কনক ওর আম্মুর সাথে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরটাতে এসেছে। ছোটবেলায় কনক করতো কী, জানো? যা দেখতো তা-ই কিনতে চাইতো- কিছু একটা দেখলেই বায়না করা শুরু করতো-
-রাহাত ভাইয়ার দুইকাঁটাওয়ালা পেনসিল আছে- আমারও লাকবে আম্মু উঁ উঁ…
-পেনসিল কম্পাস দিয়ে অনেক কিছু আঁকা যায় কনক। কিন্তু তুমি এখনও ছোট। ওটার ধারালো কোণা আছে, দেখছো না? আঁকতে গেলে চোখে লেগে যেতে পারে। আরেকটু বড় হও, কিনে দেবো।
-না আমার লাগবে উঁ উঁ…
আবার একটু পর হয়তো একটা বারবি ঘড়ি দেখলো- আড়চোখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলতো-
"আমার গরে শুদু নীল গড়ি। গুলাপী গড়ি কত সুন্দর। রাইয়ানের বারবি গড়ি আছে, আমার বুজি থাকতে নেই? আম্মু, শুনচো?"
অবশেষে আম্মু একটু রাগ রাগ গলায় বলতো-
-ক…ন…ক! এমন যদি করো- আর কোত্থাও নিয়ে যাবো না কিন্তু! যা কিছু দেখবে সব কিনতে চাইতে হয় না। তাহলে লোকজন পঁচা বলবে তোমাকে। আল্লাহও রাগ হবেন। কারণ, প্রয়োজন ছাড়া অনর্থক কেনাকাটা অপচয়। অপচয়কারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন না!
এখন অবশ্য কনক বড় হয়েছে। এই নভেম্বরে ওর বয়স আট হবে! সবকিছু বুঝতে পারে এখন। তাছাড়া ওর একটা ছোট্ট ভাই হয়েছে না? আম্মু বলেছে যে কনক যা কিছু করবে সব কায়সার শিখে ফেলবে। তাই তো এখন কনক কায়সারকে দেখিয়ে দেখিয়ে দিনে তিনবার দাঁত ব্রাশ করে। আগে তো কনককে দিয়ে দাঁত ব্রাশ করানো এত কঠিন কাজ ছিলো! ঠোঁটের উপর একটুখানি দুধ লাগিয়ে বাকী দুধটা বেসিনেও ফেলে দেয় না, কারণ এইটা যে পঁচা কাজ, আম্মুকে ঠকানো- এখন কনক বুঝে গেছে। কায়সার এখনো সব কথা বোঝে না- কিন্তু কনক ভেবে রেখেছে যেদিন থেকে কায়সার কথা বুঝতে পারবে- সেদিনই ওকে বলে দিতে হবে কখনো যেন আম্মুকে না ঠকায়। তাতে আল্লাহ রাগ হবেন। যাহোক, কী যেন বলছিলাম? ও! কনক ওর আম্মুর সাথে স্টোরে এসেছে কেনাকাটা করতে।
কনক ওর আম্মুকে জিজ্ঞেস করছে,
- আচ্ছা, আমরা পাঁউরুটি কিনলাম। স্টোরকিপার আঙ্কেলকে টাকা দিলাম। আমরা পেলাম পাঁউরুটি, উনি পেলেন টাকা। কিন্তু পাঁউরুটিটা কী পেলো আম্মু?
- হুম। চিন্তার বিষয় ত! জবাব দিচ্ছি। কিন্তু তার আগে তুমি বলতো পাঁউরুটি নিয়ে তুমি কী করবে?
-খাবো।
-কেন খাবে?
-মজা লাগে, এইজন্য!
আম্মু হেসে ফেললেন।
- হ্যাঁ। সেটা একটা কারণ। আরো কারণ আছে ভেবে দেখ তো! আমরা কি শুধু মজা পাওয়ার জন্যই খাই?
- ভেব নি-ই। আচ্ছা, পাঁউরুটিটা খাবো এইজন্য যে এটা থেকে কার্বোহাইড্রেড পাবো- যা থেকে আমার শরীরের ভেতর শক্তি তৈরি হবে। সেই শক্তি দিয়ে কাজ করতে পারবো। খেলতে পারবো, পড়তে পারবো, হাঁটতে পারবো, কথা বলতে পারবো, এই তো, না?
