উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যৌতুক আর একটি আধুনিক সভ্যতা

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যৌতুক আর একটি আধুনিক সভ্যতা
যৌতুক রফিক সাহেবের কন্যার বিবাহ । বিবাহ নিয়ে চিন্তা নাই তার। আল্লাহর রহমতে অনেক টাকা পয়সার মালিক তিনি। ২ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন খুব ধুমধাম করে, বাঁকি এখন ছোট মেয়ে। তারই বিয়ে আসছে ডিসেম্বারের কড়া শীতে। কন্যা তার খুবই সুন্দরী। মাশাআল্লাহ। পর্দা করে, ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, আর চরিত্র ও অনেক ভাল। হবু জামাই বাবাজিও মাশাআল্লাহ অনেক পরহেযগার। কড়া শীতের সময়ই বিয়ে ঠিক করাটা রফিক সাহেবের অপছন্দ। কিন্তু কি আর করা, বউ তার বড্ড রসিক। নিজ মেয়ের বিয়ে শীত কালেই দিবে, শীত কালে নাকি “হানিমুন” ভাল জমে। এইসব রোমান্টিক বেপারসেপার আবার রফিক সাহেবকে নাড়া দেয়না। রফিক সাহেব যদিও ধনবান লোক, তারপরও বিয়ের খরচ তাকে খুব ভালো ভাবেই নাড়া দিবে বুঝতে অসুবিধা হলনা তার। ছেলের বাবা অনেক ভালো মানুষ। এলাকায় তার অনেক নামডাক। মসজিদ কমিটির সদস্য। মসজিদ কমিটির সব টাকা পয়সা উনার দায়িত্তে থাকে। টাকা মারার লোক উনিনা, শুধু মাঝে মাঝে একটু চা নাস্তা খান আর কি। আংটি বদলের দিন কড়া ভাষায় নিষেধ করে দিয়েছেন যেন মেয়ের বাবা কোন যৌতুক জাতীয় অপশব্দের ব্যাবহার না করেন। তবে আপনি যদি মেয়েকে খুশি মনে কিছু দেন তা আপনার ব্যাপার। ছেলের বাবার এহেন কথায় রফিক সাহেব দ্বিধায় পড়ে গেলেন। উনি কি কিছু দেয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত করছেন ?? অবশ্য বড় দুই মেয়ের বিয়ের সময় অনেক কিছু দিয়েছেন নিজ থেকে। শ্বশুর বাড়িতে মেয়ের সম্মান রক্ষার একটা ব্যাপার আছে। অন্তত অটবির একখানা ঝকঝকে খাট, ড্রেসিং টেবিল আর আলমারি না হলে মেয়ে জিনিসপত্র রাখবে কোথায়, সবচেয়ে বড় কথা মেয়ের ইজ্জত রাখবে কোথায়। আসলে কিছু আসবাবপত্র দেয়া মেয়েদের পক্ষ থেকে এখন অনেক ক্ষেত্রেই শুধু ইজ্জত রাখার জায়গা হিসেবেই গণ্য,সাজের জিনিস আর কাপড় চোপড় রাখাটা হল নগণ্য একটা উছিলা মাত্র। সেদিন টেলিভিশনে ইসলামিক প্রশ্ন উত্তরের জবাবে এক আলেম বলেছিলেন, “বিয়ের আগে বা পরে প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে, ইনিয়ে বিনিয়ে আকারে ইঙ্গিতে কিছু বলে প্রভাবিত করা ছাড়াই যদি নিতান্ত আদরের বসে পিতা কন্যাকে কিছু দেন আর সেটা যদি কন্যা ভালবেসে গ্রহন করে তবেই তা গ্রহন করা যেতে পারে বা বৈধ বলে গণ্য হতে পারে। অন্যথায় তা যৌতুক বলে পরিগণিত হবে। যৌতুক দেয়া এবং নেয়া ইসলামে অবৈধ, যৌতুকের মাল আর ঘুষের টাকায় কিনা মালের মধ্যে কোন তফাত নেই”। (আলেম এখানে পিতার কথা উল্লেখ করলেন প্রশ্ন