ধর্ম ও গবেষনা

ইচ্ছাকৃত অথবা অনিচ্ছাকৃত কয়েক ওয়াক্তের নামাজ আদায় না করে থাকলে বা নামাজের কথা ভুলে গেলে কি করবেন?

ইচ্ছাকৃত অথবা অনিচ্ছাকৃত কয়েক ওয়াক্তের নামাজ আদায় না করে থাকলে বা নামাজের কথা ভুলে গেলে কি করবেন?
salat আমাদের কখনো কখনো এমন অবস্থা হয় যে আমরা নামাজের কথা ভুলে যাই অথবা নামাযের ওয়াক্ত চলে যায়। অতঃপর আমরা ছুটে যাওয়া নামাজগুলো আর আদায় করিনা। এটা ইসলামের বিপরীত একটা কাজ। আসুন হাদীসে এ ব্যাপারে কি দিক নির্দেশনা দেয়া আছে যেনে নেয়া যাক।  আমাদের অনেকেই ফজর নামাজের সময় ঘুম ভাঙেনা। পরে ঘুম থেকে উঠে আমরা নামাজের ওয়াক্ত নেই বলে তা আর আদায় করিনা। অথচ হাদীসে বলা হয়েছে, আবু কাতাদা (রা) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, লোকেরা রাসুলুল্লাহ (সা) এর কাছে ‘নামাজের কথা ভুলে গিয়ে’ ঘুমিয়ে থাকা সম্পর্কে প্রশ্ন করলো। তিনি বললেনঃ “ঘুমন্ত ব্যক্তির কোন অপরাধ নেই, জেগে থাকা অবস্থায় দোষ হবে। যখন তোমাদের কেউ নামাজের কথা ভুলে যায় অথবা তা না আদায় করে ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে মনে পড়ার সাথে সাথে দায় করে নিবে” – সহীহ মুসলিম, ইবনে মাজাহ, তীরমিজি উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম তীরমিজি (রাহ) বলেন, যদি কোন ব্যক্তি নামাজের কথা ভুলে যায় বা ঘুমে অচেতন থাকে, অতঃপর এমন সময় তার নামাজের কথা মনে হয় অথবা ঘুম ভাঙ্গে, যখন নামাজের ওয়াক্ত চলে গেছে অথবা সূর্য উঠছে কিংবা ডুবছে – এরুপ অবস্থায় সে নামাজ আদায় করবে কিনা সে ব্যাপারে বিদ্বানগণের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম আহমাদ, ইমাম শাফেঈ, ইমাম মালিক , ইমাম ইসহাক বলেছেন, ‘এরুপ ক্ষেত্রে সে নামাজ আদায় করে নিবে, চাই সেটা সূর্যোদয় অথবা ডুবে যাবার সময়ই হোক না কেন’; অপর একদল উলামা বলেছেন( ইমাম আবু হানিফা ও তাঁর অনুসারীরা) যে, সূর্যোদয় ও অস্ত যাবার সময় নামাজ আদায় করবেনা, উদয় বা অস্ত শেষ হলেই নামাজ আদায় করবে। অর্থাৎ ওয়াক্ত শেষ হলেও নামাজ আদায় করতে হবে এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই। মতভেদ রয়েছে সূর্যাস্তের অথবা সূর্যোদয়ের সময় আগের মিস হয়ে যাওয়া ওয়াক্তের নামাজ আদায় করা নিয়ে। আর সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের সময় আগের মিস হয়ে যাওয়া ওয়াক্তের নামাজ আদায়ের ব্যাপারে দলিল হচ্ছে আলি ইবনে আবি তালিব (রা) এর বক্তব্য, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের কথা ভুলে গেছে, মনে হবার সাথে সাথে সে তা আদায় করে নিবে, চাই নামাজের ওয়াক্ত থাক বা না থাক” ; অপর দিকে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সময় আগের মিস হয়ে যাওয়া ওয়াক্তের নামাজ আদায় না করার ব্যাপারে দলিল হলো আবু বাকরা (রা) এর একটি