
আমাদের প্রতিদিনকার জীবনে প্রচুর নেগেটিভ ঘটনা ঘটে। ব্যক্তি এবং পারিবারিক জীবনে কিংবা নিজের রিযিকের অনুসন্ধান করতে গিয়ে কিংবা লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতারিত হলে আমরা সবাই দুঃখ এবং কষ্টে আপতিত হয়ে যাই। হতাশা আর বেদনা আমাদের গ্রাস করে নেয়। কারো কষ্ট যেন কেউ বুঝতে চায়না। সবাই নিজ নিজ কর্মে আর প্রয়োজনের চিন্তায় ব্যস্ত। আসলে মানুষের কষ্টগুলো আপেক্ষিক। কেউ কারো কষ্ট বুঝবে এমনটা যেমন আশা করা উচিত নয় তেমনি একজনের কষ্ট আরেকজনের কাছে কষ্ট মনে নাও হতে পারে। একজন বডিবিল্ডার কে যদি ২০ কেজি ওজনের চালের বস্তা মাথায় তুলে দেয়া হয়, সেটা তার কাছে কষ্টকর মনে হবেনা। কিন্তু সেই ২০ কেজি ওজনের চালের বস্তা মাথায় করে বাসায় আসাটা একজন দরিদ্র বৃদ্ধের জন্য বেদনার সবচেয়ে উঁচু স্তর হবে। তাই জীবনে ব্যর্থতা দুঃখ কষ্ট কারোটা কাউকে দিয়ে বিচার করা বা তুলনা দিয়ে বিচার করা সম্ভব নয়। মুলত আমাদের রব আমাদের উপর আমাদের সাধ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেন না। প্রত্যেকের কষ্টই তার নিজের কাছে কষ্টদায়ক। আল্লাহ আমাদের আল কুরাআনুল কারিমে জানিয়ে দিয়েছেন যে, “জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে,আমি তোমাদের মন্দ আর ভালো দ্বারা বিশেষ ভাবে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই নিকট তোমরা পুনরায় ফিরে আসবে” – সুরা আম্বিয়া ৩৫
সুতরাং দুঃখ কষ্ট ভালো মন্দ আল্লাহ্র পক্ষ থেকে পরীক্ষা মাত্র। আর এ ক্ষেত্রে আমাদের জন্য কর্তব্য হলো সবর বা ধৈর্য ধারন করা। কারণ আল্লাহ আমাদের এটাও জানিয়ে দিয়েছেন যে, “নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে” – সুরা ইনশিরাহ ৫
কষ্টের প্রতিষেধক হলো সবর যা আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। এই প্রতিষেধক এতটাই কার্যকর যে সবরকারীর জন্য তা কষ্টকে কল্যাণে পরিণত করে। মুলত আল্লাহ আমাদের কষ্টে ফেলে বিশুদ্ধ করতে চান, তাঁর দিকে ডাকতে চান। আমাদের কল্যাণ চান। বনী ইসরাইলকে যখন আল্লাহ ফিরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন আর তাদের জন্য রিযিকের ব্যবস্থা করেছিলেন মরুভূমির উপর, তখন জীবন চলার গাইডলাইন দেবার জন্য মুসা (আ) কে তাদের কাছে নবী হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তারা আল্লাহ কে ফাঁকি দেয়া শুরু করলো। ওই সময় আল্লাহ পাহাড়কে তাদের মাথার উপর তুলে ধরে বিপদের এবং মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে তাদের থেকে শপথ আদায় করে নিয়েছিলেন তাঁর আনুগত্যের জন্য। যদিও পরে তারা সে শপথ ভঙ্গ করেছিল। আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করেন কষ্ট আর বিপদে ফেলে আর আমাদের ভুল আর অন্যায়ের কথা স্মরণ করার সুযোগ করে দেন, যাতে করে আমরা আল্লাহ্ এর আনুগত্যের শপথ করি আর সবরের চর্চা করতে পারি। আর এভাবেই কষ্ট আর বিপদ একজন মুমিনের জন্য কল্যাণকর হয়ে যায়। আল্লাহ্ কত উদার আর মহান যিনি আমাদের শিখিয়েও দিয়েছেন কিভাবে সবর করতে হয়। আল্লাহ্ বলেছেন, “সবর ও নামাজ সহকারে সাহায্য চাও” – সুরা বাকারা ৪৫
বিপদে শোকে বা রোগগ্রস্ত অবস্থায় আল্লাহ্কে স্মরণ করে তাঁর আনুগত্যের শপথ করা উচিত আমাদের। আর নামাজের মাধ্যমে ধৈর্য সহকারে আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চাওয়া উচিত। এতে করে আল্লাহ্ আমাদের কষ্ট আর বিপদকে কাটিয়ে দিবে আর বিনিময়ে আত্মার এক নির্মল প্রশান্তি আমাদের দান করবেন।
সবরের ব্যাপারে একটা দ্বিধা আমাদের সবার মধ্যেই কাজ করে। তা হলো সবরের পদ্ধতি কি হবে তা নিয়ে। শাব্দিক ভাবে সবর মানে “বাধা দেয়া” বা “বিরত রাখা”। অর্থাৎ বিপদে নিজেকে হতাশ হতে বাধা প্রদান করা এবং বিপদ থেকে উত্তরণের আশা মনে রেখে আল্লাহ্র সাহায্য প্রার্থনা করা। ইমাম ইবনে কাসীর তাঁর তাফসীরে সুরা বাকারার ৪৫ নং আয়াতের তাফসীরে বলেছেন, “রোযা রাখা ও এক প্রকারের সবর”। তিনি আরো বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “রোযা হলো অর্ধেক সবর”। হযরত উমার (রা) বলেন, “সবর দুই প্রকার। ১। বিপদের সময় সবর ২। পাপের কাজ হতে বিরত থাকার ব্যাপারে সবর। দ্বিতীয় প্রকারের সবর প্রথম প্রকারের সবর থেকে উত্তম” – ইবনে কাসীর
সাইদ ইবনে যুবাইর (রাহ) সবরের খুব সুন্দর একটা সংজ্ঞা দিয়েছেন, তিনি বলেন, “প্রত্যেক জিনিস আল্লাহ্র পক্ষ হতে হয়ে থাকে মানুষের এটা স্বীকার করা, পুণ্য চাওয়া এবং বিপদের প্রতিদানের ভাণ্ডার আল্লাহ্র নিকট রয়েছে, এই কথা মনে করার নাম সবর” – ইবনে কাসীর
আর অবশ্যই পুণ্য চাওয়ার মাধ্যম হবে সলাত। আর পাশাপাশি অধিক তাৎপর্য লাভের জন্য রোযাও রাখা উচিত। এর মাধ্যমে নফস দুর্বল হয়ে যায় আর পাপের কাজে বিরত থাকার ব্যাপারে অধিক সবর হাসিল করা যায়। আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে সবর অর্জনের তাওফিক দিন। আমাদের সংশোধন দান করুন। আমীন!
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)