সাহিত্য

তবু আশা বেঁধে রাখি......

তবু আশা বেঁধে রাখি......
10308875_1552872621627434_4801189648355327048_n ক্লাস শেষে নোটের দিকে তাকিয়ে ভীষণ বিরক্ত হলো আসমারা। লেকচারের কিছুই নোট করা হয়নি আজ ঠিকমতো। তার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কেউ যদি তাকে বলে, তোমাকে কিছু বলার আছে কিন্তু এখন না পরে বলবো। পরে বলবো বলে ব্যক্তি তো নিশ্চিন্ত মনে চলে যায় কিন্তু আসমারার মনে একের পর প্রশ্ন হানা দিতে থাকে। কি বলবে? কি হয়েছে? কোন সিরিয়াস সমস্যা বা বিপদে  নয় তো? প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য করবে পারবে তো? ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন চলতেই থাকে মাথার মধ্যে। নিজের কোন কিছু নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগার স্বভাব একদমই নেই আসমারার। কিন্তু অন্যের সমস্যা তাকে খুব ভোগায়। ক্লাস থেকে বেড়িয়ে কলেজের মাঠে আরীবাকে দেখতে পেয়ে কাছে গিয়ে বসে বলল, আজ তোমার কারণে আমার ক্লাসের বারোটা বেজেছে। আচ্ছা যদি পরেই বলবে তাহলে আগে জানানোর দরকারটা কি যে কথা আছে? আমি বুঝি না মানুষ কেন অকারণে মানুষকে টেনশন দেয়। এখন আবার চুপ করে আছো কেন? আরীবার চেহারার দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো আসমারা। মেঘে মেঘে ছেয়ে যাওয়া আকাশের মত থমথম করছে আরীবার চেহারা। কাঁধে হাত রেখে মায়া জড়ানো কণ্ঠে বলল, কি হয়েছে আরীবা এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাকে? আরীবা বলল, বাসায় আমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। হেসে, আরে এটা তো সুখবর। কিন্তু তুমি এমন দুঃখী দুঃখী চেহারা করে রেখেছো কেন? এখন বিয়ে করতে চাইছো না? আমি একজনকে পছন্দ করি। কথাটা শুনে অবাক হয়ে আরীবার দিকে তাকালো আসমারা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আরীবা বলল, আমি সত্যি সরি তোমাকে আগে কখনো এই ব্যাপারে না বলার জন্য। আসলে পছন্দ করি বলতে জীবনসাথী হিসেবে ওমন কাউকেই চাই আমি। এখানে সরির কিছু নেই। তাছাড়া এটা বলে বেড়ানোর মত কোন কথা না। বাসায় তোমার পছন্দের কথা জানানো সম্ভব না? বললেই ধর্ম নিয়ে প্রচণ্ড একটা ঝামেলা বাঁধবে। ধর্ম নিয়ে ঝামেলা বাঁধবে মানে? তুমি তো জানোই আমাদের পরিবারের অবস্থা। সুন্নাহ মনেকরে নানা ধরণের বিদয়াতী কাজকর্ম প্রচলিত আছে আমাদের পরিবারে। আর ওদের পরিবারের সবাই বিদয়াতী সবকিছু এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ কথা কি জানো? কি? ওর নাম রাহাত। আর রাহাত আমার জীবনে আল্লাহর রহমত হয়ে এসেছিলো। আগে আমিও আমার পরিবারের মতই ছিলাম। ওর বোনদেরকে দেখেই আমার মধ্যে হিজাব করার ইচ্ছে জেগেছিল। ওদের পরিবারের সাথে মিশেই আমি সত্যিকার ইসলামকে জানতে পেরেছিলাম। কিন্তু আমি জানি আমাদের দুই পরিবারের কেউ রাজী হবে না বিয়েতে। তবে আমার সমস্যা এটা