বিবিধ

তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ!

তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ!
1407172286_ocharovyvat-i-byt-ocharovannoy-ili-kak-pervoy-pocelovat-parnya   প্রহর শেষে আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ! সাধারণত চোখ দিয়েই যে কোন সর্বনাশের সূচনা হয়। এই জন্যই প্রেম ভালোবাসা থেকে শুরু করে পরকীয়া পর্যন্ত সবকিছুতেই চোখের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। চোখের মায়ামমতার দাম হৃদয়ের হাটে, কবিতার বাজারে বেশ ভালোই। মায়াময় দীঘির মতো চোখের মায়ায় পড়ে অফিসের কলিগের সাথে কখন যে প্রনয় হয়ে যায় তা ও বলা যায় না আগে ভাগেই। আবার, চোখের সামনে রাস্তাঘাটে সারাদিন হুর পরীদের মেলায় থেকে ঘরে যেয়ে অনেকেরই ভালো লাগেনা চিরচেনা চোখ দুটিকে, সেই চোখের মায়াও তখন অনেক স্নান। আবার এক চোখে যে কাঁদা যায় না, তার মধ্যেও লুকিয়ে আছে এক জীবনের সুত্র। এক চোখে যেমন কান্না হয়না, এক জনে তেমনি ঘর ও বাঁধা যায় না। কি নিবিড় সম্পর্ক এই দৃষ্টিপাত বা চোখের সাথে জীবনের। ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় বাসে প্রায়ই একটা অন্ধ মেয়ের সাথে দেখা হয়। ও পাশে বসে থাকা অবস্থায় মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করে অনুভব করার চেষ্টা করি, কেমন লাগে অন্ধত্ব। পরক্ষণেই মনে হয়, এই চোখ দিয়েই তো কতো পাপ করেছি, যেটা এতো বড় নেয়ামত। বলা হয়ে থাকে- যে কোন প্রণয়ের শুরু দৃষ্টিপাতের মাধ্যমে আর শেষ হয় ব্যাভিচারে। কথাটা কিন্তু খুব বেশী সত্য। হাদিসে কুদসিতে এসেছে- দৃষ্টিপাত শয়তানের একটি বিষাক্ত শর। যে ব্যক্তি মনের চাহিদা সত্ত্বেও দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়, আমি তার পরিবর্তে তাকে সুদৃঢ় ঈমান দান করবো, যার মিষ্টতা সে অন্তরে অনুভব করবে। হযরত আলী (রা.) বর্ণিত হাদিসে আছে- প্রথম দৃষ্টি মাফ, দ্বিতীয় দৃষ্টিপাত গোনাহ। কারন প্রথম দৃষ্টিতেই বোঝা যায় সামনে কে বা কারা রয়েছে, কিন্তু দ্বিতীয়বার দেখায় প্রবৃত্তি কিছু উদ্দেশ্য উস্কে দেয়। এখনকার যুগে রাস্তা আর মার্কেটের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কারন মার্কেট থেকে যা কেনা হয় , তা পড়ে শো অফের নিমিত্তেই নারী এখন বাহিরে যায়। অনেকগুলো ম্যাগাজিন ঘেঁটে দেখেছি। ফ্যাশন ড্রেস আর রান্নার রেসিপি ছাড়া তেমন কিছুই চোখে পড়ে না এইসব ম্যাগাজিনগুলোতে। যেন মেয়েদের জীবনে খাওয়া আর ভালো ভালো জামা কাপড় পড়া ছাড়া আর কোন কাজ নেই! অথচ, এভাবেই সজ্জা বহুল আরেক নারীকে দেখে তার স্বামীর ও যে মাথা ঘুরাতে পারে, কিংবা তাকে দেখেই আরেক পুরুষের যে নিজের সঙ্গিনীর প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মাতে পারে, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তাভাবনা ও নেই কারো। ছেলেরা সৃষ্টিগতভাবেই বহুগামি মানসিকতার। তাদের জন্য দৃষ্টি অনেক বড় একটা পরীক্ষাই বটে। যেহেতু মেয়ে হয়েও আমরা