কর্তার প্রশ্নের আলোকে। যে বোনের পিতা নেই, তার বেলায় কি হবে ?? পিতৃহীন পরিবার যে কি কষ্ট ভোগ করে তা শুধু পিতৃহীন পরিবার ই বুঝতে সক্ষম। সেই পরিবারের কন্যার বেলায় কি হবে ?? সেই পরিবারের কন্যার বেলায় এহেন আচরন ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ, সামাজিকভাবে এদের চিহ্নিত করে “মানুষখেকো যৌতুকখোর” নাম দিয়ে সমাজে নিষিদ্ধ করতে হবে। ) ব্যাপারটা চিন্তা করে রফিক সাহেব তার বড় মেয়ের জন্য আর তার জামাইয়ের জন্য আফসোস করলেন, আফসোস হলো নিজের জন্যও। বিয়ের পর মেয়েকে শুনিয়ে শুনিয়ে জামাই খুব রোমান্টিকভাবে বলে,জানো, আমার অমুক বন্ধুর শ্বশুর তাকে বিদেশ থেকে আনা ঘড়ি দিয়েছে, তমুক বন্ধুর শ্বশুর তাকে মোটর সাইকেল কিনে দিয়েছে। এসব শুনে শুনে কন্যা তার বাসায় ফোন দিয়ে তো কান্নাকাটি, কি করলা বাবা, তোমার এতো টাকা আর আমাকে জামাইয়ের বাড়িতে এসে এসব শুনতে হয়। জামাই বাবাজি আপাত দৃষ্টিতে সফল। পরের সপ্তাহেই খাট, ড্রেসিং টেবিল, আলমারি বাসায় এসে হাজির। সেকি হাসি জামাইয়ের, এত বড় খাট দেবার কি দরকার ছিল, আমার তো খারাপ লাগতেসে, তোমার আব্বা এগুলা দিলো, লোকে বলবে যৌতুক নিচ্ছি, আসলে তো তোমার আব্বা তোমাকে আদর করে দিছে। রফিক সাহেবের কন্যাও খুশি জামাই বাবাজিও খুশি। কন্যা খুশি ইঙ্গিতপূর্ণ কথা থেকে মুক্তির খুশিতে আর জামাই খুশি নতুন আসবাব না কিনার খুশিতে। খুশিতে খুশিতে একাকার। মানুষের খুশির বহিঃপ্রকাশ হাসি। হাসলে সবাইকে একরকমই লাগে, যে কারনেই হাসুক। রফিক সাহেব এক ভুল ২য়বার করেন নি। ৩য় বার ও করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। মেয়ের প্রতি ভালবাসা তো আছেই, ভালোবাসা আর মানুষিক চাপের ভয়,দুটি বিপরীতমুখী স্রোতের এক প্রান্তে যেন মিল ঘটলো। হ্যাঁ, কিছু দিতেই হবে, ভারি কিছু। ভালো কিছু। যাতে মেয়ের ইজ্জত বাঁচে। মধ্যবিত্ত আর উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারে পরোক্ষ যৌতুকে কন্যার ইজ্জত বাঁচে। আর নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে প্রত্যক্ষ বা প্ররোক্ষ যৌতুকে কন্যার জীবন বাঁচে। এ হলো আমাদের আধুনিক আর সভ্য সভ্যতা। আমরা এই সভ্যতার গর্বিত অধিবাসী। ভাবতেই বুকটা দুঃখে কষ্টে ব্যাথায় ফুলে উঠে। এ আধুনিক যুগে যৌতুক খুব ই কম চোখে পড়ার কথা। যদিও ইন্টারনেট আমাদের ঘরে পৌঁছে গেছে, তারপরও কুসংস্কার আমাদের ঘরের ছোট্ট কোনে ইন্টারনেট আর কম্পিউটারের পাশেই বসবাস করছে। আধুনিকতা আর কুসংস্কারের মিশ্রণে যেন এক অপূর্ব জীবন ব্যাবস্থা। ইসলাম এ কুসংস্কার কে গোড়া থেকে মুলউৎপাটন করে দিয়েছে আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে। বিয়ের সময় মোহরের ব্যাবস্থা করেছে। আর মোহর দিতে হয় পুরুষকে। নারীকে নয়। একজন বাবা তার