না। যদি রাহাতের সাথে আমার বিয়ে না হয় তো না হবে। কিন্তু আমি বিদয়াতী কাউকে বিয়ে করতে চাই না। আর বাবা আমার জন্য বিদয়াতী কোন পাত্রই ঠিক করবে আমি জানি। তুমি আগে থেকেই এমন ভাবছো বলো তো? তাছাড়া আমরা যা চিন্তা করি তার বেশির ভাগই কিন্তু বাস্তবে ঘটে না। কিন্তু আমি যা ভাবছি তাই ঘটবে। কারণ আমি আমার পরিবারকে জানি। বিয়ে মানেই হৈচৈ, গানবাজনা এসব। কিন্তু আমি আমার নতুন জীবনের শুরু এভাবে করতে চাই না। আমি সবকিছু সুন্নাহ অনুযায়ী করতে চাই। আর এমন কাউকে বিয়ে করতে চাই না জীবনসাথী হিসেবে যার কারণে আমার ঈমান হুমকির মুখে পড়তে পারে। এখন আমি কি করবো তুমিই বলো। আমি কি পরামর্শ দেবো বুঝতে পারছি না। আমার বাবা সবসময় বলেন যে, ভবিষ্যতের চিন্তা যদি কখনো মনে ঝড় তোলে তাহলে সম্ভাব্য সবকিছুর জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে ধীরে ধীরে। যাতে আঘাত যেদিক দিয়েই আসুক না কেন সময়মত নিজেকে সামলে নেয়া যায়। কিন্তু কখনোই দুশ্চিন্তা করা ঠিক না। কারণ দুশ্চিন্তা মানুষকে দুর্বল করে দেয় খুব বেশি। যার ফলে সবকিছু অনেক বেশি জটিল লাগে। তাছাড়া আমরা যেভাবে চিন্তা করবো সবকিছুকে সেভাবেই সামনে দেখতে পাবো। আমার সমস্যার কথা বলে আমি কি তোমার মন খারাপ করে দিলাম?  না আরীবা আমি খুব প্র্যাক্টিকাল মেয়ে। তাছাড়া জীবনের এত রং দেখেছি যে এখন আর কোন কিছুর ভয় কাজ করে না মনে। দুশ্চিন্তাও প্রভাব ফেলতে পারে না খুব একটা।  মনেহয় যে যাই কিছু হোক না কেন, ইনশাআল্লাহ আমি মেনে নিতে পারবো। আর বইতে পারবো না এমন কোন বোঝা তো আল্লাহ আমার উপর চাপাবেন না, একথা তো আল্লাহ বলেই দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ্‌! এই কথাটা আমিও বিশ্বাস করি। আমিও পারি সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করতে কিন্তু এই ব্যাপারটাতে কেন জানিনা মনে খুব ভয় কাজ করে। আসমারা আমি এমন কাউকে জীবনসাথী হিসেবে চাই না যার সাথে আমার আইডোলজি মিলবে না। তুমি এইসব নেগেটিভ চিন্তা বাদ দাও তো। ভাবতে চেষ্টা করো যে ইনশাআল্লাহ এমন কিছুই হবে না। আর যদি হয়? তাহলে সেটাই হবে তোমার জন্য পরীক্ষা। আর আল্লাহ যেহেতু কাউকে সাধ্যের অধিক বোঝা চাপান না, সেহেতু আমাদের প্রস্তুতি থাকা উচিত  যে পরীক্ষাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য ‘স্বাগতম’ তাকে, আলহামদুলিল্লাহ্‌। এখন এই মন খারাপ করা ভাবটা ছাড়ো তো। তোমার এই অবস্থা দেখে তো আমার ক্ষুধা লেগে গিয়েছে। আমি আছি মহা যন্ত্রণায়। এর সাথে ক্ষুধা লাগার কি সম্পর্ক? আমার সবচেয়ে প্রিয় খাবার কি জানো? কি? দুশ্চিন্তা, হতাশা আর নেতিবাচক চিন্তা। আমি যখনই আশেপাশের কারো মধ্যে এসব জিনিস দেখি প্রচণ্ড ক্ষুধা অনুভব করি। আর কচকচ করে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে এসব। হেসে, তোমার মাথায় সবসময় এতো দুষ্টু কথা আসে কিভাবে বুঝি না। কিন্তু