কারন কি ছিল? কারন তখন মনে করা হতো বিধবা অসতী হয়েছে এক পুরুষের দ্বারা, এবং তার আর বাঁচার কোনই অধিকার নেই। তার জীবনের অন্য কোন বন্দবস্ত করে দিতে সমাজ নারাজ কিংবা অপারগ। সুতরাং, তাকে মেরে ফেলাই শ্রেয়। ব্যাস! একজন ললনার জীবন এই এতোটুকুতেই শেষ! বেঁচে থাকতে স্বামীর জন্য বিলিয়ে দাও, আর স্বামী যাওয়ার পর তার সাথে নিজের জীবনকে আগুনে ঠেলে দেওয়া। এখন সতীদাহ প্রথা নেই ঠিক, কিন্তু একবার বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়ের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিন্দুমাত্র বদলায়নি। আধুনিক যুগে হরহামেশাই সতীদাহ হচ্ছে। একটা মেয়ের তালাক হয়ে গেলে কিংবা বিধবা হলে সমাজ সংসার তার প্রতি যে পরিমাণ বৈরি আচরণ করে, এক ঘরে করে ফেলে, নতুনভাবে বাঁচতে চাইলে তীব্র বিদ্রূপ বা কটাক্ষ করে, কানাকানি করে এরচেয়ে মনে হয় সতীদাহ ও অনেক ভালো ছিল। একবারে মরে জীবনের যাতনা মিটত কিন্তু আধুনিক এই সতীদাহ প্রথায় মেয়েরা প্রতিদিন অহর্নিশি জ্বলছে।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