
আসসালামুয়ালাইকুম প্রিয় ভাই ও বোনেরা। আজ আপনাদের সামনে যে বিষয়টা উপস্থাপন করবো তা হলো “ঈর্ষা” “অহঙ্কার” আর “হিংসা” বিষয় নিয়ে। এ তিনটি বিষয় ঈমানের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। ঈর্ষা সম্পর্কে সহীহ বোখারীর “ইলম” অধ্যায়ে এক খানা হাদীস এসেছে। ইবন মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা) বলেছেন, “কেবল মাত্র দুটি ব্যাপারেই ঈর্ষা করা যায়, (১) সেই লোকের উপর, যাকে আল্লাহ্তা’লা সম্পদ দিয়েছেন, এরপর তাকে হক পথে অকাতরে ব্যায় করার ক্ষমতা দেন (২) সে লোকের উপর, যাকে আল্লাহ্তা’লা হেকমত দান করেছেন , এরপর সে তার সাহায্যে ফয়সালা করে ও তা শিক্ষা দেয়” উক্ত হাদীসের কারনে কিনা জানিনা আমাদের দেশে একটা কথা বেশ সহজ প্রচলিত, আর তা হল, “জ্ঞানের ব্যাপারে হিংসা জায়েয” শব্দটা ঈর্ষার যায়গায় হিংসা বানিয়ে ফেলা হয়েছে। স্কুল কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় ছাত্র-ছাত্রী এই জায়েজ মনে করে কত সহপাঠীর যে ক্ষতি করে দিয়েছে বা দিচ্ছে তা বোধ করি কারো অজানা নয়। আবার ব্যাপারটা এভাবেও দেখতে পারেন যে, বহু ছাত্র ছাত্রি ইদানিং ইসলামের ধার ও ধারেনা, ফলে তারা স্বাভাবিক ভাবেই হিংসার বশবর্তী হয়ে অনেক কাজ করে বসে। সাহাবীরা জ্ঞানের ব্যাপারে একে অপরকে সহযোগিতা করতেন। হিংসা করে যদি তারা কেউ কাউকে ভুল তথ্য দিতেন বা ভুল কিছু শিখাতেন তবে আজ আমরা কোন জ্ঞান পেতামনা ইসলামের ব্যাপারে। মোদ্দা কথা,ঈর্ষার নাম দিয়ে পড়ালেখার ব্যাপারে কিংবা অন্য যে কোন ব্যাপারে সহযোগিতার বদলে ক্ষতি করে বসাটা কবিরাহ গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। কারন হাদীসের মধ্যে ঈর্ষা সম্পর্কে যা এসেছে তা ক্ষতিকারক ঈর্ষা নয় বরং এই ঈর্ষার মাধ্যমে এটাই বুঝানো হয়েছে যাতে মানুষ জ্ঞান অর্জনে অপরকে দেখে উৎসাহিত হয় আর সম্পদশালীরা ভাল কাজে সম্পদ ব্যায় করতে উৎসাহিত হয়। মুসলিম একে অপরের ভাই, তাদের পরস্পরের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে একখানা সুন্দর হাদীস এসেছে, ইবনে উমার (রা) এর বর্ণনা মতে, রাসুল (সা) বলেছেন, “এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই, সে না তার উপর জুলুম করতে পারে, না তাকে শত্রুর হাতে তুলে দিতে পারে, যে লোক তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পুরনে উদ্যোগী হয়, আল্লাহ্ তার প্রয়োজন পুরন করে দেন। যে লোক কোনো মুসলমানের কোন কষ্ট ও বিপদ দূর করে দেয়, আল্লাহ্ (এর বিনিময়ে) কিয়ামতের দিন তার কষ্ট ও বিপদের অংশ বিশেষে দূর করে দিবেন। যে লোক কোন মুসলমানের দোষ গোপন রাখে,কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দোষ গোপন রাখবেন”। - সহীহ বোখারী ও মুসলিম ( রিয়াদুস সালেহিন) আসুন হিংসার ব্যাপারে আলোকপাত করা যাক। আমাদের জীবনের প্রতিটা পর্যায়ে আজ বোধ করি হিংসার ছড়াছড়ি। সমাজ জীবনে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মানুষ হিংসার বশবর্তী হয়ে একে অপরের ক্ষতি করে যাচ্ছে। হিংসা এমন এক আগুন যা হিংসুক কে তো জালিয়ে মারেই আর যাকে হিংসা করা হয়, তার জীবন আর সম্মান