ঘটনা। তাঁর ব্যাপারে বর্ণিত আছে, “একবার তিনি ঘুমের ঘোরে আসরের নামাজের ওয়াক্ত কাটিয়ে দিলেন। এমনকি সূর্য ডোবার সময় তিনি জেগে উঠলেন। অতঃপর সূর্যাস্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি নামাজ আদায় করলেন না” যেহেতু দুইজন সাহাবীর বক্তব্য রয়েছে দুটি দলিলের পক্ষে, সেহেতু যে কোন একটির উপর আমল করলেই চলবে। তবে আলি (রা) এর বক্তব্য অধিক গ্রহণযোগ্য এবং যুক্তি সঙ্গত। কারন, পূর্বের ওয়াক্তের নামাজ আদায়ের জন্য সূর্যাস্তের অপেক্ষা করতে গিয়ে আরো একটি ওয়াক্তের নামাজকে বিলম্বিত করাটা সমিচিন হবে না। আর এ কারনে সাথে সাথে আদায় করে নেয়াটা উত্তম। এ ক্ষেত্রে সূর্যাস্তের সময় নামাজ আদায়ের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবেনা। এটা শুধু স্বাভাবিক ক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য হবে। পূর্বের ওয়াক্তের নামাজের জন্য নয়। সুতরাং বলা যায়, আপনার ফজর নামাজ আদায় হয়ে না থাকলে, ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আপনার প্রথম কাজ হবে ফজরের নামাজ আদায় করা। ঘুম থেকে জেগে আদায় না করে থাকলে যোহরের আগে অবশই আদায় করবেন। আর সেটাও মনে না থাকলে মনে হওয়ার সাথে সাথে আদায় করবেন। এ ক্ষেত্রে কোন ওয়াক্ত প্রযোজ্য হবেনা। নামাজ আদায় করে নেয়াটাই মুখ্য উদ্দেশ্য। নামাজ অবশ্যই আপনাকে আদায় করতে হবে, হোক সেটা আপনি ফজরের সময় জেগে থেকে আলসেমি করে নামাজ না আদায় করে থাকুন অথবা ঘুমের কারনে আদায় না করে থাকুন। আর শুধু ফরজ নয়, ফজরের নামাজ সুন্নাত সহ পুরাটাই আদায় করতে হবে। এভাবে প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজের বেলায়ই তা প্রযোজ্য হবে, যদি নামাজ আদায় না হয়ে থাকে। যদি তাড়া থেকে থাকে, তবে শুধু ফরজগুলো আদায় করে নেয়া যেতে পারে। তবে ফজরের নামাজের বেলায় সুন্নাত টা সব সময়ই আদায় করা উচিত। আর যদি আল্লাহ না করুন কখনো কয়েক ওয়াক্তের নামাজ আদায় না হয়ে থাকে, তবে ওয়াক্তের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আপনাকে সবগুলা ওয়াক্তের নামাজ আদায় করতে হবে। অর্থাৎ, আপনার যদি ‘ফজর-যোহর-আসর-মাগরিব’ মিস হয়ে যায়, তবে এশার নামাজ আদায়ের পূর্বে ধারাবাহিকভাবে সবগুলা ওয়াক্তের নামাজ আদায় করবেন। প্রথমে ফজর,তারপর যোহর, তারপর আসর, তারপর মাগরিব। এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা) 'যোহর-আসর-মাগরিব-এশা' এশার ওয়াক্তে একসাথে পড়েছেন। - তীরমিজি ( ২০ নং অনুচ্ছেদের ১৭৯ নং হাদীস দেখু...। হাদিসটি "হাসান"। প্রকাশনীঃ হোসাইন আল মাদানি প্রকাশনী, ভাষা - আরবী ও বাংলা-তাহকীক-শাইখ নাসিরুদ্দিন আলবানী) আল্লাহ্‌ আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক হবার তাওফিক দিন। আমীন!  

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)