আমি কিছুতেই আমার মন থেকে এই ভাবনাটা দূর করতে পারছি না। সঠিক ইসলাম মানতে চাইলে আমাকে আমার বাবা-মা আর পরিবারের বিপক্ষে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। কি মনেহয় জানো? ম্যাজিকাল কিছু ঘটতো আর আমার পরিবারের সবাই সঠিক সুন্নাহর অনুসারী হয়ে যেত। আমি রাতদিন আল্লাহর কাছে এখন এই দোয়াই করছি। জানিনা আমার দুয়া কবুল হবে কিনা। মিলাদ, মাজার এইসব বিদয়াত থেকে বেড়িয়ে আসতে পারবে কিনা আমার পরিবার। ইশ কবে যে মানুষ নিজের ভালো বুঝতে শিখবে আল্লাহই জানেন। অবশ্য সবাই তো বুঝবে না আর এটাই স্বাভাবিক। বাবা সবসময় বলেন যে, একজন নাস্তিক বা অমুসলিম ইসলামের যতটুকু না ক্ষতি করতে পারে, তারচাইতে অনেক অনেক গুণ বেশি ক্ষতি করতে পারে একজন নির্বোধ, অজ্ঞ আস্তিক বা মুসলিম। একজন মুসলিমের অন্ধবিশ্বাসের ফলে অনেকেই ইসলামের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে যেতে পারে। হুম! আর ব্যতিক্রম কোন কাজ করতে গেলে সবচেয়ে বেশি বাঁধা আসে পরিবারের কাছ থেকেই। কেন যেন কাছে মানুষগুলো প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে যায় সামনে। তারা বেঠিক বা ভুল হতে পারেন এই কথাটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না। তুমি তো সবই বোঝো। তোমাকে তাই ধৈর্য্যের সাথে সবকিছু মোকাবিলা করতে হবে।তাছাড়া ইসলামের সঠিক জ্ঞান, পবিত্র আলো-উদারতা-দীক্ষা পরিবারের মাঝে ছড়িয়ে দেবার জন্য সহনশীলতা বাড়াতেই হবে তোমাকে। পরীক্ষা বা জিহাদ হিসেবে দেখ ব্যাপারটাকে দেখবে অনেক শক্তি পাবে আর আল্লাহর সাহায্যেও ইনশাআল্লাহ। তাছাড়া পরিবারের হকও তো আছে তোমার উপর। তুমি যেহেতু সঠিক পথের সন্ধান পেয়েছো, এখন পরিবারকে সেই পথের দিশা দেখানো তোমার দায়িত্ব। আমি পারবো তো আসমারা? ইনশাআল্লাহ! অবশ্যই পারবে। তুমি শুধু আল্লাহর উপর ভরসা রেখে চেষ্টা করে যাও সবকিছু একদিন ঠিক হয়ে যাবে এই আশাটা মনে ধরে রেখে। আর বিশ্বাস রাখো যে যা ঘটবে তার মধ্যেই নিহিত থাকবে তোমার কল্যাণ। ভরসা দিচ্ছো? হেসে, উহু আশা জাগাচ্ছি। আমি সবসময় সর্বাবস্থায় আশার সাথে নিজেকে শক্ত করে বেঁধে রাখার দলের মানুষ। তাছাড়া আমি মনেকরি অনেক সময় আমাদের ভালো কাজের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতেই পারে আপনজনেরা। কিন্তু তাই বলে আমরা তো তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারিনা। আবার তাদেরকে ছেড়েও দিতে পারিনা। কারণ ইসলাম আমাদেরকে এই শিক্ষা দেয় না। ইনশাআল্লাহ! আমিও এখন থেকে এভাবে চিন্তা করবো। সব দুশ্চিন্তা এই মুহুর্তে ঝেড়ে  ফেললাম। আশার সাথে বাঁধলাম মন, যা হবে দেখা যাবে। হেসে, আলহামদুলিল্লাহ্‌। চল ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছে। দুজন উঠে ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওনা করলো।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)