থাকে মহা ঝুঁকির মধ্যে। হিংসা মানুষের পারস্পরিক সম্মানবোধ আর শ্রদ্ধাবোধ কে নষ্ট করে। সম্পর্ক নষ্ট করে আর সমাজকে অস্থির করে তোলে। এ ব্যাপারে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা) আমাদের অনেক সুন্দর দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। আনাস বিন মালেক (রা) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা) বলেছেন, “তোমরা পরস্পর বিদ্বেষ করো না, ষড়যন্ত্র করোনা ও সম্পর্ক ছিন্ন করোনা। তোমরা পরস্পর আল্লাহ্র বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে যাও” – বোখারী ও মুসলিম আমরা সবাই এক আল্লাহ্র সৃষ্টি, আর আমাদের আদি পিতা আদম (আ), আমরা ইব্রাহীম (আ) এর আনিত দ্বীন এর অনুসারী আর মুহাম্মাদ (সা) আমাদের পথ প্রদর্শক। আমাদের পরস্পরের সম্পর্ক আমরা পরস্পর ভাই। অথচ আমরা তা ভুলে বসে আছি। এবার আসুন অহংকার এর ব্যাপারে একটু আলোকপাত করা যাক। আমাদের এই কলুষিত সমাজে আজকাল এমন অনেক কিছুই “সহজ” হয়ে গেছে। সবকিছুকেই আমরা সহজভাবে নিচ্ছি। হোক সেটা পাপ আর জঘন্য কোন ব্যাপার। শয়তান এদিক থেকে সফল। সে অন্তত আমাদের মধ্যে পাপকে সহজভাবে দেখার অভ্যাস তৈরি করতে পেরেছে। সমাজে এখন “অহংকার” আর “অহংকারী” শব্দ দুটোও বেশ সহজ হয়ে গেছে। আসুন জেনে নেয়া যাক অহংকার এর উৎপত্তি কোথায়। আল্লাহ্ যখন আদম (আ) কে সৃষ্টি করে ফেরেশতাদের বললেন তাঁকে সেজদা করতে, তখন সবাই সেজদা করলো একমাত্র “আযাযিল” (জাতে জিন,তবে অধিক এবাদতের কারনে ফেরেশতাদের মর্যাদা পেয়েছিলো) আদম (আ) কে সেজদা করলো না। কারন সে ভেবেছিল, “আমি উত্তম”; আদম মাটির তৈরি আর আমাকে বানানো হয়েছে আগুন থেকে। এটাই হলো অহংকারের সর্বপ্রথম নমুনা। তাহলে অহংকার হলো সেই বিধ্বংসী পাপ, যা মানুষ কিংবা জিনদের ভিতর একপ্রকার অনুভুতি সৃষ্টি করে, যাতে করে তার নিজেকে “উত্তম” বা অন্য অনেকের চেয়ে ভালো বলে মনে হতে থাকে, আর অতপর সে অন্যদের তাচ্ছিলের সাথে বিবেচনা করে, ছোট মনে করে আর কখনোবা সামনা সামনি অহংকার প্রকাশ করে বসে। এ ব্যাপারে ইমাম বোখারী তাঁর “আল আদাবুল মুফরাদ” গ্রন্থে অহংকার অধ্যায়ে একটি সহীহ হাদীস উল্লেখ করেছেন। ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেন, তিনি নবী (সা) কে বলতে শুনেছেন, “যে নিজেকে বড় মনে করে ও তার চালচলনে সদর্পভাব প্রকাশ করে, সে এমন অবস্থায় আল্লাহতা’লার দরবারে উপনীত হবে যে, তিনি তার প্রতি ক্রুদ্ধ থাকবেন” নিজেকে বড় মনে করা, অহংকারের সাথে চলাফেরা করা বা এমনভাবে হাঁটা আর অঙ্গভঙ্গি করা, যাতে অপরের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রকাশ করা হয়, তবে সেটাই অহংকার। আল্লাহ অহংকারী লোক কে এতটাই অপছন্দ আর ঘৃণা করেন যে, হাদীসে বর্ণিত রয়েছে, ‘যার মনে বিন্দু পরিমাণ অহংকার রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবেনা’। - সহীহ মুসলিম সুতরাং আমরা একথা সহজেই বুঝতে পারি যে, একজন মানুস জাহান্নামী হবার জন্য শুধু “অহঙ্কার-হিংসা” নামক দুটি অপরাধই যথেষ্ট। আল্লাহ আমাদের এ ধরণের ঘৃণ্য অন্যায় থেকে দূরে রাখু...। আমীন!!!
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)