-মাশা আল্লাহ! ঠিক তাই। তুমি খেয়ে ফেলার পর পাঁউরুটিটাও তোমার দেহের একটা অংশ হয়ে যাবে। পাঁউরুটিটা কী পাবে জানো? পাঁউরুটিটা আনন্দও পেতে পারে, কষ্টও পেতে পারে! তুমি যদি পাঁউরুটিটা খেয়ে যে শক্তি পাবে তা বাজে কাজে ব্যবহার করো- তাহলে পাঁউরুটিটা কষ্ট পাবে। আর যদি ভালো কাজ করো তাহলে সে আনন্দ পাবে। যদি তুমি খাবার থেকে পাওয়া শক্তি ভালো কাজে ব্যয় করো তাহলে একদিন- এই পাঁউরুটিটাই আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে বলবে- আল্লাহ, কনক আমাকে খেয়ে শক্তি নিয়ে ভালো ভালো কাজ করেছে। তুমি কনককে তার পুরষ্কার দাও। আর যদি খারাপ কাজ করো তাহলে বলবে- কনক আমার থেকে শক্তি নিয়ে তা বাজে কাজে ব্যয় করেছে- তুমি ওকে শাস্তি দাও।
-পাঁউরুটি কথা বলতে পারবে মা?
- হ্যাঁ, কারণ, এইদিন আল্লাহ যাকে চাইবেন কথা বলার শক্তি দেবেন। এটা কোন দিন তুমি জানো?
-হ্যাঁ, জানি। আমরা জান্নাতে যাবো নাকি জাহান্নামে যাবো সেটা বিচার করার দিন এটা।
আম্মু কনকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আম্মুটা যে কী! কনকের পরিপাটি চুলগুলোকে মাঝে মাঝে আদর করে একদম এলোমেলো করে দেন। কনক অবশ্য আজকে এলোমেলো চুল নিয়ে ভাবছে না। সে ভাবছে অন্য কিছু নিয়ে। এই যে, তুমি! যে এই গল্পটা পড়লে, তুমিও কি অন্যকিছু ভাবছো?
[এটা শিশুতোষ গল্প। সাত + বয়েসী শিশুদের জন্য লেখা]
সাহিত্য
পাঁউরুটি কী পেলো?
কনক ওর আম্মুর সাথে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরটাতে এসেছে। ছোটবেলায় কনক করতো কী, জানো? যা দেখতো তা-ই কিনতে চাইতো- কিছু একটা দেখলেই বায়না করা শুরু করতো-
-রাহাত ভাইয়ার দুইকাঁটাওয়ালা পেনসিল আছে- আমারও লাকবে আম্মু উঁ উঁ…
-পেনসিল কম্পাস দিয়ে অনেক কিছু আঁকা যায় কনক। কিন্তু তুমি এখনও ছোট। ওটার ধারালো কোণা আছে, দেখছো না? আঁকতে গেলে চোখে লেগে যেতে পারে। আরেকটু বড় হও, কিনে দেবো।
-না আমার লাগবে উঁ উঁ…
আবার একটু পর হয়তো একটা বারবি ঘড়ি দেখলো- আড়চোখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলতো-
"আমার গরে শুদু নীল গড়ি। গুলাপী গড়ি কত সুন্দর। রাইয়ানের বারবি গড়ি আছে, আমার বুজি থাকতে নেই? আম্মু, শুনচো?"
অবশেষে আম্মু একটু রাগ রাগ গলায় বলতো-
-ক…ন…ক! এমন যদি করো- আর কোত্থাও নিয়ে যাবো না কিন্তু! যা কিছু দেখবে সব কিনতে চাইতে হয় না। তাহলে লোকজন পঁচা বলবে তোমাকে। আল্লাহও রাগ হবেন। কারণ, প্রয়োজন ছাড়া অনর্থক কেনাকাটা অপচয়। অপচয়কারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন না!
এখন অবশ্য কনক বড় হয়েছে। এই নভেম্বরে ওর বয়স আট হবে! সবকিছু বুঝতে পারে এখন। তাছাড়া ওর একটা ছোট্ট ভাই হয়েছে না? আম্মু বলেছে যে কনক যা কিছু করবে সব কায়সার শিখে ফেলবে। তাই তো এখন কনক কায়সারকে দেখিয়ে দেখিয়ে দিনে তিনবার দাঁত ব্রাশ করে। আগে তো কনককে দিয়ে দাঁত ব্রাশ করানো এত কঠিন কাজ ছিলো! ঠোঁটের উপর একটুখানি দুধ লাগিয়ে বাকী দুধটা বেসিনেও ফেলে দেয় না, কারণ এইটা যে পঁচা কাজ, আম্মুকে ঠকানো- এখন কনক বুঝে গেছে। কায়সার এখনো সব কথা বোঝে না- কিন্তু কনক ভেবে রেখেছে যেদিন থেকে কায়সার কথা বুঝতে পারবে- সেদিনই ওকে বলে দিতে হবে কখনো যেন আম্মুকে না ঠকায়। তাতে আল্লাহ রাগ হবেন। যাহোক, কী যেন বলছিলাম? ও! কনক ওর আম্মুর সাথে স্টোরে এসেছে কেনাকাটা করতে।
কনক ওর আম্মুকে জিজ্ঞেস করছে,
- আচ্ছা, আমরা পাঁউরুটি কিনলাম। স্টোরকিপার আঙ্কেলকে টাকা দিলাম। আমরা পেলাম পাঁউরুটি, উনি পেলেন টাকা। কিন্তু পাঁউরুটিটা কী পেলো আম্মু?
