
ইশ! আমি যদি আরেকটু সুন্দর হতাম! এমন আকাঙ্ক্ষা হয়না এমন মানুষ বিশেষত মেয়ে মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। সুন্দর হওয়ার এই আকাঙ্ক্ষা থেকেই আমরা স্নো পাউডার সহ রাজ্যের সব প্রসাধন কিনি। আপুরা হয়তো তাহলে বলবেন- তাহলে কি আমরা সাজবো না? আমি নিজেও সাঁজতে ভালোবাসি, কিন্তু সেটা নিজের ভালোলাগার জন্যই। অন্য মানুষ আমাকে দেখে অনেক সুন্দরী মনে করবে এটা ভেবে সাঁজাটাই আমার কাছে একধরণের মানসিক দাসত্ব মনে হয়। আসলে, মানুষের বাহ্যিক রূপটা একটা মোড়কের মতোই।
প্যাকেট যতো সুন্দরই হোক না কেন, আমরা কিন্তু কোন পণ্যের প্যাকেটই খাইনা। বেশী হলে ভবিষ্যতে মাছ মাংস রাখার মতো কোন তুচ্ছ কাগজে লাগতেও পারে, এই ভেবে হয়তো রাখি। কিন্তু বেশীরভাগ প্যাকেট এরই এই ভাগ্য ও হয়না। আমরা কিন্তু দাম দেই সেই জিনিষটারই যেটা প্যাকেটের ভেতরে থাকে। মানুষের অন্তরাত্মা হোল প্যাকেটের ভেতরের আসল বস্তুটির মতোই। দূর থেকে দেখে বোঝা যায় না ওতে কি আছে, কিন্তু কাজের সময় পরিচয় মেলে। মনে করুন, কোন বস্তুর ডেট ওভার হয়ে গেছে। কিন্তু প্যাকেট দেখে কিন্তু আপনার বোঝার কোন উপায় নেই। ধরুন, বিক্রেতা ডেট অভারের সিলটা ও তুলে ফেলেছেন। আপনি মনের আনন্দে উপরের চাকচিক্য দেখেই মেয়াদহীন জিনিষ বাসায় নিয়ে আসলেন। মানুষের বাহ্যিকতা ও তাই। বাহ্যিকতা দেখে আপনি যখনই মানুষকে যাচাই করবেন, আপনি ঠকে যাবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। অনেকে কথায় কথায় একটা কুরআনের আয়াতকে নিজেদের ইচ্ছা মতো ব্যবহার করে থাকেন। আল্লাহ সুন্দর তাই তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। এই সুন্দর মানে কি চামড়ার সুন্দর? যদি তাই হতো তাহলে তো আল্লাহর হাবীব বিদায় হজের দিন এ কথা বলতেন না- হে মানব জাতি! মনে রেখ তোমাদের আল্লাহ এক, তার কোনো শরিক নেই, তোমাদের আদি পিতা এক, কোনো অনারবের উপর কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তেমনি কোনো সাদার উপর কোনো কালোর শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কেবলমাত্র আল্লাহভীতিই শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি। কিছুদিন আগের কথা। এক কালো মেয়ের বাসায় প্রস্তাব এসেছে একটা ছেলের জন্য। মেয়ের মা বললেন- আমার মেয়ে কিন্তু কালো! ছেলে পক্ষ বলল- সমস্যা নেই! তাও একবার দেখি। এরপর যথারীতি আয়োজন, পোলাও কোর্মা রন্ধন এবং সেই চিরচারিত নিয়মে মেয়ে পক্ষকে ফতুর করে দেওয়া। মেয়েটি ভালো বললে ভুল হয়, আসলে অসাধারণ। কিন্তু ঐ যে ৯৯% ভাগ ঠিক হলেও মেয়ে তো কালো! এরপর দেখাদেখির পর্ব শেষ হলে ছেলে পক্ষ জানালো- আরেকটু গায়ের রং পরিষ্কার হলেই আপনাদের মেয়েকে নিতাম! আরে মূর্খের দল! গায়ের রং পরিষ্কার করার ক্ষমতা কি মেয়ের বাবা মায়ের আছে? সেই ছেলেটি নিজে বিয়ে করার পর যেই কন্যা সন্তানটি হবে তার গায়ের রং ফর্সা/ তার কথায় আরেকটু পরিষ্কার করতে পারবে? এভাবে আমরা নিত্য আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব গায়ের রঙে মেপে নিচ্ছি, যা স্পষ্টত আল্লাহর বিধান তার রাসুল (সা.) এর শেষ হজের ভাষণের চরম লঙ্ঘন। একমাত্র তাকওয়া আর তাকওয়াই মানুষের মর্যাদা, ভালো মন্দের মাপকাঠি। এটা কোন ঠাট্টা নয়। যিনি আমাদের বানিয়েছেন তার সুস্পষ্ট বিধান। আল্লাহর কাছে সুন্দরের মানে কি? আল্লাহর কাছে সুন্দর সেই যে আল্লাহকে ভয় পায়, হাজির নাজির মানে। যাই হোক, মজার একটা গল্প দিয়ে শেষ করছি। এক রুপবান যুবক বিয়ে করবে। দেখতে দেখতে ৫০এর উপরে মেয়ে দেখে ফেললো, কিন্তু নিজের গায়ের রঙ্গের পাওয়াই যাচ্ছে না। শেষে খুব সুন্দরীকে বিয়ে করলো। কিন্তু সব ভালো মেয়েটির একটাই দোষ। সে মাঝে মাঝে একটু সিগারেট খায় আর ড্রিঙ্ক করে ঘরে ফেরে। মাকাল ফলের কোন স্বাদ নেই, বরং বিস্বাদ এবং দুর্গন্ধময়। কিন্তু দেখতে হিঙুল বরণ। সুন্দর খুঁজতে যেয়ে রবি ঠাকুরের গানের মতো অবস্থা যেন আমাদের না হয়- চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে অন্তরে আজ দেখব, যখন আলোক নাহি রে’
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)