
- আপনার এই কাজ করার দরকার কি? আঙ্কেল তো শুনেছি ১ লাখ টাকা বেতন পায়। আপনার তো রানীর বেশে থাকার কথা!
- সে এক লাখ টাকা পেলেই কি! আমি তার এক টাকার ও মালিক না! বুঝলে?
একটু অবাক হলাম। সাধারণত নৈতিক দৃষ্টি কোনের বিচারে , স্বামীর সম্পদে স্ত্রীর হক অনেক বেশী। এমন কি স্ত্রীর এতোটুকু জানার অধিকার পর্যন্ত আছে যে স্বামী কোথা থেকে কতো উপার্জন করছে, কারন , একজন যদি হারাম পথে উপার্জন করে তাহলে স্ত্রী হয়তো তার পথে বাঁধা দিবে, এবং বুঝাবে হারাম উপার্জন না করতে।
যেহেতু, স্ত্রীর অধিকার স্বামীর সম্পদে নিজের খরচ নির্বাহ করা সেহেতু হারাম খাদ্য বা জিনিষ ভোগ না করার ব্যাপারে তার তদন্ত যুক্তিযুক্ত এবং সঙ্গতিপূর্ণ ও বটে।
যার কোথা বলছিলাম ইনি একজন নারী উদ্যোক্তা। স্বামী খরচ নির্বাহ করেনা বিধায় তিনি নিজেই বাসায় কিছু বিজনেস শুরু করেছিলেন। তারপর যা হওয়ার তাই হলো। খরচ তো দেনই না , উল্টো মাঝে মাঝেই কিছু নগদ টাকা চেয়ে বসেন। যা মহিলার পক্ষে দেওয়া কষ্ট সাধ্য। জানতে চাইলাম , লোকটা কৃপণ কিনা! মানে খরচ কেমন করেন। উনি বললেন
- একবার মার্কেটে গেলে নিজের এবং ২ ছেলের জন্য ২ হাত ভরে বাজার করে নিয়ে আসেন, কিন্তু মহিলাকে নাকি কোনদিন একটা সুতা ও নিজে থেকে কিনে দেননি।
এটা ঠিক! নারী অর্থনৈতিকভাবে আগের চেয়ে অনেক স্বাবলম্বী। সবাই কিছু না কিছু করছে। কিন্তু স্বাবলম্বী হতে যেয়ে কখনো কখনো নিজের অধিকার বঞ্চিত হওয়ার নজির ও খুব কম নয়। এখন ২ ধরনের মানসিকতা দেখা যায় মেয়েদের মধ্যে
১- স্বামী যথেষ্ট অর্থনৈতিক অধিকার না দেওয়ায় স্বামীর সম্পদ গ্রাসের প্রবণতা, এবং বেহুদা শপিং করে শেষ করে ফেলে।
২- নিজে আয় করে, সে কারণে স্বামী নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে উদাসীন থাকে। এবং গা ছাড়া ভাব চলে আসে।
মূলত পরিবারে অনেক কিছুই আমাদের বেঁধে রাখে। এর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অর্থনৈতিক নির্ভরতা। এটাই খুব স্বাভাবিক যে একটা পরিবারে সবাই আয় করেনা। কোন না কোনভাবে কারো না কারো উপর নির্ভরশীল থাকেই। ঠিক তেমনি যেমনি পরিবারে সবাই রান্না ও করেনা। এই নির্ভরশীলতা আত্ম সম্মানের হানি নয়, বরং এক হাতে নিয়ে আরেক হাতে দেওয়ার মতোই।
আর হাদিসে আছে- 'যখন তুমি খাবে, স্ত্রীকেও খাওয়াবে, এবং যখন পোশাক পরবে তখন তাকেও পরাবে।--(সুনানে আবু দাঊদ )
আর এই আধুনিক যুগে পারিবারিক বন্ধগুলো ঢিলে হচ্ছে এভাবেই যে সবাই স্বাবলম্বী হয়ে যে যার রাজা হয়ে আছে। তাই একজনের প্রতি আরেকজনের নির্ভরশীলতার সেই যায়গা ও থাকছে না, থাকছে না নির্ভরশীলতার ফলে সৃষ্ট হওয়া চারিত্রিক নমনীয়তা ।
এমন কি অনেকে নিজের সিঙ্গেল জীবনের অংশকে ভুলে না যেতে মেসে থাকে , আর মাঝে মাঝে শ্বশুরবাড়ি যেয়ে ঘুরে আসে, এই ভেবে যে নতুন জীবনে স্ত্রীকে ঠিক খাপ খাওয়ানো যাচ্ছে না। অথচ, আলাদা বাসস্থানে রাখা কিংবা স্বামীর সাথে স্বামীর বাসগৃহে সসম্মানে থাকাটাও একজন মেয়ের অন্যতম অধিকার, যা বিয়ের সাথে সাথেই পুরন হওয়ার দাবী রাখে।
ইদানিং কাবিন নামক একটা রেওয়াজ বেশ জনপ্রিয়। যদিও বেশীরভাগ ছেলেই এই নিয়মের সুবিধাটুকু লুফে নেয়। আজ করবো কাল করবো করে করে ওয়ালিমা দেরী করে, আর স্ত্রী কে নিজের থেকে দূরে রেখে ভারসাম্যহীন জীবন যাপন করতে বাধ্য করে। অথচ, ইসলাম বলে স্বামী স্ত্রী আলাদা থাকবে না, একসাথেই থাকতে হবে।
এক্ষেত্রে আল্লাহ বলেনঃ لتضيفوا عليهن অর্থাৎ, তোমরা সামর্থ্যানুসারে যেখানে বাস কর, স্ত্রীদের সেখানে বাস করতে দাও। --(সূরা ত্বালাক, আয়াত : ৬)
সর্বোপরি , নিজের জীবনে রক্তের সম্পর্কহীন একজন মানুষকে যথার্থ সম্মান এবং অর্থনৈতিক অধিকার দেওয়াটাই ইসলামের পারিবারিক জীবনের মূল ভিত্তি। নাহয় জাহিলিয়াতের বিলোপ সাধনের পর স্বামীর সম্পদে স্ত্রীর উত্তরাধিকার ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল না, যা হয়েছে। আর সবশেষে হাদিসের সেই বানী তো মনে রাখতেই হয়-
"তোমাদের মধ্যে সেসব লোকই উত্তম, যারা তাদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম।"
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)