- হুম। চিন্তার বিষয় ত! জবাব দিচ্ছি। কিন্তু তার আগে তুমি বলতো পাঁউরুটি নিয়ে তুমি কী করবে?
-খাবো।
-কেন খাবে?
-মজা লাগে, এইজন্য!
আম্মু হেসে ফেললেন।
- হ্যাঁ। সেটা একটা কারণ। আরো কারণ আছে ভেবে দেখ তো! আমরা কি শুধু মজা পাওয়ার জন্যই খাই?
- ভেব নি-ই। আচ্ছা, পাঁউরুটিটা খাবো এইজন্য যে এটা থেকে কার্বোহাইড্রেড পাবো- যা থেকে আমার শরীরের ভেতর শক্তি তৈরি হবে। সেই শক্তি দিয়ে কাজ করতে পারবো। খেলতে পারবো, পড়তে পারবো, হাঁটতে পারবো, কথা বলতে পারবো, এই তো, না?
-মাশা আল্লাহ! ঠিক তাই। তুমি খেয়ে ফেলার পর পাঁউরুটিটাও তোমার দেহের একটা অংশ হয়ে যাবে। পাঁউরুটিটা কী পাবে জানো? পাঁউরুটিটা আনন্দও পেতে পারে, কষ্টও পেতে পারে! তুমি যদি পাঁউরুটিটা খেয়ে যে শক্তি পাবে তা বাজে কাজে ব্যবহার করো- তাহলে পাঁউরুটিটা কষ্ট পাবে। আর যদি ভালো কাজ করো তাহলে সে আনন্দ পাবে। যদি তুমি খাবার থেকে পাওয়া শক্তি ভালো কাজে ব্যয় করো তাহলে একদিন- এই পাঁউরুটিটাই আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে বলবে- আল্লাহ, কনক আমাকে খেয়ে শক্তি নিয়ে ভালো ভালো কাজ করেছে। তুমি কনককে তার পুরষ্কার দাও। আর যদি খারাপ কাজ করো তাহলে বলবে- কনক আমার থেকে শক্তি নিয়ে তা বাজে কাজে ব্যয় করেছে- তুমি ওকে শাস্তি দাও।
-পাঁউরুটি কথা বলতে পারবে মা?
- হ্যাঁ, কারণ, এইদিন আল্লাহ যাকে চাইবেন কথা বলার শক্তি দেবেন। এটা কোন দিন তুমি জানো?
-হ্যাঁ, জানি। আমরা জান্নাতে যাবো নাকি জাহান্নামে যাবো সেটা বিচার করার দিন এটা।
আম্মু কনকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আম্মুটা যে কী! কনকের পরিপাটি চুলগুলোকে মাঝে মাঝে আদর করে একদম এলোমেলো করে দেন। কনক অবশ্য আজকে এলোমেলো চুল নিয়ে ভাবছে না। সে ভাবছে অন্য কিছু নিয়ে। এই যে, তুমি! যে এই গল্পটা পড়লে, তুমিও কি অন্যকিছু ভাবছো?
[এটা শিশুতোষ গল্প। সাত + বয়েসী শিশুদের জন্য লেখা]
সম্পর্কিত ব্লগ
আবেশ
Women Express
৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
কাজেমা
শুকনোপাতার রাজ্য
৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন
মেরামত, পুনঃব্যবহার ও লেন্ডিং সেন্টার
রাহনুমা সিদ্দিকা
৩০ এপ্রিল ২০২০
ধ্রুবতারকার কথা
রাহনুমা সিদ্দিকা
১ অক্টোবার ২০১৫
"চুপ করে থাকো, কাউকে বোলো না!"
রাহনুমা সিদ্দিকা
২৭ জুলাই ২০১৫
বিড়ালের ভাষা
রাহনুমা সিদ্দিকা
২৭ জুলাই ২০১৫
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)