সুন্দর মেয়ে দেখলে তাকিয়ে থাকি, সেদিকে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তাদের আকর্ষণ একবারেই সহজাত। কিন্তু এই সহজাত প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সব ধর্মেই একটা নৈতিকতার দেয়াল তুলে দেওয়ার প্রচেষ্টা দেখা যায়। বিশেষত ইসলামের অবস্থান এ ক্ষেত্রে বেশ জোরালো। পর্দা শুধু বাহ্যিকতার নয়, পর্দা আছে চোখের ও , ঠোটের ও , এমনকি কানের ও। মনে করুন , নারী কণ্ঠের রিনরিন শব্দ শুনে আপনি কান পেতে আছেন আর ভাবছেন- দেখছ! বেহায়া মেয়েটা কীভাবে হাসে! অথচ, এই রিনরিন হাসির শব্দ মনোযোগ দিয়ে শুনে, এবং তা নিয়ে পরক্ষনে ভেবে আপনি নিজেই নিজের কানের পর্দাকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছেন। আবার ধরুন- খুব উগ্র, সমাজ বিরুদ্ধ কোন পোশাক পড়ে একটা মেয়ে পথে দাড়িয়ে আছে। আপনি একবার দেখে ভালো করে আবার দেখে নিলেন, আর মনে মনে দেশ ও জাতি এবং সংস্কৃতিকে উদ্ধার করলেন। এতে ও চোখের পর্দার অধিকার ভুলন্থিত, এবং ভুলন্থিত আপনার স্ত্রী বা ভবিষ্যৎ জীবন সঙ্গিনীর অধিকার ও। কে কি পড়লো তা দেখে উপদেশ দেওয়ার চেয়ে আপনার যেটা দায়িত্ব সেটা পালন করুন। তাহলেই দৃষ্টি নিয়ে ছিনিমিনি খেলে সমাজে নারী পুরুষের সহাবস্থানের ভারসাম্য রক্ষার সব চেষ্টাই বিফল হয়ে যাবে। যতবার আপনি অন্য মেয়েদের দিকে তাকাচ্ছেন ততবার আপনার জীবন সঙ্গিনীর অধিকার নষ্ট করছেন, এবং এর জন্য আল্লাহর কাছে কঠোর জবাবদিহিতা ও করতে হবে। সেদিন এক বান্ধুবি বলছিল- তার নাকি কোন ছেলেকেই বিয়ে করতে ইচ্ছা হয়না। কারন সে অনেকবার খেয়াল করেছে একটা ছেলে কোন মেয়ের হাত ঠিকই ধরে আছে , আবার আরেক মেয়ের দিকেও তাকিয়েও আছে, তার প্রশ্ন এটা কেমন ভালোবাসা? চোখের দৃষ্টি যে আসলেই একটা ভয়াবহ ব্যাধি সেটা নাটক সিনেমায় ও স্বীকৃত। নাটকে অনেকবার দেখেছি নায়িকা নায়কের অন্য মেয়ের দিকে কয়বার তাকাল সেটা গুণে ঝগড়া করে। হ্যা! আপনি বলবেন সমাজ খারাপ হয়ে গেছে, নারী জাতি উচ্ছনে গেছে। কিন্তু নারীরা একা একা উচ্ছনে যায় না। উচ্ছনে ডেকে নেয় পাশের সহবস্থানকারীরাই । সুন্দর পরনারী দেখে আপনাদের অবাক দৃষ্টিতে , মুগ্ধ নয়নের প্রভাবে অনেক নারীই আরও বেশী উতসাহিত হয় আরও সুন্দর হয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য, কলিগের প্রতি আপনার বিমুগ্ধ প্রশংসা, সহপাঠীদের মধ্যে সুন্দর মেয়েটাকে সবচেয়ে প্রাধান্য দেওয়া, কিংবা অপরিচিত কাউকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখা ও অনেক মেয়েই উপভোগ করে। হয়তো মুখে ভীষণ বিরক্তির ছাপ। কিন্তু যাই হোক- দেখানোর উদ্দেশ্যেই তো এভাবে উপস্থাপন নিজেকে। তাই , নারীর সমালোচনার চেয়ে নিজের দৃষ্টিকে সংযত রাখু..., চোখের পর্দা করুন, যদি পরিবেশ প্রতিকূল হয় , তাও করুন। অন্তত চেষ্টা করুন, সবসময় দৃষ্টির অনিষ্ট থেকে বাঁচার। কারো দিকে আঙ্গুল তোলার আগে ভালো ভাবে দেখে নিন আপনার আঙ্গুলে কোন ময়লা নেই তো?    

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