আদরের সন্তানকে দিয়ে দিচ্ছে এক অজানা পরিবেশে। সব মায়া মমতা বিসর্জন দিয়ে। আর কি দিবে ? আর কি চাওয়া উচিৎ পুরুষদের? পুরুষ নামের কলঙ্ক হয়ে আল্লাহর রোষানলে পড়ার হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করুন ভাইয়েরা। যথা সময়ে মোহর দিয়ে বিয়ে করুন। মোহর নিয়ে আজ আর নাই লিখলাম। সে আরেক মহাকাব্য। অন্য কোন সময় হয়ত এ বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো ইন-শা-আল্লাহ। এ সমাজে ভদ্রতার আড়ালেও এরকম অনেক কাহিনী রয়ে যায়। অনেক বোন মনের কষ্ট নিয়ে হয়ত সারাজীবন সংসার করে। তারপর জীবনের সবটুকু হায়াত শেষ করে হয়ত আল্লাহর কাছে পাড়ি জমায়। বোখারী শরীফের বিবাহ অধ্যায়ের কিছু হাদীস থেকে সহজেই বুঝা যায়, বিয়ের ওলিমার দায়িত্ব ছেলে পক্ষের উপর। বর কনের বাড়িতে যাবে, তবে কোন শর্ত দিয়ে নয়। এমনটি হতে পারবেনা যে, আমাদের ১০০ লোক আসবে, ৩০০ লোক আসবে বলে কনে পক্ষ কে চাপিয়ে দিলেন। এটা কঠিন ভাবে হাদীসে নিষিদ্ধ। আমার লেখা পড়ে হয়তো আপনার মানষপটে আপনারই কোন এক আত্মীয়ের বিয়ের কথা মনে পড়ে যাবে। এমনভাবেই আক্রান্ত আমরা এখন এ রোগে। প্রিও নবী মুহাম্মাদ (সা) এর জন্য আমাদের সবার ভালোবাসা আছে। তা সারা বিশ্বজুড়ে “ইনোসেন্স অব মুসলিম” ছবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখেই বুঝা যায়। সেই ভালোবাসা আমাদের মনে কেনো জাগেনা মুহাম্মাদ (সা) এর কথা অনুসরণ করতে গিয়ে ? যে লোক “ইনোসেন্স অব মুসলিম” বানিয়েছে, সে তো মুসলিম নয়। সে যদি বুঝতো যে সে কাকে অপমান করতে গিয়েছে, তবে সে এ পথে ভুলেও পা বাড়াতোনা। আর আমরা বুঝে শুনে নবীর হাদীস কে, সুন্নাহ কে মানছিনা। আমরা কি ওই ব্যক্তির চেয়ে একটু বেশি অপরাধি নয় ?? মুসলিম হয়ে নবীর সুন্নাহ কে পাশ কাটিয়ে যাওয়া নবীর প্রতি অশ্রদ্ধাই প্রকাশ করে। আর প্রকৃত মুসলিম কোনদিন মুহাম্মাদ (সা) এর প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করতে পারেনা। উপরের কাহিনীতে ছেলের শ্বশুরের যে প্রতিকী চরিত্র আপনারা দেখলেন, তা হলো একজন কুসংস্কারাচ্ছন্ন মুসলিমের যিনি টাকা আমানত হিসেবে রাখলেও মাঝে মাঝে চা খাওয়াটা দোষ মনে করেন না। আর মনে মনে যৌতুক আশা করেন। যেটা ইসলামে নিন্দনীয়। প্রিও ভাইয়েরা, রাসুলুল্লাহ (সা) এর বাণী যদি আমাদের এক বিন্দুও নাড়া দেয়, তবে আমরা মুসলিম, আর যদি নাড়া না দেয়, তবে আমরা মুনাফিকির ভিতর আছি। আল্লাহ্‌ বলেছেন, “নিশ্চয় মুনাফিকের স্থান জাহান্নামের সবচেয়ে নিচু স্তরে” আমাদের মহাপ্রতাপশালী প্রভুর এহেন কঠিন হুশিয়ারির পরও কেউ কেউ লোভের বশে “আদর করে দেয়া সম্পদ” নিতে চাইলেও অন্তত জাহান্নামের কঠিন আর নিচু গভির স্থানে জ্বলতে চাইবেন না।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